এএইচএম কাউছার: ৫ আগস্টের পর অনেকেই ভেবেছিলেন, বাংলাদেশের রাজনীতির মাঠে আসবে নতুন চিন্তাধারা। প্রতিহিংসা, নেতিবাচক মনোভাব, কাদা ছোড়াছুড়ি, দখলদারিত্ব ও চাঁদাবাজি বন্ধ হয়ে রাজনৈতিক দলগুলো দেশের উন্নয়নে ঐক্যবদ্ধ হবে। মানুষ আশা করেছিল, ক্ষমতার দ্বন্দ্ব নয়, বরং জনস্বার্থই হবে রাজনীতির মূল চালিকাশক্তি। মনমানসিকতা পরিবর্তন আসবে। বিপরীতে দেশের চেয়ে দলবাজি চর্চা হচ্ছে বড়।
সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা ছিল, রাস্তা বন্ধ করে সভা-সমাবেশের অবসান ঘটবে। সরকারি অফিসে অনিয়ম ও দুর্নীতি রোধে যৌথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
যানজট নিরসন ও ফুটপাত দখলমুক্ত করতে কার্যকর ব্যবস্থা আসবে। সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে রাজনৈতিকভাবে শক্ত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। অর্থনীতিকে চাঙা করতে নতুন কৌশল নির্ধারণ করা হবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও ক্রীড়ার উন্নয়নে ধারাবাহিক কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। সিটি করপোরেশন ও পৌর এলাকায় পরিচ্ছন্নতা অভিযানে রাজনৈতিক দলগুলো জনসচেতনতা তৈরি করবে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি হবে আরও দৃঢ়। বেকারত্ব দূরীকরণে পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
কিন্তু বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা, এক বছর কেটে গেলেও সংস্কার নিয়ে কার্যকর কোনো আলো দেখা যাচ্ছে না। বরং রাজনৈতিক দলগুলো এখনো নিজেদের মধ্যে বিভক্ত। বিরোধী দলগুলো একে অপরের বিরুদ্ধে ধাক্কাধাক্কি, কাদা ছোড়াছুড়ি ও অভিযোগের মধ্যে দিন পার করছে। সরকারি অফিসে অনিয়ম রোধের পরিবর্তে সেখানে অদৃশ্য শক্তির দাপট বেড়েছে। যানজট, ফুটপাত দখল, সড়ক দুর্ঘটনা ও অর্থনৈতিক স্থবিরতা সবকিছুই আগের মতো থেকে গেছে।
মানুষের প্রশ্ন- কে নেবে দায়িত্ব? সাধারণ মানুষ এখন প্রশ্ন করছে রাজনৈতিক দলগুলো কি সত্যিই দেশের উন্নয়নের জন্য কাজ করছে, নাকি ক্ষমতার দ্বন্দ্বেই নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখবে?
বাংলাদেশের জন্য এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল রাজনীতিকে প্রতিহিংসা থেকে মুক্ত করে উন্নয়নের পথে ফিরিয়ে আনা। এই পরিবর্তন কেবল রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব নয়, বরং পুরো জাতির জন্য একটি কঠিন পরীক্ষা।
তবে মতামতে প্রকাশে স্বাধীনতা বেড়েছে। মুক্ত স্বাধীন মত প্রকাশ করতে পাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যার যার মতামত তুলে ধরতে দেখা যাচ্ছে। যা আগে ছিল না। কেউ মুক্ত স্বাধীন মতপ্রকাশ করলে ট্যাগিং করা হত, বিভাজন সৃষ্টি করত৷ হয়রানি করত। যা ছিল জগন্য কাজ।
লেখক: রাজনৈতিক বিশ্লেষক, সাংবাদিক, চট্টগ্রাম।