আমি কাউকে ইউনিভার্সিটিতে ট্রিট দিইনি, কখনো কারও খাবারের বিল দিইনি, কাউকে খাওয়াইনি।এজন্য কেউ কেউ আমাকে সরাসরি খোঁচাও দিয়েছে।
অথচ, তখন স্টেশন পর্যন্ত যেতে গাড়ি নেয়া লাগতো না বলে আব্বু প্রতিদিন ১০টাকা দিতো। সেই সকাল ৭টা/৮টার ট্রেনে ভার্সিটি গিয়ে বিকাল ৪টার ট্রেনে বাসায় ফিরতাম। আর এই টাকা দিয়ে আমি নাশতা করতাম।
একবছর টিউশন করে, সে টাকা জমিয়ে পরের বছর আবার ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে আবার অন্য একটা ডিপার্টমেন্টে ভর্তি হই। মাইগ্রেশন ছাড়া পুরো টাকাটা নিজের টিউশনের টাকা ছিলো।
সেকেন্ড ইয়ারে যখন চাকরিতে জয়েন করি, বেতন ছিলো ৩ হাজার। সেই টাকা থেকেও বাসায় ১/দেড় হাজার টাকা দিতাম। বাকি টাকায় গাড়ি ভাড়া+আমার নাশতার খরচ চলতো।
এসব কিছু কাউকে এত ভেঙ্গে বলতে পারতাম না। তাই তাদের খোঁচা নীরবে সহ্য করতাম।
আমি এখনো পারি না। কাউকে ট্রিট দেয়ার সামর্থ্য
আমার নেই। কিন্তু এ কথা কাউকে বুঝিয়ে বলা সম্ভব না। কারণ, তারা ভাবে, তাদের যেমন বাবার টাকা আছে, আমিও বাবার টাকায় চলি।
আমার বাবা প্রায়ই বাসায় ফিরতেন নিজে পায়ে হেঁটে। বেচে যাওয়া গাড়ি ভাড়া থেকে আমাদের হাতখরচ দিতেন। নিজে তার অধস্তনদের সাথে হাত লাগিয়ে কাজ করতেন। তাতে একজন মজুরের সমান মজুরীটা পেতেন। আর তাতে সে দিনের বাজার করতেন।
বাবার টাকা দিয়ে যতদিন চলেছি, তখনও আমার সামর্থ্য ছিলো না। এখনো নেই। বরং মনে হয়, কাউকে ট্রিট দেয়ার চেয়ে একটা মানুষকে সাহায্য করলে সেই টাকাটার যথার্থ ব্যবহার হবে।
যার টাকার পূর্ণ ব্যবহার করতে হয়, সে ই জানে টাকার আসল দাম কোথায়। কেউ যদি আমাকে কৃপণও বলে, আমার তাতে কিছু যায় আসে না।