চট্টগ্রামের প্রাণবন্ত সাংস্কৃতিক অঙ্গনে ধীরে ধীরে নিজের অবস্থান তৈরি করছেন তরুণ সংস্কৃতি কর্মী ও অভিনেতা মোহাম্মদ ফোরকান রাসেল। জীবনের লক্ষ্য তাঁর একটাই—নিজেকে গড়তে হবে নতুনভাবে, আর সেই গড়ার যাত্রায় শিল্প ও সংস্কৃতি হবে প্রধান সহযাত্রী।
১৯৯১ সালের ১৮ অক্টোবর চট্টগ্রামে জন্ম ফোরকানের। সেখানেই তার বেড়ে ওঠা, পড়াশোনা ও শিকড়ের বন্ধন। তিনি বিবিএ, এমবিএ ও এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেছেন। পেশাগতভাবে ব্যবসায় ও কোর্টে প্র্যাকটিসের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও মন পড়ে থাকে মঞ্চ, ক্যামেরা আর সংস্কৃতির জগতে।
ফোরকানের জীবনের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা তার মা রোকেয়া বেগম। বাবা মৃত মো. আবছার ছিলেন পরিশ্রমী মানুষ; তার সততা ও দৃঢ়তা থেকেই জীবনযুদ্ধের পাঠ নিয়েছেন রাসেল। ফোরকানের স্বপ্ন সবচেয়ে বড়—নিজেকে সমাজ ও সংস্কৃতির সেবায় নিবেদিত করা।
অভিনয়ের প্রতি ঝোঁক তাঁর শৈশব থেকেই। নাটকের প্রযোজক হওয়ার আগ্রহ থেকেই ধীরে ধীরে ঢুকে পড়েন অভিনয়ের জগতে। তাঁর বিশ্বাস—অভিনয় শুধু বিনোদন নয়, এটি সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার।
তিনি বলেন, “অভিনয় হোক বাস্তবধর্মী, শিক্ষণীয় ও নোংরামিমুক্ত—যাতে দর্শক কিছু শিখতে পারে এবং তা বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করতে পারে।”
চট্টগ্রামের শিল্প-সংস্কৃতি নিয়ে কাজ করতে গিয়ে তিনি উপলব্ধি করেছেন, এখানে বড় মিডিয়া হাউস ও পেশাদার পরিকাঠামোর অভাবই সবচেয়ে বড় বাধা। “ভালো কাজ করতে হলে অনেকেই ঢাকামুখী হন, কিন্তু আমরা চট্টগ্রাম থেকেই নতুন সম্ভাবনা তৈরি করতে চাই”—বললেন তিনি দৃঢ় কণ্ঠে।
ফোরকান বর্তমানে শিল্পকলা একাডেমি চট্টগ্রাম ফ্যান গ্রুপে সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন। সংগঠনের মাধ্যমে তিনি সংস্কৃতি বিকাশ, নাট্যচর্চা ও শিল্পকলার প্রচারে কাজ করছেন নিয়মিত। পাশাপাশি রক্তদান, সবুজায়ন ও সমাজসেবামূলক কর্মসূচি নিয়েও ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।
প্রিয় সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব অপূর্ব, প্রিয় অভিনয়শিল্পী নায়ক রাজ রাজ্জাক। প্রিয় খাবার পরটা, প্রিয় ফুল সব ফুলই, আর প্রিয় মুখ—মায়ের হাসি। অবসর সময় কাটে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায়, কখনো বা জীবনের নতুন পরিকল্পনা সাজাতে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে ফোরকান বলেন, “সংস্কৃতির বিকাশে অভিনয়ই হবে আমার পথপ্রদর্শক। আমি চাই অভিনয় এমন হোক, যা মানুষকে হাসাবে, ভাবাবে, বদলাবে।”
চট্টগ্রামের মঞ্চ ও পর্দায় এখন অনেক তরুণের মতো তিনিও নিজের জায়গা খুঁজে নিচ্ছেন। তবে রাসেলের বিশ্বাস, সফলতা সংখ্যায় নয়, প্রভাবেই মাপা যায়— যদি একজন মানুষও তাঁর কাজ দেখে অনুপ্রাণিত হয়, তাতেই সার্থকতা।