অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাস ও উপ-পরিদর্শক নন্দ দুলাল রক্ষিত জামিন আবেদন করেছেন।
রোববার (১৩ জুন) দুপুরে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাঈলের আদালত তাদের আবেদন শুনানীর জন্য আগামী ২৭ জুন নির্ধারণ করেছেন।
গেল ১০ জুন ওসি প্রদীপেরর আইনজীবি এডভোকেট মহিউদ্দিন এ জামিন আবেদন করেন। অপরদিকে গেল ৯ জুন নন্দ দুলালের জামিন আবেদন করেন তার আইনজীবি।
এ আবেদনের শুনানী করতে রোববার (১৩ জুন) কক্সবাজার আদালতে এসেছে এডভোকেট রানা দাশ গুপ্তের নেতৃত্বে একটি আইনজীবি প্যানেল। কিন্তু আদালত না বসায় সে শুনানী পিছিয়ে ২৭ জুন করার জন্য দিন ধায্য করা হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ওসি প্রদীপের আইনজীবি জামিন আবেদন করেন। পূর্বে নির্ধারিত সময় না থাকলেও আসামী পক্ষের দাবির প্রেক্ষিতে শুনানী হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আগামী ২৭ জুন এ জামির শুনানীর দিন ধায্য করা হয়েছে।
আদালত চত্বরে এডভোকেট রানা দাশ গুপ্ত বলেন, মামলার এজাহার ও চাজর্শীটে দুই ধরণের তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। ভিন্ন ভিন্ন তথ্যে ওসি প্রদীপকে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হয়েছে। এজাহারে বলা হচ্ছে পরিদর্শক লিয়াকত গুলি করে সিনহার মৃত্যু হওয়ার পর ওসি প্রদীপ এসেছে। চাজর্শীটে বলা হচ্ছে পা দিয়ে ওসি প্রদীপ মূখমন্ডল চেপে ধরে সিনহার মৃত্যু নিশ্চিত করেছে। আসলে আদালতে সবার সুষ্ঠু বিচার চাওয়ার অধিকার রয়েছে। আমরাও চাই সিনহা হত্যার সুষ্ঠু বিচার হউক। তবে কোন নিরপরাদ লোকজনে হয়রানী না হয়।
এরআগে, গেল ১০ জুন বৃহস্পতিবার
চট্টগ্রাম কারাগার থেকে প্রিজন ভ্যানে করে কক্সবাজার কারাগারে আনা হয় ওসি প্রদীপকে।
আলোচিত মেজর সিনহা হত্যা মামলায় ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর ওসি প্রদীপ কুমার দাস সহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে তদন্ত কর্মকর্তা র্যাব-১৫ এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. খায়রুল ইসলাম।
ওই বছরের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে গাড়ী তল্লাশীকে কেন্দ্র করে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাখেদ খান।
এ ঘটনায় গত ৫ আগস্ট নিহত সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সাবেক ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে প্রধান আসামী করে টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ নয় জন পুলিশ সদস্যকে আসামী করা হয়। আদালত মামলাটির তদন্ত করার আদেশ দেন র্যাবকে।
এরপর গত ৬ আগস্ট প্রধান আসামী লিয়াকত আলী ও টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ৭ পুলিশ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।
পরবর্তীতে সিনহা হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার সংশ্লিষ্টতা পাওয়ার অভিযোগে পুলিশের দায়ের মামলার ৩ জন স্বাক্ষী এবং শামলাপুর চেকপোস্টের দায়িত্বরত আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ানের ( এপিবিএন ) ৩ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এছাড়া একই অভিযোগে পরে গ্রেপ্তার করা হয় টেকনাফ থানা পুলিশের সাবেক সদস্য কনস্টেবল রুবেল শর্মাকেও।
মামলায় গ্রেপ্তার ১৪ আসামীকে র্যাবের তদন্তকারি কর্মকর্তা বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এদের মধ্যে টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও কনস্টেবল রুবেল শর্মা ছাড়া ১২ জন আসামী আদালতে ঘটনার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
সিনহা হত্যার মামলাটি বেআইনি ও অবৈধ দাবি করে ২০২০ সালের ৪ অক্টোবর কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে প্রধান আসামি লিয়াকতের আইনজীবী মাসুদ সালাহ উদ্দিন একটি মামলা দায়ের করেন। ওই দিন আদালত মামলাটির পূর্ণাঙ্গ শুনানির জন্য ২০ অক্টোবর দিন ধার্য করেন।
কিন্তু শুনানীর ওই নির্ধারিত দিনে সিনহা হত্যার মামলার বাদী শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস অসুস্থাতার কারণে আদালতে উপস্থিত থাকতে না পারায় পরবর্তী শুনানীর দিন ধার্য্য করেন ১০ নভেম্বর।
অন্যদিকে মামলাটি শুনানীর ওই নির্ধারিত দিনে ( ১০ নভেম্বর ) সিনহা হত্যার মামলাটি বে-আইনি ও অবৈধ ঘোষণা চেয়ে আবেদনকারি পক্ষের আইনজীবী মাসুদ সালাহ উদ্দিন অসুস্থ হয়ে পড়েন। এতে মামলাটির পূর্ণাঙ্গ শুনানীর দিন আবারো পিছিয়ে যায়।
ওই দিন (১০ নভেম্বর) আদালত মামলাটির পূর্ণাঙ্গ শুনানীর জন্য ১৩ ডিসেম্বর দিন ধার্য্য করেন। এ মামলায় অভিযুক্ত হওয়ার পর দুদকের একটি দুর্নীতি মামলায় চট্টগ্রাম আদালতে হাজির হতে হচ্ছিল ওসি প্রদীপকে। সে সুবাধে তাকে ২০২০ সালের নভেম্বরে চট্টগ্রাম কারাগারে প্রেরণ করা হয়।