ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম: ভারতীয় উপমহাদেশের প্রখ্যাত অলীয়ে কামেল আধ্যাত্নিক সাধক ও হাজার হাজার পীর মশায়েখদের পথপ্রদর্শক, চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক মাইজভান্ডার দরবার শরীফের প্রতিষ্ঠাতা ও সুফিজম চর্চায় শতাব্দীর পথপ্রদর্শক গাউছুল আজম হযরত শাহছুফী মাওলানা সৈয়দ আহমদ উল্লাহ (ক.) মাইজভান্ডারীর ১১৮তম বার্ষিক ওরশের প্রধান দিবস (১০ মাঘ) বুধবার (২৪ জানুয়ারি) ফটিকছড়ির মাইজভান্ডার দরবার শরীফে মহাসমারোহে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আখেরি মোনাজাতের মধ্যে দিয়ে এটি সম্পন্ন হবে।
এ সাধক বাংলাদেশে কাদেরীয়া তরিকার অন্যতম প্রবক্তা ও পথপ্রদর্শক। যার হাত ধরে পুরো বাংলাদেশের জেলা ও উপজেলায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে শত শত খলিফা ও খানকয়ে কাদেরীয়া। এছাড়াও, বাংলাদেশের বাহিরেও ভারত, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, মায়ানমার, চীন, ভুটানসহ বহু দেশে ইসলাম ও তরিকত্ব প্রতিষ্ঠা করেছেন। এই জন্য হযরত গাউছুল আজম মাইজভান্ডারি সৈয়দ আহমেদ উল্লাহকে (ক.) শতাব্দীর পথপ্রদর্শক বলা হয়। তার এই ঐতিহাসিক ১১৮তম ঐতিহাসিক ওরশ শরিফে প্রতি বছর প্রায় অর্ধ কোটি মানুষের সমাগম ঘটে। মাইজভান্ডার দরবার শরীফ থেকে বলা হয়েছে এবারের ওরশে গেল কয়েক বছরের চেয়ে বেশি মানুষ উপস্থিত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা গেছে, মাইজভান্ডার এলাকা সর্ববৃহৎ মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। ধর্ম, বর্ণ ও গােত্র নির্বিশেষে দেশ-বিদেশের লাখ লাখ আশেক ভক্ত এই দিবস উপলক্ষ্যে মাইজভান্ডার দরবার শরীফে সমবেত হয়েছেন। তাদের প্রেম ও ভক্তিপূর্ণ অর্ঘ্যদান করছেন। বহু আশেক ভক্ত গরু, মহিষ, গয়াল, ছাগল ও মুরগীসহ যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী হাদিয়া নজরানা নিয়ে জিকির ও জুলুশ সহকারে দরবারে হাজির হয়েছেন।
মাইজভান্ডার দরবার শরীফসহ তৎসংলগ্ন এলাকা লােকে লােকারণ্য হয়ে গেছে মঙ্গলবারই (২৩ জানুয়ারি)। পথের পাশে বসেছে বাঙালি কৃষ্টির অবিচ্ছেদ্য অংশ ঐতিহ্যবাহী মাঘের মেলা। এ মেলাকে ঘিরে যেন শান্তিময় সাম্যবাদী বাঙালি জাতির সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক চেতনার অভূতপূর্ব মহাসম্মিলন ঘটেছে। আলােকসজ্জা করা হয়েছে হযরত আহমদ উল্লাহ (ক.) রওজাসহ অন্যান্য রওজা ও মঞ্জিলগুলো। ওরশে আগত আশেক, ভক্ত, মুরিদান, জায়েরীনদের সার্বিক নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য একজন ম্যাজিস্ট্রেটের পাশাপাশি ফটিকছড়ি উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ, আনসার, স্ব স্ব মঞ্জিলের স্বেচ্ছাসেবকেরা দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া, ওরশ শরীফে ক্লোজ-সার্কিট ক্যামেরা ও ভিডিও চিত্র ধারণের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক নজরদারী করা হচ্ছে।
বুধবার (২৪ জানুয়ারি) আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করবেন গাউছিয়া আহমদিয়া মঞ্জিলের সাজাদ্দানশীন সৈয়দ এমদাদুল হক মাইজভান্ডারি (ম.)। এ সময় উপস্থিত থাকবেন নায়েবে সাজ্জাদানশীন সৈয়দ ইরফানুল হক মাইজভান্ডারী (ম.)। তাছাড়া, আখেরী মুনাজাত পরিচালনা করবেন গাউছিয়া আহমদিয়া মঞ্জিলে মোন্তাজেম, সাজাদ্দানশীন সৈয়দ দিদারুল হক মাইজভান্ডারি (ম.)। আরো উপস্থিত থাকবেন নায়েবে সাজ্জাদানশীন সৈয়দ হোসেইন রাইফ নুরুল ইসলাম রুবাব মাইজভান্ডারি (ম.)। এছাড়া, সৈয়দ মনিরুল হক মাইজভান্ডারির পক্ষে পুত্ররা সৈয়দ আহমদ হোসাইন শাহরিয়ার মাইজভান্ডারি (ম.), সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন সোহেল মাইজভান্ডারি (ম.) আখেরী মুনাজাত পরিচালনা করবেন বলে জানিয়েছেন আঞ্জুমানে মোত্তাবেয়ীনে গাউছে মাইজভাণ্ডারী সচিব নাজমুল হাসান মাহমুদ।
এ দিকে, মুনাজাত পরিচালনা করবেন গাউছিয়া হক মঞ্জিলের সাজ্জাদানশীন ও সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভান্ডারি ট্রাস্টের চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. হাসান মাইজভান্ডারী (ম.), গাউছিয়া রহমান মঞ্জিলের সাজ্জাদানশীন ছৈয়দ মুজিবুল বশর মাইজভান্ডারি (ম.), গাউছিয়া মঈনিয়া মঞ্জিলের সাজাদ্দাশীন সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমদ মাইজভান্ডারি (ম.), গাউছিয়া আমিন মঞ্জিলের সাজ্জাদানশীন সৈয়দ সামশুল আরেফীন মাইজভান্ডারি (বাবুল মিয়া), গাউছিয়া গায়েবিধন মঞ্জিলের সাজ্জাদানশীন সৈয়দ আবুল মুনসুর মাইজভান্ডারি (ম.), নায়েবে সাজ্জাদানশীন সৈয়দ ইরফানুর রহমান (মিজান) মাইজভান্ডারি (ম.), গাউছিয়া সামস মঞ্জিলের সাজ্জাদানশীন সৈয়দ গোলাম মরতুজা মাইজভান্ডারি (ম.), নায়েবে সাজাদানশীন সৈয়দ আবু ছালেহ জঙ্গি মাইজভান্ডারি (ম.)।