চট্টগ্রাম: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, `শিগগিরই আমরা বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের পুরো উপকূলীয় অঞ্চলকে জলদস্যু ও ডাকাত মুক্ত ঘোষণা করব। এ জন্য আমাদের র্যাব, কোস্টগার্ড, বিজিবি, আনসার, পুলিশ সকলে একযোগে কাজ করব। আমরা দেশকে জঙ্গি, ডাকাত, জলদস্যু, সন্ত্রাসী মুক্ত করবই।’
বৃহস্পতিবার (৩০ মে) দুপুরে চট্টগ্রাম সিটির পতেঙ্গাস্থ র্যাব-৭’-এর সদর দপ্তরে জলদস্যুদের আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে অস্ত্র ও গোলাবারুদ জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করেন চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার উপকূলীয় এলাকার ১২ বাহিনীর ৫০ জলদস্যু। এর মধ্যে একজন নারীও রয়েছেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘দস্যুদের যারা এ পেশা ত্যাগ করবেন না, তারা কী দুঃসংবাদ লিখে নিয়ে যাবেন, সেটা আল্লাহ জানেন। কাউকে ক্ষমা করা হবে না। সন্ত্রাস নির্মূল করতে গিয়ে র্যাবের ৩৩ জন সদস্য জীবন দিয়েছেন। হাজার হাজার র্যাব সদস্য আহত হয়েছেন। অনেকের অঙ্গহানিও হয়েছে। তাই, আমরা যে কোন দামে অপরাধীদের দমন করব। তারা যেন অপরাধ করার চিন্তাও না করে, সে কাজ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী করছে। জলদস্যুতা আপনাদের জীবনে কখনো শান্তি ফিরিয়ে আনবে না।’
তিনি আরো বলেন, ‘সুন্দরবনে জলদস্যুদের ভাল অবস্থা দেখে আজ তারা উদ্বুদ্ধ। সাংবাদিকদের সহযোগিতায় এ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তাদের ধন্যবাদ জানাই। উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষদের সিকিউরিটির জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করে যাচ্ছে। ওইসব এলাকায় জলদস্যুরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। আজ এখানে একজন নারী জলদস্যুও আমাদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন।’
মন্ত্রী বলেন, ‘স্থানীয় প্রভাবশালী লোকেরাও তাদের বাধ্য করেন এসব কাজে জড়াতে। জনগণের কাছে র্যাব একটি আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতীক। সুন্দরবনে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবন রক্ষায় ২০১২ সালে র্যাবকে টাস্ক ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। র্যাবের দুঃসাহসিক অভিযানে সুন্দরবন জলদস্যু মুক্ত হয়। দস্যুরা যাতে আর সে কাজে ফিরতে না পারে, তাদের আর্থিক অনুদান দেয়া হচ্ছে। আজ তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছে। কেউ ব্যবসায় করছে বা অন্য কাজ করছে। পাবনায় ৬০০ ও সিরাজগঞ্জে ৩০০’-এর বেশি চরমপন্থি গ্রুপের নেতাকর্মী আত্মসমর্পণ করেছে। তাদেরও সরকার সহযোগিতা করেছে। তবে, যাদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের ও খুনের মামলা আছে, তাদের কোনভাবে সহযোগিতা করা হবে না। অন্য মামলাগুলো থেকে তাদের অব্যাহতি দেয়ার জন্য কাজ করা হবে।’
অনুষ্ঠানে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘আত্মসমর্পণের পর আমরা দস্যুদের দিকে খেয়াল রাখছি। যদি তারা পুনরায় পূর্বের কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়, তাহলে তাদের ছাড় দেয়া হবে না। তাদের সব সহযোগিতা বন্ধ করে দেয়া হবে। আমাদের কথার বরখেলাপ করলে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। কেউ যদি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে চায়, আমরা তাদের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আছি। আজকে যারা আত্মসমর্পণ করছেন, সকলকে আমি স্বাভাবিক জীবনে স্বাগত জানাই। এর পূর্বে, সুন্দরবন দস্যু মুক্ত হওয়ায় পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করছি। সুন্দরবন থেকে আত্মসমর্পণ করা দস্যুদের সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ধরনের পেশার ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছে।’
র্যাব-৭ চট্টগ্রামের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মাহবুব আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম-১১ আসনের সাংসদ এম আব্দুল লতিফ, পুলিশের মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, র্যাবের মহাপরিচালক এম খুরশীদ হোসেন, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম ও চট্টগ্রাম রেঞ্জ পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) নুরে আলম মিনা। এছাড়া, আত্মসমর্পণকারী জলদস্যুদের মধ্যে বক্তব্য দেন মাহমুদ করিম ও জসীম উদ্দীন।
র্যাব-৭ জানায়, সংস্থাটির চট্টগ্রাম ইউনিটের উদ্যোগে ২০১৮ ও ২০২০ সালে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের উপকূলীয় অঞ্চলের ৭৭ জন জলদস্যু আত্মসমর্পণ করেছিলেন। এটি অন্যান্য জলদস্যুদের মাঝে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। এক পর্যায়ে চট্টগ্রামে বাঁশখালী ও কক্সবাজারের চকরিয়া, পেকুয়া, মহেশখালী ও কুতুবদিয়া অঞ্চলের জলদস্যুরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আশার আকাঙ্খা প্রকাশ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম র্যাব তাদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়।’