কক্সবাজারে আলোচিত ভূমি অধিগ্রহণ দুর্নীতির মামলার আসামি ও বিতর্কিত সরকারি কর্মকর্তা আমিন আল পারভেজকে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) পরিচালক পদে পদায়ন করা হয়েছে। গত রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আবুল হায়াত মো. রফিক সই করা প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়। তবে এ বিষয়ে দুদক কমিশনার (তদন্ত) বলছেন, এমন অভিযোগ সত্য হলে জনমনে দুদক সম্পর্কে নেতিবাচক বার্তা যাবে, সেজন্য কমিশনে কথা বলা হবে।
দুদক সূত্র জানায়, কক্সবাজারে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ভবন নির্মাণ ও ভূমি অধিগ্রহণ প্রকল্পে ২২ কোটি ২১ লাখ ২৮ হাজার ৮৩৬ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে আমিন আল পারভেজের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। তিনি তখন কক্সবাজার জেলা প্রশাসনে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। বর্তমানে তিনি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উপসচিব পদে রয়েছেন।
২০২০ সালে এ-সংক্রান্ত মামলা দায়ের করেন দুদকের সাবেক উপসহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দিন। পরে একই বছর আমিন আল পারভেজকে ৩০ নম্বর আসামি করে চার্জশিট দেওয়ার সুপারিশ করেন তদন্ত কর্মকর্তা শরীফ উদ্দিন। দীর্ঘ পাঁচ বছরেও আলোর মুখ দেখেনি অভিযোগপত্রটি, বরং বিতর্কিত ৫৪(২) ধারার আওতায় তদন্তকারী কর্মকর্তা শরীফ উদ্দিনকে চাকরিচ্যুত করা হয়। দুর্নীতি দমন কমিশনের ২৫২ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, আমিন আল পারভেজ প্রতারণা ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে নিজে এবং অন্যদের অবৈধভাবে লাভবান করেছেন। তিনি জালিয়াতির আশ্রয়ে ‘মেসার্স ইলিয়াছ ব্রাদার্স’ আপত্তি-সংক্রান্ত তদন্ত কমিটিতে সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
এ ছাড়া ভূমি অধিগ্রহণ আইন সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকার পরও ‘চন্দ্রিমা হাউজিংয়ের’ জমিকে অধিগ্রহণের অংশ দেখিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। ফিল্ডবুক ও দালিলিক রেকর্ড অনুযায়ী নোট ফাইল ও আদেশ ছাড়া চেক দেওয়ার বৈধতা দিয়েছেন। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, তিনি ১৪ কোটি ৫৯ লাখ ৮২ হাজার ৭৩৭ টাকার নথিতে অসম্পূর্ণ রেকর্ড থাকা সত্ত্বেও মিথ্যা তথ্য দিয়ে চেক ইস্যু করেছেন।
বিতর্কিত এই কর্মকর্তাকে দুদকে পদায়নের বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ থাকতে পারে। তবে এমন একজন কর্মকর্তাকে দুদকে পরিচালক পদে নিয়োগ দেওয়া অযৌক্তিক ও অগ্রহণযোগ্য।’ এ বিষয়ে দুদক কমিশনার (তদন্ত) মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী বলেন, ‘যদি এমন অভিযোগ সত্য হয়, তাহলে জনমনে দুদক সম্পর্কে নেতিবাচক বার্তা যাবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাঁকে তাঁর মাতৃ সংস্থায় ফেরত পাঠানো হবে। এ বিষয়ে আমি কমিশনে কথা বলব।’ এদিকে আত্মপক্ষ সমর্থনে অভিযুক্ত আমিন আল পারভেজের কোনো বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
সি-বার্তা/এটি