চট্টগ্রাম: লোকগবেষক ও কবি শামসুল আরেফীনের দীর্ঘ সময়ের শ্রমের ফসল ‘চট্টগ্রামের লোকসংগীত’ গ্রন্থটি অক্ষরবৃত্ত প্রকাশন থেকে এবারের (২০২৪) একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে। চট্টগ্রামের বইমেলায় অক্ষরবৃত্ত প্রকাশনের ৮৩-৮৪ নম্বর স্টলে ও বাংলা একাডেমির বইমেলায় এ প্রকাশনের ৯৩ নম্বর স্টলে গ্রন্থটি পাওয়া যাচ্ছে।
লোকসংগীত শ্রুতি ও স্মৃতিনির্ভর। কিন্তু, ১৯৭৫ সালে ইন্টারন্যাশনাল ফোক মিউজিক কাউন্সিল বা আন্তর্জাতিক লোকসংগীত সংস্থা লোকসংগীত নামের পাশাপাশি ‘ট্র্যাডিশনাল মিউজিক’ বা ‘প্রাচীন ঐতিহ্যভিত্তিক সংগীত’ ব্যবহারে মতামত দেয়ায় বাউল, ভাটিয়ালি, পল্লিগীতি, জাহাঁগিরি, মাইজভাণ্ডারি, কবিগান, আঞ্চলিক গান প্রভৃতি অর্থাৎ প্রাচীন ঐতিহ্যভিত্তিক সব গানও লোকসংগীতের অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বলা বাহুল্য, ওই মতামত দেয়ার কারণে আন্তর্জাতিক লোকসংগীত সংস্থার নামও পরিবর্তন হয়ে ‘ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল ফর ট্র্যাডিশনাল মিউজিক’ এ পরিণত হয়েছে।
এ গ্রন্থে শ্রুতি ও স্মৃতিনির্ভর গানের পাশাপাশি প্রাচীন ঐতিহ্যভিত্তিক সংগীতকে লোকসংগীত বিবেচনা করা হয়েছে। বৃহত্তর চট্টগ্রামের ১০৮ জন লোককবি সম্পর্কে বর্ণনা ও তাদের গান এ গ্রন্থে উপস্থাপন করা হয়েছে। লোককবিরা হলেন আলী রজা ওরফে কানুফকির, মোয়াজ্জম, এর্সাদ উল্লা, সর্ফত উল্লা, মকবুল আহমদ পণ্ডিত, আস্কর আলী পণ্ডিত, দলিলুর রহমান পণ্ডিত, ক্ষেমেশচন্দ্র রক্ষিত, শাহ্ আবদুল জলিল সিকদার, সেকান্দর গাইন, আতর আলী, মোশরফ আলী, মাওলানা সৈয়দ আবদুল গণি কাঞ্চনপুরী, মাওলানা আবদুল হাদী কাঞ্চনপুরী, হাবিবুর রহমান, খায়েরজ্জমা মাস্টার, রমেশ শীল, করিম বখশ, মাওলানা বজলুল করিম মন্দাকিনী, হেফাজতুর রাহমান খান, খাদেম আলী, মোজহেরুল আলম ওরফে ছাহেব মিয়া, নাদেরুজ্জামান খান, আবদুল লতিফ শাহ্, মুন্সী আমিন শরীফ, সরকার মনিন্দ্র দাস, মোহাম্মদ নাসির, আবুল খায়ের নকশবন্দি, ফণী বড়ুয়া, মোহাম্মদ হোসেন, রাই গোপাল দাশ, মলয় ঘোষ দস্তিদার, মোহাম্মদ মুসা আলম, আহমদুর রহমান, অমলেন্দু বিশ্বাস, অচিন্ত্যকুমার চক্রবর্তী, মোহনলাল দাশ, শ্যামসুন্দর বৈষ্ণব, মো. শাহ বাঙালি, নজু মিয়া, এম রশিদ কাওয়াল, কবির আহমদ ফকির, মিলন সরকার, এয়াকুব আলী, লক্ষ্মীপদ আচার্য্য, এমএন আখতার, বিভূতী রঞ্জন নাথ, রাখাল মালাকার, আবদুল গফুর হালী, আমানুল্লাহ্ গায়েন, আবদুর রশিদ, আহমদ কবির আজাদ, রাখাল দাশ, মধূসুদন নাথ, মানিক শীল, খুকী রানী শীল, মোহাম্মদ সৈয়দ, ঈছা আহমেদ নকশবন্দি, সৈয়দ মহিউদ্দিন (মহি-আল-ভান্ডারী), গোলাম গণি চৌধুরী, আহমদ বশির, এসএম নূর-উল-আলম, রুহুল আমিন, মাস্টার এরশাদুল হক, সনজিৎ আচার্য, সৈয়দ ওয়াহিদুল আলম জুনু, অজিত বরণ শর্মা, নুরুল আলম, মোহাম্মদ বাদশাহ্ আলম, এমএন আলম, সোনা মিয়া, ইকবাল হায়দার, মো. নুরুল আলম, সৈয়দ মফিজুর রহমান, দীপক আচার্য্য, স্বপন কুমার দাশ, কাজল দাস, বদরুন্নেসা সাজু, গোপাল দাশ, শাহাদাত আলী, শফী সুমন, সিরাজুল ইসলাম আজাদ, আবদুল হাকিম, শেখ নিজাম উদ্দিন, সিরাজুল হক সিরাজ, রনজন চক্রবর্তী, বাবুল আচার্য্য, মুহাম্মদ নুরুল কবীর, কাজল শীল, মো. সাহাব উদ্দীন, মো. শামশুল আলম, আরিফ বাঙাল, সুখ সাগর, শাহীন নুপুর, আলাউদ্দীন কাওয়াল, মতিন, রফিক, সেকান্দর, নজির, তাহের, মুছা, মতি, আলমগীর, জালাল, কাদের, আলী, এসকান্দর ও জাফর।
চট্টগ্রামের লোকসাহিত্যের অন্যতম শাখা চট্টগ্রামের লোকসংগীতের ইতিবৃত্ত নির্মাণে, তার গুরুত্ব-চরিত্র-বৈশিষ্ট্য অনুধাবনে, চট্টগ্রামের লোকসমাজের সুখ-দুঃখ ও আনন্দ-বেদনার চিত্রায়ণে, এ লোকসমাজের বিশ্বাস-দর্শন-চেতনার স্বরূপ উন্মোচনে এ গ্রন্থটি তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে, এমনটি আশা করা যায়। চট্টগ্রামের লোকসংগীতের সংরক্ষণের ক্ষেত্রেও এ গ্রন্থটি উল্লেখযোগ্য চিহ্নিত হতে পারে।
অক্ষরবৃত্ত প্রকাশনের স্বত্বাধিকারী আনিস সুজন জানিয়েছেন, শামসুল আরেফীনের ‘চট্টগ্রামের লোকসংগীত’ গ্রন্থটি বৃহত্তর চট্টগ্রাম তথা বাংলাদেশের লোকসংগীতের গবেষণাজগতে উল্লেখযোগ্য সংযোজন।
















