কক্সবাজারের সেই আলোচিত কলাতলী ৫১ একরে অবৈধ স্থাপনার বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক)। সোমবার (২১ জুন) সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে তিনটি অবৈধ নির্মাণাধীন ভবন ভেঙে দেয়া হয়েছে।
কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সচিব (উপ সচিব) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবু জাফর রাশেদ এর নেতৃত্বে জেলা আনসারের ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সার্বিক সহযোগিতায় কক্সবাজার কলাতলী এলাকায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে এসব অবৈধ ভবন ভেঙে দেওয়া হয়।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবু জাফর রাশেদ জানান, ৩টি এক তলা বিশিষ্ট অনুমোদনবিহীন স্থাপনা ভেঙে দেয়া হয়েছে এবং বিদ্যুতের লাইন বিচ্ছিন্ন করা হয়। এ সময় তাদেরকে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ থেকে অনুমোদন নিয়ে ভবন নির্মাণ করার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়। অভিযানে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অথরাইজড অফিসার, সহকারী অথরাইজড অফিসার ও ইমারত পরিদর্শকসহ অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে: কর্নেল (অব:) ফোরকান আহমদ বলেন, কক্সবাজারকে একটি আধুনিক ও পরিকল্পিত পর্যটন হিসেবে গড়ে তুলতে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বদ্ধপরিকর। তাই পরিকল্পিত নগরী বাস্তবায়নে অবৈধ স্থাপনার বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে।
জানা যায়, কক্সবাজার সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কথিত আবাসন প্রকল্পে (আলোচিত ৫১ একর) হঠাৎ পাহাড় কেটে স্থাপনা নির্মাণের ধুম পড়েছে করোনার পরিস্থিতিকালে। গত এক বছর ধরে অনেকটা উৎসব আকারে পাহাড় কেটে স্থাপনা নির্মাণের কাজ করছে শতাধিক শ্রমিক। ইতিমধ্যে উঠে গেছে বহুতল ভবনও। অথচ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কথিত এ আবাসন প্রকল্পে পাহাড় কাটা কিংবা স্থাপনা নির্মাণে রয়েছে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা।
কথিত এ আবাসন প্রকল্পের পশ্চিম ও পূর্ব পাশে পাহাড় কেটে তৈরি করা হচ্ছে আটটি প্লট। একই সাথে কয়েকটি প্লটে নির্মাণ করা হচ্ছে বহুতল স্থায়ী স্থাপনা।
কক্সবাজার শহরের কলাতলী এলাকায় ঝিলংজা মৌজার আরএস ৮০০১ নম্বর দাগের মোট ১২৪.৩৫ একর রক্ষিত বন ও ঘোষিত প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) হতে ৫১ একর বনভূমিতে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের কর্মচারীদের জন্য স্থানীয় জেলা প্রশাসন আবাসিক প্রকল্প গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে বরাদ্দ প্রদান করে। ওই বরাদ্দ বাতিল, পাহাড় ও বনজ সম্পদ ধ্বংসের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) পাহাড় কর্তনরোধে হাইকোর্টে ১১২১০/০৬ নম্বর রিট মামলা দায়ের করে।
ওই মামলার প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ২০১১ সালের ৮ জুন বরাদ্দ বাতিল, পাহাড় বা পাহাড়ের কোনো অংশ কর্তন না করা, রক্ষিত বন এলাকায় সকল ধরনের স্থাপনা উচ্ছেদ করা এবং বন ধ্বংস না করতে আদেশ দিয়ে রায় প্রদান করে। কিন্তু আদালতের রায় যথাযথ বাস্তবায়ন না হওয়ায় ১২ জন সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ‘বেলা’ আদালত অবমাননা মামলা দায়ের করেছিল। লকডাউনের সুযোগে সেই আলোচিত কলাতলীর ৫১ একরে অবৈধ ভবন নির্মাণের হিড়িক পড়েছে।