সিনিয়র প্রতিবেদক:
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী থানাধীন ‘চরপাথরঘাটা পুরাতন ব্রিজঘাট ব্যবসায়ি কল্যাণ সমিতি’র তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে সদস্যরা দেড় কোটি টাকার অনিয়ম ও লুটপাটের অভিযোগ তুলেছেন। এ ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এ লিখিত অভিযোগ করেছেন সমিতির সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যরা।
এমনকি সমিতির আয় ব্যয়ের হিসাব চাইতে গেলে সদস্যদের গালমন্দ ও মিথ্যা অপবাদে সদস্য বাতিল করার অভিযোগও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। ১৬ নভেম্বর চট্টগ্রাম দুর্নীতি দমন কমিশন অফিসে এ ধরনের একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়। দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-১ এর উপ-পরিচালক মোহাম্মদ লুৎফুল কবির চন্দন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ‘চরপাথরঘাটা পুরাতন ব্রিজঘাট ব্যবসায়ি কল্যাণ সমিতি’র নিয়ম ও গঠনতন্ত্র মোতাবেক প্রতি বছর সমিতির সদস্যদের বার্ষিক আয় ব্যয় হিসাব দেয়া বাধ্যতামূলক থাকলেও সমিতির বর্তমান নেতৃবৃন্দ সমিতির সদস্যদের আয় ব্যয়ের কোন হিসাব না দিয়ে সভাপতি মোহাম্মদ সাহাব উদ্দীন, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহ আলম ও ক্যাশিয়ার আব্দুল আলী প্রকাশ নয়ন মিলে দেড় কোটি টাকার হিসাবে গড়মিল শুরু করেছেন।
অভিযোগ উঠেছে, গঠনতন্ত্র মতে ২ বছর পরপর নির্বাচন দেওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু তা বাস্তবায়ন নেই। ২০০৮ সাল হতে দীর্ঘ ১৩ বছর যাবত সমিতির কোন আয় ব্যয়ের হিসাব দেওয়া নাই। ডাকলে বৈঠকেও বসেন না। এছাড়াও সমিতির সদস্যদের কাছ থেকে দৈনিক (জনপ্রতি) চাঁদা তোলা হয় ১০ টাকা। এক সদস্য হতে মাসিক চাঁদা আদায় ৩০০ টাকা। বছরে ৩৬০০। সব মিলিয়ে ১২৩ সদস্য হতে বছরে আদায় হয়েছে ৪ লক্ষ ৪২ হাজার ৮’শত টাকা প্রায়। এভাবে গত ১৩ বছরে সমিতির সদস্যরা জমা দিয়েছেন ৫৭ লক্ষ ৫৬ হাজার টাকা।
এছাড়াও সমিতি কতৃক পরিচালিত জেনারেটর ও বিদ্যুৎ বিল বাবদ প্রতিমাসে আয় ৩৬ হাজার ৬’শত টাকা। বছরে ৪ লক্ষ ৩৯ হাজার ২০০ টাকা। গত ১৩ বছরে সমিতির আয় ৫৭ লক্ষ ৯ হাজার ৬’শত টাকা। সবকিছু মিলে দেড় কোটি টাকার কোন হিসাব নাই। এমনকি প্রতিবছর সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় অফিস থেকে পাওয়া অর্থেরও কোন হিসাব নেই। এতবছর যেসব টাকা আদায় করা হয়েছে তা যথাযথ ভাবে সমিতির ব্যাংক হিসাবে জমা হয়েছে কিনা অভিযুক্তরা কোন সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারেনি।
এছাড়াও তিনজনে নিজেদের আর্থিক সুবিধায় নতুন সদস্য অন্তর্ভূক্তিকরণ। একেকজনে ২/৩ টি দোকান দখল এবং আনন্দ ভ্রমণ, মিলাদ মাহফিল, বিয়ে, উৎসবসহ আর্থিক সহায়তা দেওয়ার নামে ভূয়া হিসাব তৈরি করে রেখেছেন। যাতে সমিতির সদস্যদের সহজে ধোঁকা দেওয়া যায়।
সদস্যরা প্রতিবেদককে তথ্য দেন, প্রথমে ইছানগর অগ্রণী ব্যাংক শাখায় সমিতির হিসাব খোলা হলেও পরে মইজ্জ্যারটেক ইউসিবি ব্যাংক ও চরপাথরঘাটার আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকে নতুন হিসাব খোলা হয়। যা সদস্যরা জানতেন না। তাদের বিরুদ্ধে সমিতির বেশিরভাগ সদস্য অভিযোগ তুলেন। পরে রেজুলেশন করে অভিযুক্তদের বহিষ্কার করলেও তারা প্রভাব কাটিয়ে কাগজপত্র ছিঁড়ে ফেলেন বলে জানানো হয়।
সদস্যদের আরো অভিযোগ, সমিতির গঠনতন্ত্রের ০৪ ধারার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য ব্যাহত করেছে এরা তিনজন। পাশাপাশি ০৬ ধারায় লঙ্ঘন করে দৈনিক চাঁদা আদায়সহ ০৮ ধারায় সদস্যদের অধিকার খর্ব করেছেন। ২৪ ধারায় আয়ের উৎস, ২৫ ধারায় খরচের খাত, ২৬ ধারায় হিসাব নিরীক্ষা (অডিট) পদ্ধতি, ২৭ ধারায় নির্বাচন পদ্ধতি ভঙ্গ করে সমিতির সমস্ত অর্থ অনিয়মে আত্মসাৎ হয়েছে বলে দাবি তুলেছেন।
চট্টগ্রাম জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা (উপপরিচালক) মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম বলেন, দুদকে অভিযোগ দিয়েছে কিনা জানি না। তবে আমি জানি সমবায় অফিসে একটা লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি তদন্ত করছেন উপজেলা অফিসার।’
চট্টগ্রাম-১ এর উপ-পরিচালক মোহাম্মদ লুৎফুল কবির চন্দন বলেন, অভিযোগটি খতিয়ে দেখা হবে। ওদিকে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সভাপতি মোহাম্মদ সাহাব উদ্দীন ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, এসব অভিযোগ মিথ্যা। আমরা হিসাব দিয়েছি। নতুন এডহক কমিটিও করে দিয়েছে সমাজসেবা অফিস।’
প্রঙ্গসত, সমিতিটি স্থাপতি হয় ২০০৬ সালের পহেলা মে। পুরোদমে সমিতির কার্যক্রম শুরু হয় ২০০৮ সালে। বর্তমানে সমিতির সদস্য সংখ্যা ১১৩ জন।
















