রাঙ্গামাটি: পার্বত্য বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা বলেছেন, ‘সব সংস্কৃতির মাঝে যদি আমরা ঐক্যের বন্ধন সৃষ্টি করতে পারি, তাহলে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলা সম্ভব হবে। একইভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অবদান রাখা যাবে। পাহাড়িদের সংস্কৃতির সাথে অন্যান্য সম্প্রদায়ের মানুষের সংস্কৃতি ও চেতনার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। কিন্তু, এদেশের মাটি, আকাশ, বাতাস সবকিছুই আমাদের সকলের। এখানে কোন পার্থক্য নেই। তাই বলছি, আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি ও আচার-ব্যবহার আলাদা হলেও দেশ ও দেশের মাটি এক।’
বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) রাঙ্গমাটি বীর মুক্তিযোদ্ধা চিং হ্লা মং চৌধুরী মারী স্টেডিয়ামে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড আয়োজিত চট্টগ্রাম পাহাড়ী তিন জেলার ১৬ সম্প্রদায়ের পরিবেশনায় ফুড এন্ড কালচারাল ফেস্টিভ্যালে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, ‘আমরা যদি আমাদের কৃষ্টি ও সংস্কৃতি প্রকাশ না করি, মানুষকে যদি জানতে না পারি তাহলে, এগুলোর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে যাবে। আমাদের খাবারের সাথে অনেকে পরিচিত নয়। তাদের জন্য এ ধরনের ফেস্টিভ্যাল আরো বেশি বেশি করে আয়োজন করা দরকার। তাহলে আমাদের অতীত সর্ম্পকে পুরো দেশের মানুষের কাছে ধারনা জন্ম নেবে এবং তারা আমাদের সংস্কৃতি ও খাবারের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করবে।’
অনুষ্ঠানের প্রথমে প্রধান অতিথিসহ সকলে মিলে বেলুন উড়িয়ে ফুড এন্ড কালচারাল ফেস্টিভ্যাল ২০২৪ এর উদ্বোধন করেন। পরে, মেলার বিভিন্ন স্টলে গিয়ে নানা রকম খাবার পরখ করে দেখেন।
ফেস্টিভ্যালে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান রাষ্ট্রদূত (অব.) সুপ্রদীপ চাকমার সভাপতিত্বে অতিথি সাংসদ দীপংকর তালুকদার ও বিশেষ অতিথি পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মশিউর রহমান, রিজিয়ন কমান্ডার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল সোহেল আহমেদ, জেলা ম্যাজিস্ট্র্যাট মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান, পুলিশ সুপার মীর আবু তৌকির বক্তব্য দেন।
দীপংকর তালুকদার বলেন, ‘আমাদের দেশে পাহাড়িদের খাবার নিয়ে অন্যান্যদের অনেক কৌতুহল ছিল। তারা জানতে চায়, আমরা খাবারের তালিকায় কি কি খেয়ে থাকি। এটা আগে ছিল কিন্তু এখন সেটা নেই। মানুষ এখন অনেক এগিয়ে গেছে, তারা এখন এসব বিষয়ে কৌতুহল দেখায় না। এ ধরনের ফেস্টিভ্যালে মানুষের মেলামেশায় সবার মাঝে ভাবের আদান প্রদান বেড়ে গেছে। আজকে রাঙ্গামাটিসহ অন্যান্য অঞ্চলের পাহাড়িরা দেশের নাম পৃথিবীতে উজ্জ্বলে ভূমিকা রাখছে। তারা অলম্পিকে গিয়ে স্বর্ণ পদক অর্জন করেছে। এটা শুধু রাঙ্গামাটি বা চট্টগ্রামের জন্য নয়, এটা সারা দেশের জন্য।’
সুপ্রদীপ চাকমা বলেন, ‘এ ফেস্টিভ্যালের মাধ্যমে আমরা ১৬টি সম্প্রদায়ের খাবার, কাপড়, আচার-ব্যবহার ও তাদের বাদ্যযন্ত্রের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে পেরেছি। এগুলো সংরক্ষণ করে না রাখলে আগামীতে খুজে পাওয়া যাবে না। আমি আশা করি, এগুলো যদি সংরক্ষণ করে রাখা যায়, তাহলে আগামীতে ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যতে এগুলো স্থান পেতে পারে।’
ফেস্টিভ্যালে নানা রকমের, বিভিন্ন রঙের পিঠাসহ রসনাবিলাসসমৃদ্ধ ঐতিহ্যবাহী বাহারি খাবারসামগ্রী দেখতে-খেতে আসছেন বিভিন্ন শ্রেনীর পেশার মানুষ। এরমধ্যে শিশু-কিশোরদের মাঝে বাড়তি আনন্দের আবহ তৈরি হয়েছে। মেলায় ১৬টি সম্প্রদায়ের দোকান বসেছে। এ মেলা ১-৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিকাল তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত মোট তিন দিন চলবে।