ঈশ্বরগঞ্জ, ময়মনসিংহ: দেখতে সুদর্শন। নিজের সুঠাম দেহ ও সৌন্দর্যকে কাজে লাগিয়ে বেছে নেয় প্রতারণার রাস্তা। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়লেও সরকারি কর্মকর্তা ও পুলিশ পরিচয় দিত। প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ে করে লুটে নিত টাকা ও মূল্যবান সামগ্রী। পিকআপ ভ্যানচালক থেকে এভাবে প্রতারক হয়ে ওঠা মনির মিয়া পুলিশের উপ পরিদর্শক (এসআই) পরিচয়ে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের এক নারীকে বিয়ে করেছিল। তবে, এতে এলাকাবাসীর সন্দেহ হয়।
সংবাদ পেয়ে পুলিশ গিয়ে যাচাই করলে ধরা পড়ে মনিরের প্রতারণার ব্যাপারটি। মঙ্গলবার (৫ ফেব্রুয়ারি) মামলা দিয়ে আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয় বলে ঈশ্বরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ মাজেদুর রহমান জানিয়েছেন।
এর পূর্বে, ঈশ্বরগঞ্জের এক স্বামী পরিত্যক্ত নারীকে শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারি) দশ লাখ টাকা কাবিনে বিয়ে করে সে। এফিডেভিটে ঠিকানা উল্লেখ করা হয় নেত্রকোনার সাতপাই। এলাকার আবদুর রহমানের ছেলে সে।
যদিও, মনিরের মা মঞ্জুরা খাতুন দাবি করেছেন, তাদের বাড়ি পূর্বধলা উপজেলার হিরণপুরের মাতাঙ্গ গ্রামে। তিন বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে সে সকলের ছোট। ভৈরবে থেকে পিকআপভ্যান চালাত। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, মনির এসআই পরিচয়ে বিয়ে করে ঈশ্বরগঞ্জে অবস্থান করলে স্থানীয়দের সন্দেহ হয়। জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের পোশাক পরা ছবি ও ভিজিটিং কার্ড দেখায় সে। তবে, বিশ্বাসযোগ্য না হওয়ায় থানায় জানায়। পরে, এসআই ওমর ফারুকের নেতৃত্বে পুলিশের সদস্যরা রোববার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাতে তার পরিচয় পত্র যাচাই করে। সে জানায়, ভৈরব থানায় কর্মরত। কিন্তু, যাচাইয়ের পর ভুয়া প্রমাণিত হয়। পরে তাকে পুলিশ থানায় নিয়ে যায়।
এ দিকে, ঘটনার পর ভুক্তভোগী নারীও বাড়ি থেকে সরে গেছে। তার মা জানিয়েছেন, কয়েক মাস ধরে মোবাইল ফোনে মেয়েটির সাথে কথা হত মনিরের। তারা আদালতে বিয়ে করে বাড়িতে এসে হাজির হয়। পুলিশ জামাই ভেবে তাদের আপ্যায়ন করছিল। তবে, প্রতারক ভাবতে পারেননি। তিনি মনিরের শাস্তি দাবি করেন।
পুলিশ সূত্র জানায়, মনিরের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ২০১৬ সালে ময়মনসিংহ কোতোয়ালি থানায় ছিনতাই ও হত্যা, ২০২২ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে অজ্ঞান করে লুট এবং গেল বছর ঢাকা মেট্রোপলিটনের শাহআলী থানায় সরকারি কর্মকর্তা পরিচয়ে প্রতারণার অভিযোগে মামলা হয়েছে। তিনটি মামলায় নিজের জেলা নেত্রকোনা ঠিক রাখলেও ভুল তথ্য দিয়ে গ্রাম ও উপজেলার ভিন্ন ঠিকানা ব্যবহার করেছে সে। তিনটি মামলায়ই জেল খেটে বেরিয়ে ফের শুরু করে প্রতারণা।
মনিরের মা মঞ্জুরা খাতুন বলেন, ‘ছেলেডারে কষ্ট কইর্যা বড় করলেও সে আমাদের দেখে না। গেল বছর তার পিতা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। মাইয়্যার জামাইরা কিছু টেহা দিয়ে চিকিৎসা করাইছে, বাপেরেও হে দেহে নাই।’ এ সময় ছেলের অপরাধের কথা শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
ঈশ্বরগঞ্জ থানার এসআই ওমর ফারুক বলেন, ‘ভুয়া পরিচয়ে প্রতারণা ও অজ্ঞানপার্টির চক্রের সাথে কাজ করে মনির। বিয়ের ফাঁদে ফেলে টাকা-পয়সাও লুটে নেয়। দুইটি বিয়ের কথা সে স্বীকার করেছে। তার ফোন যাচাই করে দেখা গেছে, পুলিশের পোশাক পরা ছবি দেখিয়ে কাজ করে দেয়ার কথা বলে টাকা হাতিয়ে নিত সে। এখনো তথ্য গোপন করতে চাইছে।’