চট্টগ্রাম: অবৈধ দখলে থাকা ফুটপাত উদ্ধারে অভিযানের ঘোষণা দিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) সিটির থিয়েটার ইনস্টিটিউট চট্টগ্রামে (টিআইসি) চসিকের নির্বাচিত ষষ্ঠ পরিষদের ৩৬তম সাধারণ সভায় সিটির ফুটপাথ দখল নিয়ে ক্ষোভমিশ্রিত আলোচনা করেছেন মেয়র, প্যানেল মেয়র, কাউন্সিলর, কর্মকর্তাবৃন্দ ও বিভিন্ন সেবা সংস্থার প্রতিনিধিরা।
সভায় সভাপতির বক্তব্যে মেয়র বলেন, ‘সিটির ফুটপাত দখল জনগণের জন্য অসহনীয় হয়ে গেছে। মানুষ স্বস্তিতে হাটতে পারবে না, মুক্ত বাতাসে নিশ্বাস নিতে পারবে না, তা হতে পারে না। আমরা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার সাথে সভা করেছি। দখল হওয়া ফুটপাত উদ্ধারে ব্যাপক অভিযান চালানোর পাশাপাশি পে-পার্কিং চালুসহ বহুমুখী পদক্ষেপ নেয়া হবে।’
চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘নির্বাচনের কারণে আমাদের অভিযান কার্যক্রম কিছুটা কম ছিল। আগামী সপ্তাহ থেকে পুরোদমে অভিযান কার্যক্রম পরিচালিত হবে।’
অভিযান পরিচালনা সম্পর্কে মেয়রের একান্ত সচিব আবুল হাশেম বলেন, ‘জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাংলাবাজারে অভিযান চালিয়ে ফুটপাত ও সড়ক উদ্ধার করেছিলাম। প্রায় দুই মাস উদ্ধার হওয়া স্থান উন্মুক্ত ছিল। তবে, এরপর ফের সে জায়গা বেদখল হয়ে গেছে। এ জন্য আমরা জায়গা উদ্ধার করলে সংশ্লিষ্ট থানাগুলো যদি নিয়মিত মনিটরিং করে, তাহলে সিটির ফুটপাত ও সড়ক উন্মুক্ত রাখা সম্ভব। মেয়রের নির্দেশ বাস্তবায়নে আগামী সপ্তাহে স্টেশন থেকে ফলমন্ডির রাস্তাটা আমরা উচ্ছেদ করব। প্রয়োজনে পুলিশ-আনসারসহ সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা নিয়ে যে কোন মূল্যে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করব।’
সভায় চসিকের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মানিক বলেন, ‘চসিক ল এনফর্সমেন্ট এজেন্সি না। আমাদের কাজ রাস্তা, ফুটপাত, নালা বানানো। এগুলো যাতে বেদখল না হয় সেই জন্য পুলিশের সহযোগিতা প্রয়োজন। সিটির যানজট কমাতে আমরা আগ্রাবাদে পরীক্ষামূলকভাবে পে-পার্কিং চালু করছি। সিটির ৭৫ হাজার রিকশার লাইসেন্স আছে, আরো ২০ হাজার লাইসেন্স প্রক্রিয়াধীন আছে। কিন্তু, রিকশা চলছে তিন লক্ষাধিক। সিটির মূল সড়কে রিকশা বন্ধেও উদ্যোগ নেয়া হবে।’
সিডিএ’র জলাবদ্ধতা প্রকল্প প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, ‘সিডিএর জলাবদ্ধতা নিরসণ প্রকল্পের কাজ অত্যন্ত ধীরগতিতে হচ্ছে। আমি প্রকল্পের এলাকাগুলোতে পরিদর্শন করে দেখেছি, চাক্তাই খাল, বিরজা খালসহ বিভিন্ন প্রকল্প সংশ্লিষ্ট এলাকায় মাটি জমে আছে। এ মাটি উত্তোলন করা না হলে এ বছরও সিটিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে। এ জন্য বর্ষাকাল আসার পূর্বেই নালা-খালের মাটি উত্তোলন করতে হবে।’
সভায় ট্রাফিক বিভাগের এডিসি মো. কাজী হুমায়ুন রশীদ বলেন, ‘হকার উচ্ছেদে সবাইকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। বর্তমানে কিছু এলাকায় ফুটপাত পুরোপরি দখল হয়ে গেছে। এ কারণে বহু মানুষকে ফুটপাতে জায়গা না পাওয়ায় রাস্তাায় হাটতে হচ্ছে; যা দুর্ঘটনা ও জ্যাম বাড়াচ্ছে। পর্যাপ্ত জ্যাব্রাক্রসিং না থাকার কারণে পথচারীরা সমস্যায় ভুগছেন। পর্যাপ্ত জ্যাব্রাক্রসিং নির্মিত হলে যানজট ও দুর্ঘটনা কমবে। সিটিতে দুর্ঘটনা বেশি হচ্ছে মোড়গুলোতে। আমরা যদি পরিকল্পনামাফিক মোড়গুলোকে গড়তে পারি, তবে দীর্ঘ মেয়াদে সিটিরি ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা উন্নত হবে। বর্তমানে যে সব গাড়িকে আইনভঙ্গের জন্য আটক করা হয় সেগুলোকে রাখার জন্য পুলিশের ডাম্পিং স্টেশন প্রয়োজন। চসিক এ ধরনের গাড়ির জন্য ডাম্পিং স্টেশন করলে সিটিতে যানজট হ্রাস পাবে ও আটককৃত গাড়ির ব্যবস্থাপনা উন্নত হবে।’
সভায় একাধিক কাউন্সিলর চসিকের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে সমন্বয় নিশ্চিত ও প্রকল্প বাস্তবায়নে কাউন্সিলরদের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করার দাবি জানালে চসিকের প্রকৌশল বিভাগের উদ্দেশ্যে মেয়র বলেন, ‘বর্ষা মৌসুমে দুই মাস কাজ করা যায় না। এ জন্য শুষ্ক মৌসুমেই গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত কাজে অগ্রগতি নিশ্চিত করতে হবে।’
রাস্তা ঢালাই ও কাজের সময় কাউন্সিলর, সহকারী প্রকৌশলী, উপ-সহকারী প্রকৌশলী, সুপারভাইজাররা উপস্থিত থাকে না- এলাকাবাসীর অভিযোগ রয়েছে। কাজের মান নিশ্চিত করতে ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের সাথে আলাপ করে প্রাধিকারের ভিত্তিতে টেন্ডার দিতে হবে ও কাজ চলাকালে এলাকায় সাইনবোর্ডে কাজের বিবরণ থাকতে হবে। যাতে কাজের স্বচ্ছতার বিষয়ে জনগণ জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে পারে।
কোন ঠিকাদারের বিরুদ্ধে নিম্ন মানের কাজের অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাকে জরিমানা করা হবে, প্রয়োজনে কার্যাদেশ বাতিল করা হবে। কাজ নিম্নমানের হলে, কাজ শেষ না করে ফেলে রাখলে ঠিকাদারকে বাদ করে দিব। পিসি রোডের ঠিকাদার কাজ ফেলে পালিয়ে যাওয়ার পর যেভাবে কার্যাদেশ বাতিল করে নতুন ঠিকাদার নিয়োগ দিয়ে কাজ শেষ করেছি সেভাবে সময়মতো প্রকল্প শেষ হওয়ার ব্যাপারটি নিশ্চিত করব বলে মেয়র জানান।
সভায় ‘চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আওতায় বিমানবন্দর সড়কসহ বিভিন্ন সড়ক উন্নয়ন ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি ১৭ শতাংশ বলে জানান উপ-প্রকল্প পরিচালক জসিম উদ্দিন।
সভায় বিগত সাধারণ সভার কার্যবিবরণী, দরপত্র কমিটির কার্যবিবরণী এবং স্ট্যান্ডিং কমিটির কার্যবিবরণী অনুমোদিত হয়। স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতিরা তাদের নিজ নিজ স্ট্যান্ডিং কমিটির কার্যবিবরণী পেশ করেন। সভায় চসিকের সচিব খালেদ মাহমুদ, প্যানেল মেয়রবৃন্দ, কাউন্সিলরবৃন্দসহ বিভাগীয় ও শাখা প্রধানগণ এবং সিটির বিভিন্ন সরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।