ছয় বছর পর আবারো কালুরঘাট সেতুর নতুন করে ফিজিবিলিটি স্টাডির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ফলে, এটি সিঙ্গেল ট্র্যাক রেল কাম সড়ক সেতু হবে-নাকি ডাবল ট্র্যাক রেল কাম সেতু হবে তা সমীক্ষার ওপরই নির্ভর করবে বলে জানান সেতু সংশ্লিষ্ট রেলওয়ের কর্মকর্তারা। এর ফলে আগের সমীক্ষা, সেতুর ডিজাইন, বাজেট সব কিছুই বাদ। নতুন সমীক্ষার পর নতুন ভাবে হবে সেতুর ডিজাইন, নতুন বাজেট এবং প্রকল্পের মেয়াদসহ সবকিছুই।
ইতোমধ্যে রেল ভবনে রেলপথ মন্ত্রীসহ রেলওয়ের উর্ধতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে কোরিয়ার অর্থনৈতিক উন্নয়ন সহযোগিতা তহবিল (ইডিসিএফ)এর বৈঠকে কালুরঘাট সেতুর নতুন করে ফিজিবিলিটি স্টাডির সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এর আগে রেল কর্তৃপক্ষ দুই লেনের সড়ক কাম ডুয়েল-গেজ সিঙ্গেল ট্র্যাক রেল সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। সেই অনুযায়ী প্রকল্পের ড্রয়িং-ডিজাইন, প্রকল্পের বাজেট এবং প্রকল্পের মেয়াদসহ নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু সেই উদ্যোগে বাধা সৃষ্টি করে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ। পূর্বের সমীক্ষাটিতে নদী থেকে সেতুর উচ্চতা ৭ দশমিক ৬ মিটার নেভিগেশনের ছাড়পত্র নিয়ে করা হয়েছিল। তবে এখন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের চাহিদা অনুসারে ১২ দশমিক দুই মিটার নেভিগেশন ছাড়পত্র রেখে সমীক্ষা করতে হবে। তাই নতুন সমীক্ষার সিদ্ধান্ত হয়েছে বৈঠকে।
সড়কের সঙ্গে ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন রেলসেতু নির্মাণ প্রযুক্তিগত ও অর্থনৈতিকভাবে সুবিধাজনক কিনা তা সমীক্ষার পরেই জানা যাবে বলে জানান সেতু সংশ্লিষ্ট এক প্রকৌশলী।
এই ব্যাপারে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (ব্রিজ), বর্তমানে বাংলাদেশ রেলওয়ের পরিচালক (প্রকিউরমেন্ট) এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল প্রকল্প প্রস্তুতিমূলক সুবিধার জন্য কারিগরী সহায়তা প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো. গোলাম মোস্তফা জানান, রেল ভবনে গত ১৯ মে রেলপথ মন্ত্রী মহোদয়ের উপস্থিতিতে বৈঠকে দক্ষিণ কোরিয়ার কান্ট্রি ডিরেক্টর উপস্থিত ছিলেন। ঐ বৈঠকেই কালুরঘাট সেতুর নতুন করে ফিজিবিলিটি স্টাডির সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগামী ৬ মাসের মধ্যে ফিজিবিলিটি স্টাডি শেষ করতে হবে। তারপর সেতুর ডিজাইন হবে, বাজেট হবে। এবার নতুন করে ফিজিবিলিটি স্টাডি করবে সেতুর অর্থ দাতা প্রতিষ্ঠান দক্ষিণ কোরিয়ার এক্সিম ব্যাংক। যেহেতু সেতুর উচ্চতা বেড়েছে, সুতরাং আগের ডিজাইন আর কাজে লাগবেনা। নতুন ডিজাইনে সেতুর ব্যয় কত হবে তা নতুন সমীক্ষার পর র্নিধারণ হবে।
ব্রিটিশ আমলে কর্ণফুলী নদীর উপর নির্মিত কালুরঘাট সেতুটি ব্যবহার এখন অনিরাপদ হয়ে পড়েছে। সেতুরে উভয় পাশের ডেক এবং লোহার বেড়া প্রায়ই নষ্ট হয়ে গেছে। সেতুতে তৈরী হয়েছে বড় বড় গর্ত। ফলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন হয়েক হাজার যানবাহন সীমাহীন দুর্ভোগ মাড়িয়ে চলাফেরা করছে। প্রতি বছরই কর্তৃপক্ষকে সেতুটি মেরামত করতে হয়। ১৯৩১ সালে নির্মিত এই সেতুটি মূলত একটি রেলসেতু ছিল। তবে, ৬০ এর দশকে এটিকে রেল-কাম-সড়ক সেতুতে রূপান্তর করা হয়। কালুরঘাট সেতুটি এখন কেবল বোয়ালখালী, রাঙ্গুনিয়া এবং মোহরাবাসীর দাবিতে নেই। এই সেতুটি এখন দক্ষিণ চট্টগ্রামবাসীর প্রাণের দাবিতে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে সেতুর উভয় পাশের মানুষ এই সেতু নির্মাণের দাবি করে আসছে। বোয়ালখালী-চান্দগাঁও আসনের প্রয়াত সংসদ সদস্য মাঈনুদ্দিন খান বাদল কালুরঘাট সেতু নির্মাণে জাতীয় সংসদ থেকে শুরু করে সর্বত্র সোর্চ্চার ছিলেন। একই ভাবে এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদও এই সেতু নির্মাণে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। বর্তমান রেলপথ মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনকে তিনি সরেজমিনে সেতুর অবস্থা পর্যাবেক্ষণের জন্য সেতুর উপর দিয়ে বোয়ালখালী নিয়ে গেছেন। তিনি নির্বাচনের আগে কালুরঘাট সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এলাকাবাসীকে। এজন্য তিনি সব সময় রেলপথ মন্ত্রীর সাথে যোগাযোগ রেখে চলছেন সেতুর ব্যাপারে।