শতবর্ষী বৃক্ষরাজি পাহাড়, টিলা ও উপত্যকায় ঘেরা বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য অনন্য প্রাকৃতিক স্থান সিআরবি ধ্বংসের পাঁয়তারা কোন ভাবেই চট্টগ্রামবাসী মেনে নেবে না। এ চট্টগ্রাম মাস্টার দা সূর্যসেনের চট্টগ্রাম। সূর্যসেনের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম তিন দিন স্বাধীন ছিল। বঙ্গবন্ধু বাঙালির মুক্তির সনদ ছয় দফা প্রথম ঘোষণা করেছিলেন এ চট্টগ্রামে।
আজ সিআরবির প্রাকৃতিক ঐতিহ্য রক্ষা করার জন্য আমরা রাজপথে নেমেছি। আমজনতা আমাদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছে এই আন্দোলনের। আমরা অন্তত: চার লাখ মানুষের স্বাক্ষর সংগ্রহ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠাবো। তিনি নিশ্চয়ই পুনর্বিবেচনা করবেন। যে নেত্রী বিশ্ব পরিবেশ রক্ষার জন্য সংগ্রাম করে চলেছেন, তিনি চট্টগ্রামের সিআরবির প্রকৃতি বিনষ্টকারী হাসপাতাল নির্মাণের প্রকল্প অবশ্যই বাতিল করবেন।
আজ সিআরবিতে নাগরিক সমাজ, চট্টগ্রাম আয়োজিত সিআরবি থেকে হাসপাতাল প্রকল্প অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার দাবিতে গণস্বাক্ষর কর্মসূচির উদ্বোধন কালে বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. অনুপম সেন এ অভিমত ব্যক্ত করেন।
নাগরিক সমাজ, চট্টগ্রামের সদস্য সচিব এডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চেওধুরী বাবুলের সভাপতিত্বে এবং যুগ্ম সদস্যসচিব এডভোকেট ইফতেখার সাইমুল চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক প্রশাসক ও মহানগর আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন বলেন, ‘আঁরা চট্টগ্রামত থাকি, সিআরবিরে ভালোবাসি। আঁরা হাসপাতলর নামে সিআরবিত কোন দোয়ান গইড়তু দিতাম ন।’ তিনি বলেন, যেদিন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কাজ করতে আসবে, সেদিন আমাদের লাশের উপর দিয়ে তাদের কাজ করতে হবে। আমরা জীবন দেবো, কিন্তু এই সিআরবি কোন বেনিয়া গোষ্ঠীকে ভাড়া দিতে দেবো না।
মহানগর আওয়ামীলীগের সভানেত্রী বিশিষ্ট নারী নেত্রী হাসিনা মহিউদ্দিন বলেন, সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ আমরা মানছি না, মনবো না। চট্টগ্রামকে আমরা প্রাচ্যের রাণী বলে জানি। আমরা লক্ষ কোটি গাছ লাগাচ্ছি, অন্যদিকে হাসপাতালের নামে সিআরবিকে ধ্বংস করার পাঁয়তারা করছি। আমরা হাসপাতাল চাই। কিন্তু যেখানে আমাদের বাচ্চারা খেলাধুলা করে, অঅমরা একটু নি:শ্বাস ফেলার জন্য ছুটে আসি, সেখানে কিছুতেই হাসপাতাল চাই না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণের এ প্রকল্প বাতিল করবেন বলেই আমাদের বিশ্বাস।
প্রফেসর ডা. ইমরান বিন ইউনুস বলেন, শয়তানের সাথে লড়াই করতে আমাদের তৈরি থাকতে হবে। সিআরবি রক্ষায় যে প্লাবন শুরু হয়েছে তাকে জন¯স্রোতে পরিণত করতে হবে। আন্দোলনের স্ফুলিঙ্গ চারদিকে ছড়িয়ে দিতে হবে।
প্রফেসর ডা. এ কিউ এম সিরাজুল ইসলাম বলেন, রেলের জায়গা বলে কোন জায়গা নেই। সব জায়গা জনগণের সম্পত্তি। চাইলেই রেল এ জায়গা দিয়ে দিতে পারে না। আমাদের বিশ্বাস আছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপর। তাঁর হাত দিয়ে পরিবেশ বিধ্বংসী কোন কাজ হতে পারে না।
একুশে পদকপ্রাপ্ত নাট্য ব্যক্তিত্ব আহমেদ ইকবাল হায়দার বলেন, একটি ধ্বংস প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে আজ আমরা একত্র হয়েছি। আমরা দেখেছি আউটার স্টেডিয়ামসহ আশেপাশে সব জায়গা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এখন হেরিটেজ খ্যাত সিআরবি ধ্বংসের পাঁয়তারা চলছে। এটা একটা বিদ্বেষমূলক কাজ হচ্ছে। এ দু:সাহস তারা কোথ্থেকে পায় তা আজ চট্টগ্রামবাসী জানতে চায়।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মনজুরুল আলম বলেন, আমাদের বিশ্বাস মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যথাসময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন। আমরা মনে করি, চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করার জন্যই সিআরবিকে ধ্বংস করার পাঁয়তারা করছে একটি মহল। ডিসি হিল ধ্বংস করার পর তাই তারা সিআরবির দিকে হাত বাড়িয়েছে।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, মহানগর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোজাফফর আহমদ, উপজেলা চেয়ারম্যান পরিষদের সভাপতি এহসান হায়দার চৌধুরী বাবুল, মিরসরাই উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান গিয়াসউদ্দিন, উত্তর জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক ইউনুস গণি চৌধুরী, জাসদ মহানগর সভাপতি বেলায়েত হোসেন, মহানগর আওয়ামীলীগ সহ সভাপতি আলতাফ হোসেন বাচ্চু, চট্টগ্রাম কর আইনজীবী সমিতির সভাপতি এনায়েত উল্লাহ খান, সাবেক ছাত্রনেতা মঞ্জুরুল আলম মঞ্জু, মহানগর শ্রমিক লীগ সভাপতি বখতেয়ার উদ্দিন খান, অপরাজেয় বাংলার কর্ণধার এনায়েতউল্লাহ খান, প্যানেল মেয়র গিয়াসউদ্দিন, প্রকৌশলী হারুনর রশীদ, যুবনেতা দেবাশীষ পাল দেবু প্রমুখ।
উপস্থিত ছিলেন, মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ডা. মাহফুজুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা মো. ইউনুচ, দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, পরিবেশ বিজ্ঞানী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইদ্রিস আলী, নারী নেত্রী জেসমিন সুলতানা পারু, মুক্তিযোদ্ধা দেওয়ান মাকসুদ, মুক্তিযোদ্ধা মহিউদ্দিন শাহ আলম নিপু, ভাস্কর অলক রায়, চবি ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মো. শাহজাহান চৌধুরী, চেম্বার পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ, শিল্পী আলাউদ্দিন তাহের, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা সাদেক হোসেন পাপ্পু, চট্টগ্রাম সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের যুগ্ম সম্পাদক মুহাম্মদ শাহজাহান, শ্রমিক নেতা আবদুল আহাদ, মহানগর যুবলীগ নেতা হাজী মো. ইব্রাহীম, কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগ নেতা কামরুদ্দীন আহমদ, নারী নেত্রী সাহেলা আবেদীন রীমা, নারী নেত্রী ফারহানা আফরোজ আলম জেনিফা, যুব নেতা শিবু প্রসাদ চৌধুরী, সাবেক ছাত্র নেতা নূরুল আজিম রণি, শ্রমিক নেতা তোফাজ্জল হোসেন জিকো, যুবনেতা জয় প্রকাশ, কৃষক নেতা হুমায়ূন মাসুদ, সাবেক ছাত্র নেতা শেখ মহিউদ্দিন বাবু, সংস্কৃতি কর্মী সজল চৌধুরী প্রমুখ।
















