সীতাকুণ্ড, চট্টগ্রাম: সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জাতীয় তীর্থস্থান চন্দ্রনাথ ধামের পবিত্রতা বিনষ্টের চেষ্টা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক প্রচারণা, দেবোত্তর সম্পত্তি আত্মসাতের চেষ্টায় নানামুখী ষড়যন্ত্র এবং বাড়বকুন্ড তীর্থধামের অধিষ্ঠাত্রী দেবী শ্রী শ্রী জ্বালামুখী কালী বিগ্রহের নামীয় দেবোত্তর সম্পত্তি জাল জালিয়াতির মাধ্যমে দখলের চেষ্টা ও সেবায়েতদের উপর হামলা এবং ভয়ভীতি প্রদর্শনের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন হয়েছে।
শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের এস রহমান হলে এ সংবাদ সম্মেলনের শ্রী শ্রী চন্দ্রনাথ ধাম রক্ষা পরিষদ ও বাড়বকুন্ড তীর্থধাম উন্নয়ন কমিটি এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। এতে চট্টগ্রামের বিভিন্ন সনাতনী সংগঠনের নেতা অংশ নেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়েন চন্দ্রনাথ ধাম রক্ষা পরিষদ এবং বাড়বকুন্ড তীর্থধাম উন্নয়ন কমিটির আহ্বায়ক ও পুন্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী। সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় পার্টির যুগ্ম মহাসচিব ও চট্টগ্রাম-চার আসনের সাবেক সাংসদ দিদারুল আলম দিদারের বিরুদ্দে বাড়বকুন্ড তীর্থধামের সেবায়েতদের উপর হামলা ও দেবোত্তর সম্পত্তি দখলের চেষ্টার অভিযোগ তোলা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে দশ দফা দাবি তুলে ধরা হয়। দাবিগুলো হল দেবোত্তর সম্পত্তির সেবায়েতদের জানমালের নিরাপত্তা প্রদানে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা গ্রহণ; দেবোত্তর সম্পত্তি সংরক্ষণ ও বেদখলমুক্ত করার জন্য খসড়া আইনের বিষয়ে হিন্দু সংগঠনের প্রস্তাবিত সংশোধনীসমূহ যুক্ত করে দ্রুত আইন পাশ ও কার্যকর; সীতাকুন্ড স্রাইন কমিটির পক্ষ থেকে ডাকাত শহীদ গংদের বরাবরে বেআইনীভাবে প্রদত্ত দেবোত্তর সম্পত্তির বন্দোবস্তী বাতিল ও উচ্ছেদ; সীতাকুন্ড স্রাইন কমিটির পক্ষ থেকে স্থানীয় হিন্দু জনসাধারণ ও সনাতনী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে সমন্বয়পূর্বক দেবোত্তর সম্পত্তির এলাকা সুচিহ্নিত করে দ্রুত নিরাপত্তা বেষ্টনী নির্মাণ, অবাধ যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ ও বেদখলীয় সম্পত্তি পুনরুদ্ধারের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ; স্রাইন কমিটির স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকল্পে যাবতীয় হিসাব নিকাশ ও কর্মকান্ড সনাতনী জনসম্মুখে প্রকাশ; সীতাকুন্ডের শ্রী শ্রী চন্দ্রনাথ ধাম ও বাড়বকুন্ড তীর্থ ধামকে জাতীয় তীর্থস্থান ঘোষণা করে সংরক্ষণের জন্য সরকারিভাবে যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ। উভয় ধামের সম্পত্তিগুলো রক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। যেসব সম্পত্তি বেদখল হয়েছে, সেগুলো পুনরুদ্ধার ও যেসব জায়গার ভুয়া কাগজপত্র বাতিলের ব্যবস্থা করা; সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শ্রী শ্রী চন্দ্রনাথ ধাম নিয়ে বিভিন্ন উসকানিমূলক সাম্প্রদায়িক প্রচারণা বন্ধ ও এসব কর্মকান্ডের সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা’ এছাড়া যারা বিভিন্নভাবে সনাতন ধর্ম নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কটুক্তি করে বা প্রচারণা চালায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া; পুরো দেশে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের বলি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার ও যারা কারাগারে আছে, তাদের নিশর্ত মুক্তি দিতে হবে; অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পীঠস্থান বাড়বকুন্ড তীর্থধামে স্থায়ী নিরাপত্তা চৌকি প্রতিষ্ঠা; বিভিন্ন মঠ ও মিশনের প্রধানদের সমন্বয়ে চন্দ্রনাথধামের আধ্যাত্মিক মান সুনিশ্চিতকল্পে একটি যৌথ সেল গঠন করতে হবে ও মোহন্ত নিয়োগ সুনিশ্চিত এবং সীতাকুন্ডস্থ লবনাক্ষ ও কুমারীকুন্ডের দেবোত্তর সম্পত্তি খাস বাতিল করত তা পুনরুদ্ধার নিশ্চিত করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে দশ দফা দাবি আদায়ের জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন এবং সেই আন্দোলন পুরো দেশে ছাড়িয়ে পৃথিবীজুড়ে করার ঘোষণা দেন সংগঠনের নেতারা। যারা রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় দেবোত্তর সম্পত্তি দখলের চেষ্টা করছে, তাদেরকে সামাজিকভাবে বয়কটের দাবি তোলা হয় সংবাদ সম্মেলনে।
সাংবাদ সম্মেলনে বাড়বকুন্ড শ্রী শ্রী জ্বালামুখী কালী বিগ্রহের সেবায়েত চিরকুমারী ব্রহ্মচারীনি স্মৃতিলতা ভারতী, সনাতন বিদ্যার্থী সংসদের প্রতিষ্ঠাতা কুশল বরণ চক্রবর্তী, চট্টগ্রাম প্রতিদিনের উপদেষ্টা সম্পাদক আয়ান শর্মা, বাংলাদেশ গীতা শিক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শুভাশীষ শর্মা, সাংবাদিক বিপ্লব পার্থ, সনাতনী জাগরণী সংঘের সভাপতি কাঞ্চন আচার্য্য, জাগো হিন্দু পরিষদ চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি রুবেল কান্তি দে, হিন্দু মহাজোট চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি যীশু রক্ষিত, মিঠুন বিশ্বাস, আদিপুরুষ শ্যাম দাস ব্রহ্মচারী, সেবায়েত কালী নারায়ণ ভারতী, সেবায়েত মিঠুন কৃষ্ণ ভারতী উপস্থিত ছিলেন।
















