চট্টগ্রাম: রজভীয়া নূরীয়া কমিটি বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় পরিষদের উদ্যোগে পীরে তরিক্বত আল্লামা মুহাম্মদ আবুল কাশেম নূরীর (মু. জি. আ) আহবানে শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বিকালে চট্টগ্রাম সিটির লালদিঘীর চত্বরে ১৫তম যৌতুক ও মাদকবিরোধী মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আন্জুমানে রজভীয়া নূরীয়া ট্রাস্টের প্রেসিডেন্ট ও আহলে সুন্নাতের কেন্দ্রীয় মহাসচিব আন্তর্জাতিক মুফাস্সিরে কুরআন পীরে তরিক্বত আল্লামা মুহাম্মদ আবুল কাশেম নূরীর সভাপতিত্বে মহাসমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘যৌতুক দেয়া-নেয়া দেশের প্রচলিত আইনে মারাত্মক ঘৃণ্য অপরাধ। যৌতুক দিতে না পেরে দেশে প্রতিদিন শত শত দরিদ্র পরিবারে ঘোর অমানিশা নেমে আসছে। যৌতুকের অভিশাপ ও গ্লানি হতে দরিদ্র পরিবারগুলোকে বাঁচাতে আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে বর্তমান সরকার বদ্ধপরিকর।’
তিনি আরো বলেন, ‘যৌতুক, মাদক, নারী ও শিশু নিপীড়ন থামাতে সম্মিলিত কণ্ঠে ‘না’ বলুন। সামাজিক এ দুষ্টক্ষতের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলুন।’
এ সামাজিক ব্যাধিগুলো হতে পরিত্রাণ পেতে দেশের আলেম, ইমাম সমাজ ও পীর মাশায়েখসহ সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্বশীল ও অগ্রণী ভূমিকা পালনের আহবান জানান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম।
তিন বলেন, ‘আবুল কাশেম নূরী ঈমানি ও সামাজিক দায়িত্ববোধ হতে চট্টগ্রাম থেকে যৌতুক, মাদক, জঙ্গিবাদ ও নারী নিপীড়ন বিরোধী যে দূর্বার আন্দোলন গড়ে তুলেছেন, তা আজ দেশব্যাপী ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। এ জন্য তাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মানিত করা ও স্বীকৃতি দেয়া প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।’
সমাবেশে উদ্বোধক ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) প্রশাসক খোরশেদুল আলম সুজন।
তিনি বলেন, ‘আবুল কাশেম নূরীর মত দেশের আলেম, পীর ও উলামা মাশায়েখ যৌতুক মাদকের বিরুদ্ধে সোচ্চার হলে আশাতীত সুফল মিলতে পারে। যুব তরুণদের বিপদগামিতা রুখতে বড়দেরকেও আজ দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে।’
সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন বীরমুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনুছ, চট্টগ্রাম জেলা দায়রা জজ পিপি এ্যাডভোকেট আব্দুর রশিদ, নাফিস স্টীলসের স্বত্বাধিকারী মুহাম্মদ নঈমুল ইসলাম পুতুল, ব্যবসায়ী মুহাম্মদ আলী হোসেন আরিফ, আন্জুমানে রজভীয়া নূরীয়া ট্রাস্টের জেনারেল সেক্রেটারী আব্দুর রশিদ দৌলতী। মূখ্য আলোচক ছিলেন অধ্যাপক মুহাম্মদ মাসুম চৌধুরী। স্বাগত বক্তব্য দেন প্রস্তুতি কমিটির আহবায়ক মাহমুদুল হক রাজিব। যৌতুক ও মাদকবিরোধী ১৫ দাবি ও প্রস্তাবনা পাঠ করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মুহাম্মদ মাছুমুর রশিদ কাদেরী। মহাসমাবেশে সঞ্চালনায় ছিলেন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব মুহাম্মদ জাহিদুল হাসান রুবায়েত, মুহাম্মদ মিনহাজ উদ্দিন সিদ্দিকী ও মুহাম্মদ আয়ুব তাহেরী।
মহাসমাবেশে বক্তারা যৌতুকমুক্ত বিয়ের প্রণোদনা হিসেবে সরকারিভাবে ‘ম্যারেজ ফান্ড’ গঠন ও চাকরিতে এসব যুবকদের অগ্রাধিকার দেয়া ও অস্বচ্ছল গরিব পরিবারের মেয়েদের বিবাহ সহায়তা দিতে সরকারিভাবে বিশেষ তহবিল গঠন করার দাবি জানান।
মুহাম্মদ মাসুম চৌধুরী বলেন, ‘যৌতুক, মাদক, জঙ্গিবাদ আজ দেশের জাতীয় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন সামাজিক দুষ্টক্ষত নির্মূলে দেশজুড়ে সামাজিক জাগরণ গড়ে তুলতে সাবাইকে আবুল কাশেম নূরীর পাশে দাঁড়ানো দরকার। মসজিদে ওয়াজ মাহফিলে ইমাম ও আলেম সমাজ যদি ওই সমস্যাগুলোর ব্যাপারে মানুষকে সচেতন করেন, তবে অচিরেই সুফল মিলবে।’
আব্দুর রশিদ বলেন, ‘যে দায়িত্ব সরকার ও সুশীল সমাজ পালন করার কথা, তা আবুল কাশেম নূরী একাই পালন করে যাচ্ছেন। ফলে, তিনি বরেণ্য সর্বমহলে সমাদৃত গণ্য হবেন। যৌতুক, মাদক, জঙ্গিবাদ এবং নারী-শিশু নিপীড়ন আজ সামাজিক ব্যাধি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা এর বিরুদ্ধে সজাগ ও সোচ্ছার না হলে বিদ্যমান পরিস্থিতি কখনো বদলাবে না।’
সংগঠক মুহাম্মদ নঈমুল ইসলাম পুতুল বলেন, ‘যুব তরুণরা আজ নানাভাবে অবক্ষয়ের শিকার। মাদক পণ্যে আজ সয়লাব। হাত বাড়ালেই মিলছে প্রাণঘাতী নানা ধরনের মাদকপণ্য। সরকারকে মাদকের উৎসে হাত দিতে হবে। সীমান্তে কড়া নজরদারি করে মাদক পণ্য যাতে দেশে ঢুকতে না পারে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।’
মাদক, যৌতুক, জঙ্গিবাদ, নারী ও শিশু নিপীড়নের বিরুদ্ধে যুগোপযোগী প্রত্যাশিত সামাজিক আন্দোলন সূচনার জন্য তিনি আবুল কাশেম নূরীর ভূমিকার প্রশংসা করেন এবং তাকে অবিলম্বে রাষ্ট্রীয় পদকে ভূষিত করতে সরকারের প্রতি দাবি জানান।
মুহাম্মদ আলী হোসেন আরিফ বলেন, ‘আবুল কাশেম নূরীর এ যৌতুক ও মাদকবিরোধী আন্দোলন দেশকে আজ প্রবলভাবে নাড়া দিয়েছে। দেশজুড়ে ব্যাপক জনসচেতনতা তৈরি করতে তিনি সক্ষম হচ্ছেন। যেহেতু তার নিয়ত বিশুদ্ধ ও লক্ষ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে গণমুখী। সবাইকে আজ তার সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে এসব সামাজিক অনাচার রুখে দিতে হবে।’
যৌতুক ও মাদকবিরোধী আন্দোলনের রুপকার আবুল কাশেম নূরী বলেন, ‘আজ আমার চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে যৌতুক, মাদক, জঙ্গিবাদসহ নারী ও শিশু নিপীড়নের বিরুদ্ধে আমি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছি। সবাই আমার পাশে দাঁড়ালে অচিরেই দেশ এসব সামাজিক দুষ্টক্ষত থেকে নিষ্কৃতি পেতে পারে।’
তিনি সমবেত জনতার প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
শেষে যৌতুক ও মাদকবিরোধী বিশাল র্যালি লালদিঘী, আন্দরকিল্লা, চেরাগী পাহাড় হয়ে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে এসে সমাপ্ত হয়। পরে দেশ ও জাতির শান্তি সমৃদ্ধি কল্যাণ এবং ফিলিস্তিনসহ নিপীড়িত মানবতার কল্যাণ কামনায় মুনাজাত পরিচালনা করেন আবুল কাশেম নূরী (মু. জি. আ)। মহাসমাবেশে উপস্থিত ছিলেন মুহাম্মদ মুছা সওদাগর, আবু ছালেহ আঙ্গুর, মুহাম্মদ মিঞা জুনাইদ, মুহাম্মদ জাকারিয়া, কুতুবুদ্দীন শাহ্ নূরী, মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর ওসমান, মুহাম্মদ আলমগীর, মাওলানা আব্দুল কাদের রজভী, এসএম ইকবাল বাহার, মাওলানা এনামুল হক এনাম, মাওলানা আবুন নুর মুহাম্মদ হাস্সান নূরী, শায়ের মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন কাদেরী, মুহাম্মদ জাহেদ, মুহাম্মদ জাকির হোসেন, মুহাম্মদ নাসির উদ্দিন, নিজাম উদ্দিন চৌধুরী, আবু ছালেহ মুহাম্মদ সাফওয়ান নূরী, আরাফাত আলী নূরী, আব্দুশ শুক্কুর।