চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম নগরীতে ব্যাটারি রিকশা ও ইজিবাইক জব্দ হয়রানি বন্ধসহ ৮ দফা দাবিতে রিকশা, ব্যাটারি রিকশা- ভ্যান ও ইজিবাইক সংগ্রাম পরিষদ চট্টগ্রাম জেলা শাখার পক্ষ থেকে নগরীর ট্রাফিক ডিসি (বন্দর – পশ্চিম) বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) দুপুরে নগরীর আগ্রাবাদস্থ ট্রাফিক অফিসে এই স্মারকলিপি পেশ কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন ইজিবাইক সংগ্রাম পরিষদ চট্টগ্রাম জেলা শাখার আহ্বায়ক আল কাদেরী জয়, সদস্য সচিব মনির হোসেন, সদস্য মোহাম্মদ মাসুদ, বন্দর থানার সদস্য সাইফুল ইসলাম, মোহাম্মদ মনির, ডবলমুরিং থানা শাখার আহ্বায়ক আহমদ জসীম, সদস্য মিরাজ উদ্দিন, পতেঙ্গা থানা শাখার সদস্য মোহাম্মদ সোহেল, জামাল উদ্দিন, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট চট্টগ্রাম জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আকরাম হোসেনসহ বিভিন্ন এলাকার নেতৃবৃন্দ।
এ সময় নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘‘সারাদেশে প্রায় ৫০-৬০ লাখ চালক-মালিকসহ তাদের পরিবার পরিজন মিলে কয়েক কোটি ব্যাটারিচালিত রিক্সা, ইজিবাইক চালনা এবং আনুষঙ্গিক নানা কাজের উপর নির্ভর করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে এবং বিভিন্ন জায়গায় এটা সাধারণ মানুষের একমাত্র বাহন। এই রিক্সা ভ্যান ও ইজিবাইক যাত্রী পরিবহন, পণ্য পরিবহন এমনকি পরিবেশ উপযোগী পরিবহনের ক্ষেত্রে দেশের সর্বত্র ব্যবহৃত হয়। বিদ্যুৎ চালিত বলে এসব বাহন শব্দ দূষণ কিংবা পরিবেশ দূষণ করে না। ছোট ছোট গলিপথে চলাচল করতে পারে এবং ভাড়া কম বলে এই সব বাহন দ্রুত সারা দেশে প্রয়োজনীয় ও জনহিত বাহনে পরিণত হয়েছে। ২০১৫ সালে হাইকোর্ট বাংলাদেশে ২২টি মহাসড়কে ইজিবাইক চলাচলে অন্তর্বর্তী যে নিষেধাজ্ঞা দেয়, তার প্রেক্ষিতে সংক্ষুব্ধ কর্তৃপক্ষ সুপ্রিম কোর্টের আপীল বিভাগের রায় পুনঃবিবেচনার জন্য আপীল করে। তারই প্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে ও সদস্যের কমিটি রায়টি সংশোধন করে শুধুমাত্র মহাসড়কে চলতে পারবে না মর্মে আদেশ দেন। তার ফলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাস্তায় ইজিবাইক চলাচলে আর কোনো বাধা নেই।সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় ‘থ্রি হইলার ও সমজাতীয় মোটর যানের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা ২০২১’ খসড়া অনুমোদন চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এছাড়া সম্প্রতি এসব ব্যাটারিচালিত যানবাহনের শৃঙ্খলা ও চলাচলে “বৈদ্যুতিক থ্রি হুইলার ব্যবস্থাপনা নীতিমালা ২০২৫” এর খসড়া নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। এই নীতিমালা আলোচনায়ও ব্যটারিচালিত যানবাহনের গুরুত্ব ও জনহিতকর বিষয়ও স্বীকার করে নেয়া হয়েছে।’
তারা আরও বলেন, ‘কিন্তু সম্প্রতি সময়ে চট্টগ্রামে কিছু পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যার ফলে এসব যানবাহনের চালক,মালিকসহ সংশ্লিষ্ট সকলকেই হয়রানি ও জুলুমের শিকার হতে হচ্ছে। অনেকদিন ধরেই চট্টগ্রামে ব্যাটারিচালিত যানবাহনের উপর প্রশাসনিক নানান দমন-পীড়ন ও বিমাতাসুলভ আচরণ পরিলক্ষিত হচ্ছে। শৃঙ্খলা তৈরির নামে নির্বিচারে গাড়ি জব্দ করা হচ্ছে। এমনকি রাতের বেলায় ও গলির ভেতর থেকেও গাড়ি আটক করা হচ্ছে। এই গাড়িগুলো ২১ দিন ধরে রাখার বিধান শুধু নয় ৭৫০ টাকা রেকার বিলের সাথে অতিরিক্ত ২৫০ টাকা জরিমানা আরোপ করা হচ্ছে। ইদানীং পতেঙ্গা,বন্দর,ডবলমুরিংসহ বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ অভিযানেের নামে চালকদের মারধর পর্যন্ত করার ঘটনা ঘটেছে। শুধু তাই সাধারণ যাত্রী সেজে গাড়িও আটকে রাখা হয়েছে। এ অবস্থায় আমরা ট্রাফিক আইন এবং সাধারণ নিরাপত্তা চেয়ে থানা কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করতে চাইলে সেখানেও অসহযোগিতার সম্মুখীন হই। তাই শহরে ট্রাফিক শৃঙ্খলা, নিরাপত্তা এবং হয়রানি বন্ধে প্রশাসনের কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান পরবর্তী দেশে শাসনকাঠামোয় পরিবর্তন আসলেও সিংহভাগ সাধারণ চালক, শ্রমিক ও মেহনতি মানুষ তাদের সমস্যা সংকটের নিরসন ঘটে নি। সড়কে চলাচলের সুযোগ দেয়ার নামে এইসব ব্যাটারিচালিত যানবাহনের চালক মালিকদের কাছ থেকে নানাভাবে চাঁদা আদায় করা হয়েছে। বর্তমানেও বিভিন্নভাবে এই চাঁদাবাজি যেন তৈরি না হয় তা লক্ষ্য রাখা দরকার। একইসাথে কোথাও আবার এসব বাহন পুলিশের পক্ষ থেকে গুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে এবং জব্দ বা ডাম্পিং করা হচ্ছে। ফলে কষ্টার্জিত জাতীয় সম্পদ যেমন বিনষ্ট হচ্ছে, তেমনি দরিদ্র চালক মালিকসহ সংশ্লিষ্টরা অসহায় হয়ে পড়ছে।এর সুষ্ঠু প্রতিকারের পাশাপাশি আমরা আশা করি ব্যাটারিচালিত যানবাহনে রেজিস্ট্রেশন, আধুনিকায়ন ও নীতিমালা চূড়ারকরণ ও বাস্তবায়ন নেওয়া হলে সড়কে শৃঙ্খলা ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে।
ট্রাফিক প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্মারকলিপি গ্রহণ করেন ডিসি (ট্রাফিক) কবির আহমেদ। এই সময় অতিরিক্ত কমিশনার (এডিসি) মাসুদ, টিআই মশিউর রহমানসহ অন্যান্য কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।