“সিআরবি ধ্বংস করে হাসপাতাল চাই না, প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষায় এগিয়ে আসুন” স্লোগান নিয়ে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি স্মরণ অনুষ্ঠান থেকে সিআরবিতে শহীদের স্মৃতির উপর হাসপাতাল করতে দেয়া হবে না বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে চট্টগ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদসহ বিভিন্ন পেশাজীবীরা এ ঘোষণা দেন।
সিআরবিতে প্রস্তাবিত প্রকল্প এলাকায় শতবর্ষী রেইন ট্রিতে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রব এর নাম ফলক স্থাপনের মধ্য দিয়ে কর্মসূচির শুরু হয়। এরপর আলোচনা এবং সবশেষ আরও নয়জন শহীদের নামে প্রকল্প এলাকার গাছগুলোতে নাম ফলক লাগানো হয়।
কর্মসূচিতে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের গবেষক ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রী সবচেয়ে দু:সাহসী যে কাজটি তা হলো যুদ্ধাপরাধীদের বিচার তা করে ফেলেছেন। শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রবকে প্রধানমন্ত্রীর চেনার কথা। তিনি যখন চাকসুর জিএস ছিলেন তখন প্রধানমন্ত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
একজন নেতা এখানে এসে বলেছেন কেউ নাকি ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছেন। প্রকৃতপক্ষে পানি ঘোলা করছে রেল কর্তৃপক্ষ। তারা বলছে গোয়ালপাড়ায় হাসপাতাল হচ্ছে। আসলে শহীদ আবদুর রব কলোনি ভেঙে হাসপাতাল হচ্ছে। অর্বাচীন আমলার ভুল বুঝিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি অন্যদিকে নিতে চাচ্ছেন। এই শহীদ আবদুর রব কলোনিতে আরও শহীদদের কবরসহ নানা স্মৃতির উপর হাসপাতাল করতে দেয়া যাবে না।
আশাকরি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে এটা এখান থেকে সরিয়ে নিবেন। বড়লোকের ইউনাইটেড হাসপাতাল চট্টগ্রামের সাধারণ মানুষের কোনো কাজে আসবে না। চট্টগ্রামের মেয়র আর সিডিএ চেয়ারম্যান বলছেন তারা এখানে হাসপাতাল চান না। তারপরও কত বড় সিন্ডিকেট যে এখানে হাসপাতাল করতে চায়। দুদককে বলব রেলের কারা এ কাজ করছে তাদের খোঁজ নিন। রেল কারো বাবার সম্পত্তি না। এ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে আন্দোলন আরো জোরদার করতে হবে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইদ্রিস আলী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কোনো বয়স নেই। এদেশের মাটিতে লক্ষ মুক্তিযোদ্ধারা ঘুমিয়ে আছেন। তাই এ মাটি এত প্রতিবাদী। মুক্তিযোদ্ধাদের রক্ত বৃথা যেতে পারে না। হাসপাতালের নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বানানোর চেষ্টা যারা করছেন তারা ভুল করছেন। আজকের কোনো কোনো রাজনীতিবিদ এমপি মন্ত্রীদের দেশপ্রেমে ঘাটতি আছে বলেই আমলারা তাদের ঘিরে ফেলেছে। রাজনীতিবিদদের উচিত মানুষের কথা শোনা।
কবি সাংবাদিক কামরুল হাসান বাদল বলেন, রেলের জমি সংরক্ষণ করার কথা রেল কর্তৃপক্ষের। উল্টো তারাই সে জমি দিয়ে দিচ্ছে আর আমাদের আন্দোলন করতে হচ্ছে। আমাদের একটাই দাবি এখানে কোনো হাসপাতাল হবে না। কেউ বলছে শিরীষ তলায় হবে না গোয়ালপাড়ায় হবে। তাদের চিহ্নিত করে রাখুন।
এরাই দেশের শীর্ষজনকে ভুল বুঝিয়ে এই প্রকল্প নিয়েছেন। তারা গণশত্রু। ইউনাইটেডের টাকা খেয়ে তারা এ কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রীকে তারা ভুল বুঝাচ্ছে। শেষ কথা এখানে আমরা কোনো বেসরকারি হাসপাতাল হতে দেব না।
আওয়ামী লীগ নেতা হাসান মনসুর বলেন, এখানে শহীদের কবর। পূর্বসূরীদের স্মৃতির জায়গা। একাত্তরের পরাজিত শক্তির মত কিছু উচ্চাভিলাসী আজ চক্রান্ত করছে। তারা রাষ্ট্রের সম্পদ কুক্ষিগত করে বিদেশে হাজার কোটি টাকা পাচার করে।
আয়োজক পিপল’স ভয়েসের সভাপতি শরীফ চৌহান বলেন, এই মাটি শহীদের স্মৃতিধন্য। এই সিআরবিতে অনেকে শহীদ হয়েছেন মুক্তিযুদ্ধে। রেলের অনেক শ্রমিক কর্মচারী মুক্তিযুদ্ধে জীবন দিয়েছেন। সেই স্মৃতি সংরক্ষণে রেল উদ্যোগ নেয়নি। অথচ শহীদের কবর, শহীদের নামে কলোনি, শহীদের নামে যে সড়ক সেই জমি তারা বেসরকারি হাসপাতালকে বরাদ্দ দিয়েছে।
আমরা বলতে চাই এই সিআরবিতে কোনো বাণিজ্যিক স্থাপনা আমরা চাই না। এমনকি এখন যে একটি রেস্টুরেন্ট করা হয়েছে সেটি কেন এখানে থাকবে? রেল আয় করতে নাকি জমি লিজ দিচ্ছে। তারা আগে নিজেদের লোকসান কমাক। কেন তাদের লোকসান হয় তা বের করুক। কী দুর্নীতির কারণে রেল লাভ করতে পারে না সেটার অনুসন্ধান করুক।
কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মাঈনুদ্দিন দুলাল ও খেলাঘর চট্টগ্রাম মহানগরীর সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য মোরশেদুল আলম চৌধুরী।
উপস্থিত ছিলেন খেলাঘর চট্টগ্রাম মহানগরীর সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী রূপক চৌধুরী, সাংবাদিক ও শিল্পী আলোকময় তলাপত্র, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ঋত্তিক নয়ন, কারিতাস এর শ্যামল মজুমদার, শিক্ষিকা মাগ্রেট মনিকা জিন্স, শিক্ষিকা শেখ বিবি কাউসার, সংগঠক বন বিহারী চক্রবর্তী, সাংবাদিক উজ্জ্বল ধর, বিপ্লবী তারকেশ্বর দস্তিদার স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের প্রকৌশলী সিঞ্চন ভৌমিক, যুব সংগঠক রুবেল দাশ প্রিন্স, যুব মৈত্রীর খোকন মিয়া, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শাহাদাত নবী খোকা, প্রকৌশলী অমিত ধর, সাংবাদিক পার্থ প্রতিম বিশ্বাস, সাংবাদিক আমিন মুন্না, তাপস দে ও নিউটন দাশ। প্রতিবাদী গান পরিবেশন করেন নারায়ন দাশ।
















