অভ্র বড়ুয়া: প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের নিবিড় সম্পর্ক, কৃষিজীবনের আনন্দ আর সাম্প্রদায়িক ঐক্যের গল্প ফুটে উঠলো বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যায়।শুক্রবার (২৯ আগস্ট) সন্ধ্যায় ঐতিহ্য ও শৈল্পিক প্রকাশের এক প্রাণবন্ত মেলবন্ধনে, পূর্ব ও পশ্চিম উপজাতীয় নৃত্যের অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ অনুষ্ঠানটি লালভাই দলপতভাই জাদুঘর, অভিষ্কর একাডেমি অফ পারফর্মিং আর্টস এবং ইনটেক আহমেদাবাদের সহযোগিতায় আইসিসিআর কর্তৃক যৌথভাবে প্রদর্শিত হয়।
অনুষ্ঠানে পরিবেশিত হয় পূর্ব ভারতের সাঁওতাল নৃত্য এবং গুজরাটের তিমলি ও মোটা চান্ডলা মেওয়াসি নৃত্য অবির্ভাব ও মেওয়াসি নৃত্যদলের প্রাণবন্ত উপস্থাপনার মধ্যে দিয়ে।
সাঁওতাল নৃত্য, ভারতের প্রাচীনতম উপজাতীয় নৃত্যরূপগুলির অন্যতম। ঝাড়খণ্ড, বিহার, ওড়িশা ও বাংলার সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর জীবনে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে প্রকৃতি, কৃষিকাজ ও উৎসবের সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত। ছন্দময় দলবদ্ধ ভঙ্গি ও মাটির সঙ্গে একাত্মতা এই নৃত্যের মূল সুর। সাঁওতাল নৃত্য পরিবেশনার নৃত্য নির্মান করেন বিশিষ্ট ভরতনাট্যম নৃত্যশিল্পী ও গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাসনা (স্কুল অব পারফর্মিং আর্টস) বিভাগের অতিথি শিক্ষক শর্মিষ্ঠা সরকার, যিনি নৃত্য নিবেদনে মনোমুগ্ধকরভাবে সৃজনশীল ব্যাখ্যার সঙ্গে ঐতিহ্যের সততা বজায় ও অটুট রেখেছেন।
অপরদিকে, গুজরাটের আদিবাসী অঞ্চলের দুই অসাধারণ নৃত্যরূপ মঞ্চে প্রদর্শিত হয়। তিমলি নৃত্য, যার উৎপত্তি গ্রামীণ কৃষি সমাজে, মূলত হোলি উৎসবে পরিবেশিত হয় বৃত্তাকার ছন্দে এবং উল্লাসে ভরা ভঙ্গিমায়।
অন্যদিকে, মোটা চান্ডলা মেওয়াসি নৃত্য, যা মেওয়াসি জনগোষ্ঠীর আচার, উপাসনা ও সাম্প্রদায়িক উৎসব হিসেবে পরিবেশিত হয়ে আসছে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে, যার শক্তিশালী ঢোলবাদ্য ও মাটির টানমাখা ভঙ্গি উপজাতীয় জীবনের সংগ্রাম ও গর্বকে প্রতিফলিত করে। এই দুই নৃত্যের নৃত্য নির্মান করেন গোকুলেশ, প্রয়াত বচুভাইয়ের পুত্র, যিনি মেওয়াসি সংস্কৃতির এক নিবেদিতপ্রাণ রক্ষক।
ঐতিহ্যবাহী পোশাক, উচ্ছ্বাসভরা ছন্দ এবং প্রাচীন ভঙ্গিমা উপস্থিত দর্শকদের যেন ফিরিয়ে নিয়ে গেল ভারতের উপজাতীয় জনজীবনের অন্তরে, জাগিয়ে তোলে গর্ব ও আবেগের সঞ্চার। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন লালভাই দলপতভাই মিউজিয়ামের পরিচালক সুজাতা পারসাই, আইসিসিআর আহমেদাবাদ সাব-জোনালের পরিচালক সুভাষ সিংহ।
সমন্বয় শুধু একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নয়, বরং ভারতের অদৃশ্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণের এক ঐতিহাসিক প্রয়াস বটে, যা মনে করিয়ে দেয় আদিবাসী নৃত্য শুধুই শিল্প নয়, এটি প্রতিরোধ ও স্মৃতির বাহক, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে বয়ে আনা মাটির জ্ঞান, আচার ও আত্মার সুরক্ষক।
লেখা: শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ, সাংবাদিকতা ও চলচ্চিত্র পরিচালনা বিভাগ, গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয়, ভারত (আইসিসিআর বৃত্তিপ্রাপ্ত)