চট্টগ্রামের উত্তরের ত্রাস, বহু হত্যা, ডাকাতি, চাঁদাবাজি মামলার আসামি, রাঙ্গুনিয়ার কুখ্যাত জামাল বাহিনীর প্রধান মো. জামালকে (৩৮) অস্ত্র ও গুলিসহ গ্রেফতার করা হয়েছে।
বুধবার (২৫ আগস্ট) সন্ধ্যায় এ তথ্য নিশ্চিত করেন রাঙ্গুনিয়া-রাউজান সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন শামীম।
গ্রেফতার জামাল রাঙ্গুনিয়া উপজেলার চিরিঙ্গা ফরেস্ট অফিস এলাকার মৃত তোতা মিয়ার ছেলে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী জামাল রাঙ্গুনিয়া উপজেলার সরফভাটা এলাকায় খুন, ডাকাতি চাঁদাবাজি, লুটপাটসহ অসংখ্য অপরাধের সঙ্গে যুক্ত।
তার বিরুদ্ধে খুনসহ কমপক্ষে ৭টি মামলা রয়েছে। এ ছাড়া তিনি ৩ মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামিও।
গত ২৯ মে রাঙ্গুনিয়ার চিরিঙ্গা ফরেস্ট অফিসের নৈশপ্রহরী ওয়াকিল আহমেদের কাছে চাঁদা চেয়ে ব্যর্থ হওয়ার পর তার বাড়িতে প্রকাশ্য হামলা করে জামাল বাহিনীর সদস্যরা। সেসময় ওয়াকিল আহমেদের স্ত্রী পঞ্চাশোর্ধ শামসুন নাহারকে ৭/৮ জন মিলে কুপিয়ে মুমূর্ষু অবস্থায় ফেলে যাওয়ার পাশাপাশি বাড়ি থেকে লক্ষাধিক টাকা, ৩ ভরি স্বর্ণ এবং ৪টি মোবাইল ফোন লুট করে নিয়ে যায়।
এ ঘটনায় জামালসহ ৮ জনের নাম উল্লেখ করে রাঙ্গুনিয়া থানায় মামলা করেন ওয়াকিল আহমেদের মেয়ে কাউছার আক্তার।
জানা যায়, ২০১৪ সালে প্রথম স্থানীয় দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী ওসমান বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত হন জামাল। খুন, ডাকাতি, চাঁদাবাজিসহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে পারঙ্গমতা দেখিয়ে অচিরেই তিনি ওসমানের আস্থাভাজন সহযোগীতে পরিণত হন। তার পদোন্নতি হয় ওসমান বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে।
২০১৯ সালে বাহিনী প্রধান ওসমানকে অজ্ঞাত বন্দুকধারীরা গুলি করে হত্যা করলে বাহিনী পুনর্গঠন করে জামাল বাহিনী নাম দিয়ে নিজেই দণ্ডমুণ্ডের কর্তা সেজে যান। মামলার এজাহারে হত্যাকারী হিসেবে কারো নাম উল্লেখ করা না হলেও জামাল নিজেই সেই খুন করেছেন, তা রাঙ্গুনিয়ায় ওপেন সিক্রেট।
গত ৯ এপ্রিল সরফভাটা এলাকায় নিজ বাড়ির সামনে গুলি করে হত্যা করা হয় ডাকাতি ও খুনের ৬ মামলার আসামি মফিজ খান ওরফে ডাকাত মফিজকে। গ্রেফতার জামাল সেই মামলারও এজাহারভুক্ত আসামি।
রাঙ্গুনিয়ার সরফভাটা ইউনিয়ন উত্তর চট্টগ্রামের সবচেয়ে সন্ত্রাসকবলিত এলাকা। জামাল বাহিনীর পাশাপাশি কামাল – তোফায়েল বাহিনীর অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের বেপরোয়া চাঁদাবাজি, লুটপাট, অত্যাচারে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী বহুবার সমাবেশ, মানববন্ধন করে প্রশাসনের কাছে এই পরিস্থিতি উত্তরণের দাবি জানিয়েছেন। ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে লিখিত আবেদনও দেওয়া হয় বহুবার। কিন্তু যত আন্দোলন হয়েছে, যত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে ততই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে সন্ত্রাসী দলগুলো।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন শামীম এবং রাঙ্গুনিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মাহবুব মিল্কির নেতৃত্বে পুলিশের একটি চৌকস দল নগরের নয়ারহাট বাজার এলাকা থেকে জামালকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর মঙ্গলবার রাতে তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী তার বসতবাড়ি ও আস্তানায় অভিযান চালিয়ে একটি রিভলভার, একটি এলজি, দুইটি কার্তুজ উদ্ধার করা হয়।
এ বিষয়ে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন শামীম বলেন, একাধিক মামলার আসামি মো. জামালকে অস্ত্র ও গুলিসহ গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ছাড়াও সরফভাটায় সন্ত্রাসী তৎপরতায় যুক্ত অন্যদেরকেও আইনের আওতায় আনতে আমাদের তৎপরতা অব্যাহত আছে।
















