ঢাকার উপকণ্ঠে এক ভাঙাচোরা ভাড়া বাসায় স্ত্রী ও ৫ বছরের ছেলেকে নিয়ে থাকতেন আসিফ মাহমুদ। এক সময় ব্যাংকের ক্যাশ অফিসার ছিলেন, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এক প্রতারণামূলক মামলায় মিথ্যা ভাবে জড়িয়ে পড়েন। যদিও পরে নির্দোষ প্রমাণিত হন, চাকরি ফিরে পাননি। এরপর শুরু হয় জীবন যুদ্ধের এক নতুন অধ্যায়।
অর্থকষ্টে স্ত্রীর সাথে সম্পর্কের টানাপোড়েন বাড়তে থাকে। দিনের পর দিন কাজের খোঁজে ঘুরে বেড়ানো, আর রাতে এসে সন্তানের মুখ দেখে নিজেকে সান্ত্বনা দেওয়া – এটাই তার রুটিন হয়ে দাঁড়ায়। স্ত্রীর ধৈর্যও ফুরিয়ে যায়। এক দিন সে সন্তানকে রেখে চলে যায়। এখন শুধু আসিফ আর তার ছোট্ট ছেলে রাহিম।
আসিফ সিদ্ধান্ত নেন – এবার জীবনকে বদলাতে হবে। পকেটে মাত্র ৩০ টাকা। হঠাৎ একদিন রাস্তায় একজন ধনী ব্যক্তির গাড়ি দেখে প্রশ্ন করেন, “আপনি কীভাবে এতো কিছু অর্জন করলেন?” লোকটি হেসে বলেন, ‘‘আমি একজন সফটওয়্যার প্রোগ্রামার, আগে আমিও কিছুই ছিল না।’’ সেদিনই আসিফ সিদ্ধান্ত নেন, সে সফটওয়্যার শিখবে।
দুপুরে রিকশা চালিয়ে, রাতে কোচিং সেন্টারে গিয়ে কোড শেখা শুরু করে সে। দিনের পর দিন না খেয়ে ছেলেকে একবেলা খাইয়ে নিজে উপোস করে। অনেক অপমান, অবহেলা, ঘুমহীন রাত, ঠান্ডায় কাঁপতে থাকা দিন পার করে-একদিন একটি নামী আইটি কোম্পানিতে চাকরির ইন্টারভিউ দেয়।
ইন্টারভিউ প্যানেলের একজন জিজ্ঞেস করে, “তোমার তো কোনো ডিগ্রি নেই, আমরা কেন তোমাকে নেব?”
আসিফ চোখে জল নিয়ে বলে, “ডিগ্রি আমার নেই, কিন্তু যে কেউ ৩০ টাকায় উঠে এসে এখানে বসে থাকতে পারে, তাকে আপনি সুযোগ না দিয়ে কীভাবে বিচার করবেন?”
এক সপ্তাহ পর – চাকরিটা পেয়ে যায়।
বছর পাঁচেকের মধ্যেই আসিফ মাহমুদ নিজেই একটি স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠা করেন: “রাহিম টেক সলিউশনস”, তার ছেলের নামে। সেই প্রতিষ্ঠান আজ বহু কর্মসংস্থানের উৎস।
আজ আসিফ একটি বড় অফিসে বসে তার জীবনের প্রথম সফর মনে করে- আর জানালার ফাঁকে শেষ বিকেলের রোদে তাকিয়ে দেখে ছেলেটা ছুটে আসছে, হাতভর্তি হাসি আর চোখভর্তি ভালোবাসা নিয়ে।
জীবনের সবচেয়ে অন্ধকার সময়ও হতে পারে নতুন সূর্যোদয়ের প্রস্তুতি। সাহস আর আত্মবিশ্বাস থাকলে কিছুই অসম্ভব নয়।
গল্পকার: আসিফ মাহমুদ