চট্টগ্রাম মহানগরীতে ঈদুল আযহাকে ঘিরে প্রতিবছর কামারশালা গুলোতে দিন-রাত চলতো কাজ। দা-ছুরি তৈরি, বিক্রি ও শাণ দিতে দিতেই দম ফেলার ফুরসত মিলতো না কামারদের। তবে করোনাকাল পাল্টে দিয়েছে সেই চিত্র।
চট্টগ্রাম নগরীর বহদ্দারহাট কামারগলি, চকবাজার, মুরাদপুর, কোতোয়ালী, পাথরঘাটাসহ বিভিন্ন এলাকার কামারের দোকান ঘুরে দেখা গেছে, আগের মতো ব্যস্ততা নেই কামারদের।
বহদ্দারহাট কামারগলির সমীর সরকার চট্টগ্রাম নিউজকে বলেন, ঈদের এক মাস আগে থেকেই দা, ছুরি, বটি, ধামা তৈরি করা শুরু হতো। বিক্রি শুরু হতো কোরবানির এক সপ্তাহ আগে থেকে। এ বছর তেমন কাজ পাওয়া যায়নি। তাই পুরোনো ছুরি, বটি, ধামা শাণ দিয়ে রাখছি বিক্রির আশায়।
আরেক কামার রাজু কর্মকার চট্টগ্রাম নিউজকে বলেন, এই এলাকায় ৩টি বড়, ২টি মাঝারি ও আমার একটি ছোট দোকান আছে। সবগুলো দোকানেই তেমন কাজ নেই। ভাঙাচোরা দোকানটির মাসিক ভাড়া দেড় হাজার টাকা। দুইজন মিলে কাজ করি। অন্যান্য বছর কাজ থাকতো। করোনার কারণে কাজ কমে গেছে।
মুরাদপুরের কয়েকজন কামারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই সময়টাতে গ্রাহকের অর্ডার নিয়ে ঠিক সময়ে ডেলিভারি দিতে দোকানে বাড়তি কর্মচারী নিয়োগ দিতে হতো। আগেভাগেই কাঁচা লোহা কিনে রাখতে হতো। শাণ দেওয়ার যন্ত্রে ব্যবহারের জন্য মজুদ করতে হতো কয়লা। আর এখন গ্রাহকের অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। পুরোনো গুলোতেই শাণ দিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তারা।
দেখা গেছে, কামারশালা গুলোতে বিক্রির জন্য সাজিয়ে রাখা হয়েছে দা, ছুরি, বটি। মানভেদে নতুন দা ২৮০ থেকে ৪শ থেকে ৫শ টাকা, ছুরি ১৩০ থেকে ২শ টাকা, বটি ৩৫০ থেকে ৬শ টাকা, পশু জবাইয়ের ছুরি ৩৫০ থেকে ৫শ টাকা এবং ধামা ৪শ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। দা শাণ করাতে ৬০ টাকা, ছুরি ৪০ টাকা, বটি ৬০ টাকা করে নিচ্ছেন কামাররা।
কামারের অধিকাংশই পূর্বপুরুষদের হাত ধরে এই পেশায় এসেছেন। বর্তমানে আধুনিক যন্ত্রাংশের দাপটে কামার শিল্পে চলছে দুর্দিন। তারপরও বাপ-দাদার পেশা টিকিয়ে রেখেছেন অনেকে।
কামাররা বলছেন, এক সময় তাদের যে কদর ছিল বর্তমানে তা আর নেই। মেশিনের সাহায্যে এখন আধুনিক যন্ত্রপাতি তৈরি হচ্ছে। চাইনিজ ছুরিসহ নিত্য ব্যবহার্য সামগ্রী সস্তায় মিলছে দোকানে। ফলে তাদের তৈরি সামগ্রীর প্রতি মানুষ আকর্ষণ হারাচ্ছে।
















