আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে সরকারের শীর্ষ গণমাধ্যম ও তথ্য কর্মকর্তাকে হত্যা করেছে তালেবান যোদ্ধারা। তালেবান মুখপাত্র ও সরকারি কর্মকর্তারা এমন তথ্য দিয়েছেন।
এর আগে বিমান হামলা বেড়ে যাওয়ার প্রতিশোধ নিতে জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তাদের হামলার লক্ষ্যবস্তু করার ঘোষণা দিয়েছিল তালেবান। আফগানিস্তানের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, সরকারের গণমাধ্যম ও তথ্য কেন্দ্রের প্রধান দাওয়া খান মিনাপাল নিহত হয়েছেন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, নৃশংস সন্ত্রাসীরা আরেকটি কাপুরুষোচিত হামলা চালিয়েছে এবং একজন দেশপ্রেমিক আফগানকে হত্যা করেছে।
আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন মিনাপাল। কাবুলে কর্মরত আলজাজিরার সাংবাদিক জেমস বে বলেন, আফগান সাংবাদিকদের কাছে তিনি সুপরিচিত ছিলেন। তিনি প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির ঘনিষ্ঠদের একজন ছিলেন। জুমার নামাজ পড়তে তিনি ঘর থেকে বের হয়েছিলেন। তখনই তাকে হত্যা করা হয়েছে।
এদিকে আফগানিস্তানে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে তালেবানের তীব্র লড়াই চলছে। সরকারি বাহিনীর মিত্র মিলিশিয়াদের ওপরও হামলা চালিয়েছে তালেবান। সরকারি কর্মকর্তাদের বরাতে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এমন খবর দিয়েছে।
সীমান্ত শহরগুলোতে নিয়ন্ত্রণ শক্ত করার পর এবার দুটি প্রাদেশিক রাজধানীর কাছাকাছি অবস্থানে চলে এসেছে বিদ্রোহীরা। তালেবানের হামলায় অন্তত ১০ আফগান সেনা ও জাওয়াজান প্রদেশের আবদুল রশিদ দস্তুম মিলিশিয়া গোষ্ঠীর এক কমান্ডার নিহত হয়েছেন।
জওয়াজান প্রদেশের উপ-গভর্নর আবদুল কাদির মালিয়া বলেন, চলতি সপ্তাহে প্রাদেশিক রাজধানীর উপকণ্ঠে সেবারগানে সহিংস হামলা চালিয়েছে তালেবান। সরকারি বাহিনীর সঙ্গে ব্যাপক সংঘাতের পর সরকারি বাহিনীর মিত্র মিলিশিয়া কমান্ডার নিহত হয়েছেন।
প্রদেশটির ১০টি জেলার ৯টি এখন তালেবানের নিয়ন্ত্রণে। এখন তারা সেবারগান দখলে নেওয়ার লড়াই করছে।
এদিকে আফগানিস্তানের গ্রামীণ এলাকায় হামলার বদলে এবার প্রাদেশিক শহরগুলোকে লক্ষ্যবস্তু বানানোর কথা জানিয়েছে তালেবান বিদ্রোহীরা। মার্কিন বিমান হামলার জবাবে তারা এই কৌশল বদলের ঘোষণা দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের দীর্ঘ যুদ্ধের অবসানের ঘোষণা দেওয়ার পরেও তালেবানের বিরুদ্ধে বিমান হামলা বাড়িয়েছে মার্কিন বাহিনী। দুই দশকের আফগান যুদ্ধের পর দেশটি থেকে সেনাপ্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে তারা।-খবর রয়টার্সের
এদিকে সরকারি বাহিনীকে হটিয়ে ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নিতে মরিয়া তালেবান। গত মাসের শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্রের এক আঞ্চলিক কমান্ডার বলেন, তালেবানের ক্রমবর্ধমান হামলার জবাবে যুক্তরাষ্ট্রও বিমান হামলা বাড়িয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই উদ্যোগের নিন্দা জানিয়েছে তালেবান। ইরান সীমান্তের হেরাত, হেলমন্দ প্রদেশের রাজধানী লস্কর গাহ ও কান্দাহারে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে তালেবানের তীব্র লড়াই চলছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিন তালেবান কমান্ডার বলেন, তারা এখন হেরাত, কান্দাহার ও লস্কর গাহের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার দিকেই মনোযোগ দিয়েছেন। কান্দাহারের এক তালেবান কমান্ডার বলেন, মোল্লাহ ইয়াকুবের যুক্তি হচ্ছে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অঙ্গীকার পূর্ণ করেনি, সেখানে তালেবান কেন সেই চুক্তি মেনে চলবে? কাজেই কান্দাহার ও হেরাত দখলের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। এরপর হেলমান্দা, কুন্দুজ, খোস্ট ও অন্যান্য প্রদেশের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করা হবে।
তবে এ নিয়ে তালেবানের মুখপাত্রের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। বিদ্রোহীদের আলোচক সুহাইল শাহিন বলেন, এখনো গ্রামীণ অঞ্চল দখল করে সেখানে ইসলামি শরিয়াহ বাস্তবায়নের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে তালেবান। শহরের দিকে এখনো নজর দেওয়া হয়নি।তালেবানের এক কমান্ডার বলেন, কান্দাহার ও হেরাতের অভিযান আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেখানকার দুটি বিমানবন্দর কিংবা বিমান ঘাঁটিও আমরা জব্দ করতে চাই।
তবে গত মাসে তালেবানের নীতি পরিবর্তনের আভাস মিলছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক বিশ্লেষক আসফান্দির মীর বলেন, তালেবান এখন প্রাদেশিক রাজধানীগুলোর দিকে নজর দিয়েছে। তারা কেবল চাপ ফেলছে না, এগুলো সেগুলো দখল করতে চায়।
তিনি বলেন, তালেবান যে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করেছেন, শহরগুলোতে আক্রমণের ধরনই তা বলে দিচ্ছে। লড়াই এখন আর কোনো নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে আটকে নেই। ঈদের পর তালেবানের কৌশল নতুন আকার নিয়েছে। যদিও ঈদের আগেই কান্দাহারের ওপর ব্যাপক চাপপ্রয়োগ করে আসছিল তারা।
জনসংখ্যার দিক থেকে আফগানিস্তানের দ্বিতীয় ও তৃতীয় বৃহৎ শহর হচ্ছে কান্দাহার ও হেরাত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই শহর দুটো হাত থেকে ফসকে গেলে তা আফগান সরকারের জন্য বড় আঘাত হবে। এতে তালেবানের পক্ষে নতুন বিন্যাস তৈরি হবে। আর কান্দাহার দখল তালেবানের জন্য বড় অর্থ বহন করছে। এটি ছিল তাদের ক্ষমতায় থাকাকালীন রাজধানী। কাজেই শহরটি দখল করলে তাদের মনোবল বাড়বে।
তবে সেনাপ্রত্যাহারের পরেও তালেবানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র বিমান হামলা অব্যাহত রাখবে কিনা; তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এ নিয়ে আফগানিস্তানে মার্কিন দূতাবাস কিংবা দেশটিতে মার্কিন বাহিনীর কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
















