সিনিয়র প্রতিবেদক:
চতুর্থ ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের নামের তালিকা প্রকাশ করেছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। গত মঙ্গলবার রাত ১০টায় আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তালিকা প্রকাশ করা হয়।
এতে প্রকাশ হওয়া তালিকায় চট্টগ্রাম বিভাগের কর্ণফুলী উপজেলার চরলক্ষ্যায় দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন হায়দার। কিন্তু ৮ মিনিটের মাথায় ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ অফিসিয়াল সেল’ নামক ফেসবুক পেইজ থেকে তালিকাটি মুর্হুতেই সরিয়ে দেওয়া হয়। এতে অনেকের মনে ধাক্কা লাগে সংশোধনী আসতে পারে।
যদিও শত শত নেতাকর্মী প্রকাশ হওয়া তালিকা স্যোশাল মিডিয়ায় আপলোড করে জানান দেন কর্ণফুলীর ৪ (চার) ইউনিয়ন তথা দক্ষিণ চট্টগ্রামের ২৭ ইউপিতে নৌকা প্রতীক পাওয়া প্রার্থীদের। এর কিছুক্ষণ পরেই দলীয় অফিসিয়াল সেল পেইজে সংশোধনী আসে চরলক্ষ্যা ইউনিয়নে দলীয় মনোনয়ন পান উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি মোহাম্মদ সোলেয়মান তালুকদার।
বরাবরেই অভিযোগ ছিলো মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন হায়দার গত ২০১৬ সালের ইউপি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হিসেবে অবস্থান নিয়ে ভোটে দাঁড়িয়ে মাত্র ২৭ ভোট পেয়েছিলেন। গায়ে বিদ্রোহী প্রার্থীর তকমা থাকায় পরক্ষণেই মনোনয়ন বোর্ড তাঁকে বাতিল করে নতুন প্রার্থী ঘোষণা করেন। যা পুরো কর্ণফুলীতে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অথচ, চরলক্ষ্যা ইউনিয়নের অনেকের প্রত্যাশা ছিল। তিনিই দলীয় মনোনয়ন পাবেন। তাঁর মনোনয়ন না পাওয়ার বিষয়টি এলাকার জনগণ মেনে নিলেও মানতে পারছেন না গুটিকয়েক নেতাকর্মী। তাঁদের প্রত্যাশা পূরণের জন্যই মূলত তিনি নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন।
ওদিকে, কথা ছিল এবার চরলক্ষ্যা ইউনিয়নে দলীয় মনোনয়ন পাবেন মোহাম্মদ সোলেয়মান তালুকদার, সবাই তাঁর পক্ষে কাজ করবেন। তিনিও আশাবাদী ছিলেন, শেষ পর্যন্ত চমক দেখিয়ে নৌকা মনোনয়ন পেলেন েযুবলীগ সভাপতি মোহাম্মদ সোলেয়মান তালুকদার।
স্থানীয়রা বলেন, গ্রামের অনেকেই চেয়ারম্যান হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। নাজিম উদ্দিন হায়দারও জেলা উপজেলা ও স্থানীয় সুপারিশ পেয়ে নাম কেন্দ্রে পাঠিয়েছিলেন। এখন প্রধানমন্ত্রী যাঁকে যোগ্য মনে করেছেন, তাঁকে মনোনয়ন দিয়েছেন। সবাই দলের লোক সমস্যা হবে না। ফলে প্রথমে নৌকা প্রতীক পেলেও নির্বাচন করার স্বপ্ন ভঙ্গ হচ্ছে নাজিম উদ্দিন হায়দারের। অবশ্য কেউ কেউ বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।’
দলের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, জেলা আওয়ামী লীগ মনোনয়নপ্রত্যাশী দুই দশক প্রার্থীর নাম পর্যালোচনা করে কর্ণফুলীর ৪ (চার) ইউনিয়ন থেকে ৮ জনের নাম কেন্দ্রে পাঠিয়েছে। তারা হলেন; শিকলবাহার বর্তমান চেয়ারম্যান কর্ণফুলী উপজেলা আ’লীগের সহ-সভাপতি আলহাজ্ব জাহাঙ্গীর আলম (গত বারের বিদ্রোহী), ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম ফোরকান। চরলক্ষ্যা ইউনিয়নে কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব নাজিম উদ্দীন হায়দার (গত বারের বিদ্রোহী), কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি মোহাম্মদ সোলায়মান তালুকদার। জুলধা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান চেয়ারম্যান আলহাজ্ব রফিক আহমদ (গত বারের বিদ্রোহী), কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সাবেক চেয়ারম্যান হাজী মোহাম্মদ নুরুল হক। বড়উঠান ইউনিয়নে উপজেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক হাজী রফিকউল্লাহ, উপজেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য মামুনুর রশিদের নাম।
বহু নাটকীয়তা আর সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে এবার কর্ণফুলীর চার ইউনিয়নে নৌকা মনোনয়ন পেলেন-শিকলবাহায় নৌকা মনোনয়ন পেলেন আব্দুল করিম ফোরকান, চরলক্ষ্যায় মোহাম্মদ সোলেয়মান তালুকদার, বড়উঠানে মোহাম্মদ দিদারুল আলম ও জুলধা ইউনিয়নে হাজী মুহাম্মদ নুরুল হক।
নামপ্রকাশ না করার শর্তে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র এক নেতা জানান, ‘ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে কর্ণফুলী থেকে যাদের নাম কেন্দ্রে পাঠিয়েছেন। তাদের নাম পর্যালোচনা করে দেখা যায় তাদের নামের পাশে কিংবা মন্তব্যের কলামে বিদ্রোহীদের কোন তথ্য ছিলনা। বিষয়টি অবাক করেছে মনোনয়ন বোর্ডকে। পরে সকল গোয়েন্দা প্রতিবেদন, নানা অভিযোগ, প্রকাশিত বহু সংবাদ পর্যালোচনা করে বিদ্রোহীদের নাম বাদ দিয়ে যোগ্য প্রার্থীদের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে বলে আমরা জেনেছি।’
নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, চতুর্থ ধাপে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় আগামী ২৫ নভেম্বর। মনোনয়ন বাছাই ২৯ নভেম্বর এবং প্রত্যাহার ৬ ডিসেম্বর। আর ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ২৬ ডিসেম্বর।
















