চট্টগ্রাম: বিপিএলের চলতি আসরে প্রথম বার মাঠে নেমেছিলেন ইংলিশ অলরাউন্ডার মঈন আলী। তাতেই গড়েছেন অনন্য কীর্তি। ব্যাট হাতে দারুণ ফিফটির ইনিংসের পর বল হাতে আসরের প্রথম হ্যাটট্রিক তুলে নিয়েছেন তিনি। কুমিল্লার ভিক্টোরিয়ান্সের বোলারদের তোপে ঘরের মাঠে প্রথম ম্যাচ ৭৩ রানের বড় ব্যবধানে হেরেছে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স।
জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) কুমিল্লার দেয়া ২৪০ রান তাড়া করতে নেমে ১৬ দশমিক তিন ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে ১৬৬ রানে গুঁড়িয়ে গেছে চট্টগ্রামের ইনিংস। মঈন ছাড়াও এ দিন বল হাতে দ্যুতি ছড়িয়েছেন লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন। দুইজনই নিয়েছেন সমান চারটি করে উইকেট। বাকি দুই উইকেট নিয়েছেন মুস্তাফিজুর রহমান।
চট্টগ্রামের ঘরের মাঠ। অথচ ব্যাটে-বলে উৎসব করেছে কুমিল্লা। টস হেরে ব্যাট করতে নেমে বিপিএলে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডে ভাগ বসানোর পর বল হাতে মঈন-রিশাদদের দাপট। তাতে দারুণ জয়ে আট ম্যাচে ১২ পয়েন্ট নিয়ে প্লে অফের পথে আরো এক ধাপ এগিয়ে গেলে ভিক্টোরিয়ান্সরা।
এ দিন, আগে ব্যাট করতে নেমে উইল জ্যাকসের বিধ্বংসী সেঞ্চুরিতে নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে তিন উইকেট হারিয়ে ২৩৯ রান সংগ্রহ করে কুমিল্লা। যা বিপিএলের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহের রেকর্ড। অবশ্য ২০১৯ সালে এ একই স্কোর করেছিল রংপুর রাইডার্সও। তাতে যৌথভাবে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়ল কুমিল্লা।
এ দিন ব্যাটিংয়ে নেমে উড়ন্ত সূচনা পায় কুমিল্লা। দলীয় ৮৬ রানে ভাঙে উদ্বোধনী জুটি। ৩১ বলে নয়টি চার ও তিন ছক্কায় ৬০ রান করে আউট হন কুমিল্লার অধিনায়ক। অপর দিকে উইকেটে থেকে আরেক ওপেনার উইল জ্যাকস আগ্রাসন চালিয়ে যান। তাওহীদ হৃদয় (এক বলে শুন্য রান) ও ব্রুক গেস্ট (১১ বলে দশ রান) জ্যাকসকে সঙ্গ দিতে পারেননি। তবে, কাজের কাজটি করেছেন আরেক ইংলিশ তারকা মঈন। তিনি ২৪ বলে ৫৩ রান করেছেন জ্যাকসের সাথে উইকেটে থেকে। জ্যাকস ইনিংসের শেষ ওভারে এসে নিজের সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন। মাত্র ৫০ বলে চারটি চার দশটি ছক্কায় এ মাইলফলক স্পর্শ করেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ৫৩ বলে ১০৮ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি।
চলতি বিপিএলে এটি দ্বিতীয় ব্যক্তিগত সেঞ্চুরির ইনিংস। পূর্বেটিও এসেছিল কুমিল্লার ক্রিকেটার থেকে। এর পূর্বে দুর্দান্ত ঢাকার বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলেন তাওহিদ হৃদয়।
এ দিন, বেশ খরুচে ছিলেন চট্টগ্রামের বোলাররা। দুই উইকেট তুলে নিতে ৪৯ রান খরচ করেন শহিদুল ইসলাম। সর্বোচ্চ ৬৯ রান খরচ দেন উইকেটশূন্য আল-আমিন হোসেন। নিয়ন্ত্রিত বোলিং ছিল কেবল নিহাদুজ্জামানের। যদিও তিনি উইকেটের দেখা পাননি। চার ওভার বল করে এক মেডেন দিয়ে ২৭ রান খরচ করেন তিনি।
ঘরের মাঠে বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরু থেকে আগ্রাসী ছিল চট্টগ্রামের ব্যাটাররা। মাত্র সাত দশমিক এক ওভারের মধ্যে দলকে ৮০ রান এনে দেন দুই ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম ও জশ ব্রাউন। ২৪ বলে পাঁচ চার ও দুই ছক্কায় ৪১ রান করে মুস্তাফিজুর রহমানের শিকার হন তানজিদ। এরপর ক্রিজে স্থায়ী হতে পারেননি ব্রাউনও। পরের ওভারে আক্রমণে আসা রিশাদ হোসেনকে তুলে মারতে গিয়ে হৃদয়ের হাতে ক্যাচ তুলে দেন তিনি। ২৩ বলে তিন চার ও দুই ছক্কায় ৩৬ রানে থামে তার ইনিংস। ১১তম ওভারে ফের আক্রমণে এসে চট্টগ্রামের ইনিংসের ভিতই নড়বড়ে করে দেন রিশাদ। তার লেগ স্পিনে কুপোকাত হয়ে তিন বলের মধ্যে সাজঘরের পথ ধরেন টম ব্রুস (১১) ও শাহাদাত হোসেন (১২)।
চার-ছক্কার ফুলঝুরি ছড়িয়ে দলকে লড়াইয়ে রাখার চেষ্টা করেন সৈকত আলী। তবে, তাকে বেশিক্ষণ ক্রিজে আধিপত্য করতে দেননি দক্ষিণ আফ্রিকার ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ খেলে বাংলাদেশে পা রাখা মঈন। পাঁচ ছক্কা ও এক চারে ৩৬ রান করে মঈনের বলে সৈকত ক্যাচ তুলে দেন জ্যাকসের হাতে। অধিনায়ক শুভাগত হোম ১৩ বলে ১৯ রান করে দলীয় ১৬৫ রানে শিকার হন রিশাদের। এরপর আর বেশিদূর যেতে পারেনি চট্টগ্রাম। ১৭তম ওভারে আক্রমণে এসে টানা তিন বলে শহিদুল ইসলাম, আল-আমিন হোসেন ও বিলাল খানকে সাজঘরে ফিরিয়ে আসরের প্রথম হ্যাটট্রিক তুলে নেন মঈন। ফিফটি আর হ্যাটট্রিকে বিপিএলের দশম আসরে নিজের শুরুটা স্মরণীয় করে রাখেন ইংলিশ অলরাউন্ডার।
















