এসেছে বরষা, এসেছে নবীনা বরষা,
গগন ভরিয়া এসেছে ভুবনভরসা ॥
দুলিছে পবনে সনসন বনবীথিকা,
গীতিময় তরুলতিকা।
আবেগের ঋতু বর্ষা। মেঘের দামামা বাজাতে বাজাতে বর্ষা আসে। পরনে তার মেঘের পাগড়ি। ঋতুর রাগ-রাগিণীর মধ্যে বসন্তের পর বর্ষা। বসন্তের জন্য আছে বসন্তবাহার আর বর্ষার জন্য মেঘ, মল্লার। দেশ এবং আরও বিস্তর প্রকৃতির প্রান্তর। রবীন্দ্র সাহিত্যজুড়ে বর্ষা আছে এক চির নতুন অবয়বে।
রবীন্দ্রসংগীতে এই বর্ষা ঋতুটা ধরা দিয়েছে এক স্নিগ্ধ শ্যামল সুন্দর রূপে। একমাত্র কালিদাসের ‘মেঘদূত’ ছাড়া বর্ষার কাব্যগাথা কোনো সাহিত্যে এমন রূপে বাধা পড়েনি। মেঘদূতে যেমন বর্ষার সমস্ত অন্তর্বেদনা নিত্যকালের ভাষায় লেখা হয়েছে তেমনি রবীন্দ্র সাহিত্যে, সংগীতে, বর্ষা এসেছে এক অনির্বচনীয় কবিত্বগাথা, মানবের হৃদয়ের অপরূপ ভাষায়।
গীতবিতানের বর্ষার গানগুলো প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের একটা নিবিড় সম্পর্ক রচনা করে দেয়।রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সবচেয়ে প্রিয় ঋতু হলো বর্ষা।
গতকাল চট্টগ্রামের স্বনামধন্য সংগীত প্রতিষ্ঠান ‘আনন্দধ্বনির’-তিনদিনব্যাপী আয়োজনে “বর্ষামঙ্গল” অনুষ্ঠানের পর্দা নামে। তিনদিব্যাপী আয়োজনের প্রতিটি অনুষ্ঠানমালা দর্শকদের যেমন মুগ্ধ করেছে তেমনি প্রাণের সঞ্চার সৃষ্টি করেছে সকলের হৃদয়ে।
এই প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা, সুরের সাধক খ্যাতিমান সংগীতজ্ঞ, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম কন্ঠযোদ্ধা প্রয়াত ওস্তাদ মিহির নন্দী। আনন্দধ্বনির সকল শিল্পীরা এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য জানিয়ে।
১ম দিন ২৪ শে জুলাই অনুষ্ঠানমালায় ছিল-
১. আবৃত্তি( নীল নবঘনে আষাঢ় গগনে)- বাচিকশিল্পী অঞ্চল চৌধুরী
২. ওগো আমার শ্রাবন মেঘের খেয়া – সংগীতশিল্পী গোপা দাশগুপ্তা
৩. আজি শ্রাবন ঘন গহন মোহে – সংগীতশিল্পী প্রদীপ কুমার দাশ
৪. এসো হে এসো সজল ঘন বাদল বরিষনে – সংগীতশিল্পী কাবেরী দাশগুপ্তা।
৫. নৃত্য -নীল অন্জনঘন পুন্জ ছায়ায় (পরিবেশনায় ‘ওড়িশি এন্ড টেগোর ডান্স মুভমেন্ট সেন্টার,চট্টগ্রামের’ নৃত্যশিল্পীবৃন্দ- বৈশাখী বড়ুয়া,অর্পিতা পাল,অবন্তি বড়ুয়া, শ্রাবণী ধর,সাবিহা তাসনীম জেসি, ঋত্বিকা দেব।
নৃত্য পরিচালনায়-শিল্পীদের সমবেত প্রচেষ্টা। সার্বিক তত্বাবধানে ছিলেন-ওড়িশি নৃত্যশিল্পী প্রমা অবন্তী।
প্রযোজনা-ওড়িশি এন্ড টেগোর ডান্স মুভমেন্ট সেন্টার।)
৬. এসো শ্যামল সুন্দর – সংগীতশিল্পী বনানী দত্ত।
৭. সঘন গহন রাত্রি ঝরিছে শ্রাবনধারা – সংগীতশিল্পী অনিরুদ্ধ সেনগুপ্ত।
২য় দিন ২৫শে জুলাই যেসব পরিবেশনা-
১. আবৃত্তি( এমন দিনে তারে বলা যায়) – বাচিকশিল্পী অঞ্চল চৌধুরী।
২. বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল – সংগীতশিল্পী রুম্পা সেন।
৩. কদম্বেরী কানন ঘেরি – সংগীতশিল্পী বর্ষা দে।
৪. ওগো সাঁওতালী ছেলে – সংগীতশিল্পী অনুরীনা চৌধুরী তুলি।
৫. মনে হলো যেন পেরিয়ে এলেম – সংগীতশিল্পী তুলি দাশগুপ্তা।
৬. ঝরো ঝরো বরিষে বারিধারা – সংগীতশিল্পী কান্তা দে।
৭.নৃত্য- আজি ঝরো ঝরো মুখর বাদর দিনে (পরিবেশনায় ওড়িশি এন্ড টেগোর ডান্স মুভমেন্ট সেন্টার, চট্টগ্রামের’নৃত্যশিল্পীবৃন্দ- মহুয়া মুৎসুদ্দী, দিবা চৌধুরী, ঐশী দাশ,গুঞ্জন ধর, আর্নিতা দেবী,সপ্তর্ষী চৌধুরী,অপরূপা বড়ুয়া। নৃত্য পরিচালনায়-শিল্পীদের সমবেত প্রচেষ্টা সার্বিক তত্বাবধানে ছিলেন-ওড়িশি নৃত্যশিল্পী প্রমা অবন্তী।
প্রযোজনা-ওড়িশি এন্ড টেগোর ডান্স মুভমেন্ট সেন্টার।) ৮.বাদল ধারা হলো সারা – সংগীতশিল্পী অপর্না সেন,
৯.আমার দিন ফুরালো- সংগীতশিল্পী শ্যামলি পাল। সমাপনী দিনের অনুষ্ঠানমালায় ছিল-
১. আবৃত্তি (দিনের আলো নিভে এলো) – বাচিকশিল্পী অঞ্চল চৌধুরী,
২. আমারে যদি জাগালে আজি নাথ- বাচিকশিল্পী শ্রাবনী দেববর্মণ,
৩. মন মোর মেঘের সঙ্গী – সংহীতশিল্পী পাপিয়া দে,
৪. মম মন উপবনে – সংগীতশিল্পী তন্বী দত্ত,
৫. নৃত্য – তিমির অবগুন্ঠনে বদন তব ঢাকি-(পরিবেশনায় ‘ওড়িশি এন্ড টেগোর ডান্স মুভমেন্ট সেন্টার’-এর নৃত্যশিল্পীবৃন্দ- ময়ূখ সরকার, মৈত্রী চক্রবর্তী তূর্ণি, দিয়া দাশ গুপ্তা, অর্জিতা সেন চৌধুরী, দীপা দাশ, রাইমা মল্লিক, তাহিয়া তানভীন দিহান নৃত্য পরিচালনায়-শিল্পীদের সমবেত প্রচেষ্টা।
সার্বিক তত্বাবধানে ছিলেন-ওড়িশি নৃত্যশিল্পী প্রমা অবন্তী।
প্রযোজনা-ওড়িশি এন্ড টেগোর ডান্স মুভমেন্ট সেন্টার।)
৬. শ্যামল ছায়া নাই বা গেলে – সংগীতশিল্পী অনামিকা মল্লিক
৭. আমার নিশীথ রাতের বাদল ধারা – সংগীতশিল্পী রুপশ্রী হোড় মল্লিক
৮. শাওন গগনে ঘোর ঘনঘটা – সংগীতশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন সাথী।(ভারত), অনুষ্ঠানমালার পোস্টার অলংকরণ এবং নৃত্যের দৃশ্য সম্পাদনা করেন অভ্র বড়ুয়া।
প্রতিষ্ঠানের সংগীতশিল্পী,”বর্ষামঙ্গল” আয়োজনের অন্যতম আয়োজক তন্বী দত্ত বলেন-‘দর্শকরা পাশে থাকলে আগামীতে আরো নানা আয়োজন নিয়ে উপস্থিত হবার চেষ্টা করব আমরা।
বাংলাদেশে শুদ্ধ সংগীত চর্চার প্রসারেরর ক্ষেত্রে ওস্তাদ মিহির কুমার নন্দীর যে আবদান তা আমরা বাচিয়ে রাখার চেষ্টা করবো। সেটা আমাদের একান্ত দায়িত্ব এবং কর্তব্য। তিনি আরও বলেন মাস্টারমশাই আমাদের মাঝে চিরকাল তাঁর কর্মের মধ্যে দিয়ে চির সমুজ্জ্বল হয়ে থাকবেন।’
তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন নাট্যব্যক্তিত্ব অধ্যাপক ড.কুন্তল বড়ুয়ার প্রতি,অনুষ্ঠান প্রযোজনায় তাঁদের পাশে থাকায়। তিনদিনব্যাপী আয়োজনে সকল দর্শক পাশে থাকায় ‘আনন্দধ্বনী’ পরিবার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন দর্শকদের প্রতি।
















