জসীম উদ্দীন
বাঁশখালী প্রতিনিধি
সামান্য প্লাস্টিকের পাইপ বসানোকে কেন্দ্র করে বাঁশখালীতে প্রতিপক্ষের হামলায় আপন চাচা ভাতিজা খুন হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন কয়েকজন। খুনের ঘটনায় দায়ের করা মামলা থেকে রেহাই পেতে ফেসবুক লাইভে এসে বাঁশখালী থানার ডিউটি অফিসারের সামনে বিষপান করে রাসেল চৌধুরী নামে একজন।
বালুমহাল ও জায়গার বিরোধকে কেন্দ্র করে গতকাল বুধবার (২০ অক্টোবর) বেলা ২টায় বাঁশখালী প্রধান সড়কের মনছুরিয়া বাজার এলাকায় এ খুনের ঘটনা ঘটে।
পুলিশ আসামি গ্রেফতারের পর থানার ভিতর এক আসামির বিষপানের ঘটনা ঘটে । সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে বাজারে ছুরিকাঘাত ও হাতুড়ি পেটায় চাচা সোলতান মাহমুদ টিপু(৩৮) ও ভাতিজা আব্দুল খালেক (৩৫)কে খুন করেছেন। ওই ঘটনায় মো. কামাল উদ্দিন(৫০), গুরুতর আহত এবং মো. রাসেল নামের একজন বিষপান করা যুবক চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।
এ ব্যাপারে নিহত আব্দুল খালেকের মা বাদি হয়ে গত বুধবার রাতেই ১০ জনের নাম উল্লেখ এবং ৬ জন অজ্ঞাত দেখিয়ে মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ এজাহার নামীয় ৫ জনকে গ্রেফতার করেছেন। তম্মধ্যে বাহাদুর, মনজুর এবং বিষপান করা মো. রাসেল চাচা-ভাতিজা হত্যা মামলার ১, ২ ও ৪ নং আসামী হিসেবে পুলিশ হেফাজতে চিকিৎসাধীন আছে। হতাহত প্রত্যেকের বাড়ি বাঁশখালী পৌরসভার দক্ষিণ জলদী গ্রামের রঙ্গিয়াঘোনা এলাকায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আব্দুল খালেক ও সোলতান মাহমুদ টিপু হত্যার পর এজাহার নামীয় আসামী শীলকূপের মো. ছিদ্দিককে গ্রেফতার করলে, তার পুত্র মো. রাসেল থানায় এসে থানার ভিতরে পুলিশের সামনে বিষপান করেন। বিষপানের কারণ হিসেবে চিৎকার করে বলে আমার বাবা হত্যার সাথে জড়িত নয়, পুলিশ অন্যায়ভাবে আমার বাবাকে ধরেছে তাই বিষপান করে আত্মহত্যা করবো। যেই বলা সেই কাজ। সাথে নিয়ে আসা বিষপান করেই ফেললো থানার ভিতর। মো. রাসেল বিষপান করার সাথে সাথে পুলিশ তাকে বাঁশখালী হাসপাতালে ভর্তি করায়। ওখান থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়। নিহতের মা বাদি মো. রাসেলকেও এজাহারে ৪নং আসামি করেছেন।
নিহত আব্দুল খালেক বঙ্গবন্ধু শিশু-কিশোর মেলা সংগঠনের বাঁশখালী উপজেলা শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক। তিনি রাজনীতির পাশাপাশি একটি ঔষধ কোম্পানির এমআর হিসেবে চাকুরী করতেন এবং স্থানীয় একটি বালুমহাল ব্যবসায় জড়িত ছিলেন। তার নিহত চাচা সোলতান মাহমুদ টিপু ও ছাত্র রাজনীতি করতেন। তাদের সাথে দীর্ঘদিন ধরে বাঁশখালী ইকোপার্ক সংলগ্ন শীলকূপ আশিঘর পাড়া এলাকার একটি বালু মহাল ও পৈত্রিক সম্পত্তি নিয়ে স্থানীয় কিছু যুবক এবং কাছিম আলীর ছেলেদের সাথে বিরোধ চলে আসছিল। গত একমাস ধরে কয়েকদফা মারামারির ঘটনাও ঘটেছে। সর্বশেষ গত বুধবার দুপুর ১২টায় কাছিম আলীর ছেলেদের সাথে তাদের পাড়া রঙ্গিয়াঘোনা এলাকায় হাতাহাতি ও ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে।এর দুইঘন্টা পর বাড়ির পাশে মনছুরিয়া বাজার এলাকায় আব্দুল খালেক ও তার চাচা সোলতান মাহমুদ টিপু গেলে ওতপেতে থাকা সন্ত্রাসীরা তাদের প্রকাশ্যে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত ও হাতুড়ি পেটা করতে থাকে। ওইসময় বাজারে অনেক লোক ছিল। অন্যান্যরাও আহত হয়।
এই ঘটনায় আজ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম, আনোয়ারা’র সহকারী পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবির, বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ কামাল উদ্দীন, বাঁশখালী থানার তদন্ত ওসি আজিজুল হক।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আজ বাঁশখালীতে এসে চাচা ভাতিজা হত্যা মামলার স্থান পরিদর্শন করে যেটা জানতে পারলাম। সামান্য পানির পাইপ বসানোকে কেন্দ্র করে প্রথমে কথা কাটাকাটি হয়। উক্ত কথা-কাটাকাটি গুলো একপর্যায়ে মীমাংসা হয়ে যায়। মীমাংসা হওয়ার দুই ঘন্টা পর বাঁশখালীর প্রধান সড়ক সংলগ্ন মনছুরিয়া বাজার চৌ রাস্তার মাথায় ছুরি ও হাতুড়ি দিয়ে কয়েকজন লোক নিহত ব্যক্তিদের মাঝে হামলা চালায়।
এ ঘটনায় বাঁশখালী থানায় একটি মামলা হয়। উক্ত মামলায় তিনজন পুলিশ হেফাজতে চিকিৎসায় আছে বাকি দুইজন আটক আছে। বিষপান করা আসামি মো. রাসেলকে পুলিশ হেফাজতে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
















