চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের আয়োজনে ‘প্রবাসীর অধিকার, আমাদের অঙ্গীকার‘ ও ‘বৈষম্যহীন বাংলাদেশ, আমাদের সবার’ স্লোগানে ‘দক্ষতা উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের জন্য পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর সাথে জনসংযোগ’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার (৬ মে) মঙ্গলবার সকাল ১১টায় চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজের সম্মেলন কক্ষে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
চট্টগ্রাম জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের সহকারী পরিচালক মহেন্দ্র কুমার চাকমার সভাপতিত্বে ও হযরত শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জহিরুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. কামরুজ্জামান। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ-কোরিয়া কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (বিকেটিটিসি) অধ্যক্ষ প্রকৌশলী পলাশ কুমার বড়ুয়া ও মহিলা টিটিসির অধ্যক্ষ প্রকৌশলী আশরিফা তানজীম।
সরকারি-বেসরকারি দপ্তরের কর্মকর্তারা সেমিনারে মতামত ব্যক্ত করেন। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মহেন্দ্র কুমার চাকমা। বিভিন্ন জিও-এনজিওর প্রতিনিধিরা সেমিনারে অংশ নেন।
সেমিনারে মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘দেশের অর্থনীতির মেরুদন্ড রেমিটেন্স। প্রবাসী কর্তৃক প্রেরিত রেমিটেন্স দেশে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম পন্থা। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখছে। দক্ষতা উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের জন্য তরুণ প্রজন্মেও জন্য সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষার বিকল্প নেই। উন্নয়নের জন্য দক্ষতার প্রয়োজন আর দক্ষতার উন্নয়ন হলে কর্মসংস্থান বাড়বে। পাশাপাশি কোম্পানীরও উৎপাদন বাড়বে। এ জন্য প্রযুক্তির মাধ্যমে দক্ষতা অর্জন করতে হবে।’
জনগণকে সচেতন করতে বিভিন্ন স্কুল-কলেজে দক্ষতা উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান বিষয়ে সভা-সেমিনারের তাগিদ দেন তিনি।
মো. কামরুজ্জামান আরও বলেন, ‘দেশের অর্থনীতি সচল রাখতে প্রবাসীদের ভূমিকা অপরিসীম। দেশের সব সেক্টরে আমাদের লোক প্রয়োজন। স্বাবলম্বী হতে হলে দক্ষতা অর্জন অবশ্যই জরুরি। বিপদে পড়ে যাতে কেউ বিদেশ না যায়, সে ব্যাপারে আমাদেরকে সচেতন হতে হবে। দেশে ও বিদেশে কোন প্রবাসী যাতে কোন রকম হয়রানির শিকার না হন, কিভাবে তাদের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়, সে ব্যাপারে আমাদেরকে আরো সর্তক থাকতে হবে। ১৭ কোটি মানুষের দেশে মাত্র দেড় কোটি লোক বিদেশ থাকেন। কর্মক্ষেত্রে পুরুষের পাশাপাশি নারী গোষ্ঠীকে কারিগরি শিক্ষায় সম্পৃক্ত করতে পারলে আমরা পিছিয়ে থাকবো না। আগামীতে কাঙ্খিত ও কারিগরিভিত্তিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে ব্যাপক পরিকল্পনা নিতে হবে।’
সেমিনারে অন্য বক্তারা বলেন, ‘দালালদের খপ্পরে না পড়ে যারা বিদেশ যেতে ইচ্ছুক তারা ভালভাবে বুঝে শুনে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ নিয়ে দক্ষ হয়ে সেই দেশের ভাষা শিখে আইন কানুন মেনে বিদেশ গেলে মর্যাদা ও অধিক বেতন আদায় করতে পারে।’
প্রবাসীদের নানা সমস্যা ও তা সমাধানের উপায় এবং দেশের জিডিপিতে রেমিট্যান্সযোদ্ধাদের ভূমিকার সম্ভাবনা নিয়ে আলোকপাত করেন বক্তারা।
বক্তারা আরও বলেন, ‘প্রবাসীরা যেরূপ তাদের কষ্টার্জিত রেমিটেন্স দেশে পাঠিয়ে এই দেশকে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, সে রকম সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন না। বিদেশে দক্ষ শ্রমিক প্রেরণের মাধ্যমে রেমিটেন্স আরও বহু গুণ অর্জন করা সম্ভব। এক্ষেত্রে দক্ষ জনশক্তি গঠনে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।’
মহেন্দ্র কুমার চাকমা জানান, ‘এ অফিসের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ নিয়ে চলতি ২০২৫ সালের মার্চ মাসে নারী-পুরুষ মিলে ১০ হাজার ৮৬ জন বিদেশ গেছে এবং মার্চ মাসে বাংলাদেশ থেকে বিদেশ গেছে ৩ লাখ ৩৭ হাজার ৫৮ জন।তার মধ্যে পুরুষ ৩ লাখ ১৫ হাজার ৯৯৩ জন ও মহিলা ২১ হাজার ৬৫ জন। চলতি সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশে রেমিটেন্স এসেছে ৪ হাজার ৭১২ দশমিক ৭৭ মিলিয়ন ডলার। ডিইএমও চট্টগ্রাম থেকে প্রবাসে যাওয়ার উদ্দেশ্যে গত মার্চে রেজিস্ট্রেশন করেছিল ৫ হাজার ৬৫৬ জন, ফিঙ্গার দিয়েছে ৩ হাজার ৮২৩ জন, স্মার্ট কার্ড পেয়েছে ২ হাজার ৩৩৭ জন এবং পিডিও ১ হাজার ৯৮৩ জন। এছাড়াও চট্টগ্রাম জেলায় বিকেটিটিসি, মহিলা টিটিসিসহ অন্য টিটিসিগুলো অভিবাসন প্রত্যাশী কর্মীদের প্রাক-বর্হিগমন প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন।