পটিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি: দেশের ৬টি বেসরকারি ব্যাংক থেকে চাকরিচ্যুত কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিক্ষোভের মুখে চট্টগ্রামের পটিয়ায় অন্তত ২০টি ব্যাংকের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে পড়েছে। বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পটিয়ায় সব ব্যাংকের এটিএম বুথও অবরুদ্ধ করে রেখেছেন। এতে বিপাকে পড়েছেন ব্যাংক ও এটিএম বুথে সেবা নিতে আসা মানুষেরা।
রোববার (১০ আগস্ট) সকাল নয়টা থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এই বিক্ষোভ শুরু হয়।
বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, গত বছরের আগস্টে সরকার পরিবর্তনের পর বেসরকারি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক থেকে প্রায় সাত হাজার কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। এর অধিকাংশই চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার বাসিন্দা। বেশ কিছু দিন ধরে চাকরিচ্যুত ব্যক্তিরা চাকরি ফিরে পাওয়ার দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন। আন্দোলনের অংশ হিসেবে তাঁরা আজ পটিয়ায় সব ব্যাংকের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছেন। তাঁদের দাবি, বিনা নোটিশে, বিনা কারণে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে তাঁদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, সকাল সাতটায় পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য পটিয়া আদর্শ বিশ্ববিদ্যালয় মাঠে জড়ো হন চাকরিচ্যুত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। পরে সেখান থেকে সকাল নয়টার দিকে পটিয়ায় অবস্থিত সব ব্যাংকের শাখার সামনে একযোগে অবস্থান নেন তাঁরা। তাঁদের বাধার মুখে ব্যাংকগুলোয় ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সেবাগ্রহীতা ঢুকতে পারেননি। এসব ব্যাংকের মধ্যে ৬টি সরকারি ও ১৪টি বেসরকারি। বেলা সাড়ে ১১টায় এ সংবাদ লেখা পর্যন্ত কর্মসূচি চলছিল।
পটিয়া জনতা ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক নাজিম উদ্দিন বলেন,‘ শুক্র ও শনিবার ব্যাংক বন্ধ থাকায় আজ গ্রাহকের চাপ বেশি। অনেক গ্রাহক সেবা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। আবার অনেকেই তাঁদের ফোন দিচ্ছেন। তবে আন্দোলনকারীরা অবরোধ করে রাখায় তাঁরা সেবা দিতে পারছেন না।’
আন্দোলনকারীদের একজন শিবলু আলম। তিনি সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের চুয়াডাঙ্গা শাখার ক্যাশ অফিসার ছিলেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হঠাৎ কোনো কারণ ছাড়াই তাঁকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। তিনি অসহায় হয়ে পড়েছেন। চাকরি ফিরে না পাওয়া পর্যন্ত তিনি অন্যদের সঙ্গে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।’
আরো কয়েকজন চাকরিচ্যুত কর্মীরা জানান, আমাদের এই আন্দোলন আমাদের বেঁচে থাকার আন্দোলন। বিনা কারণে আমাদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। চট্টগ্রামের পটিয়ায় বাড়ি বলে আমাদের প্রতি হিংসার শিকার হতে হয়েছে। আমরা আমাদের দাবি না মানলে এই আন্দোলন বৃহত্তর আকার ধারন করবে।
হঠাৎ ব্যাংকের কার্যক্রম বন্ধে ভোগান্তিতে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বেলা ১১টার দিকে পটিয়া সদরের সোনালী ব্যাংকের শাখার সামনে কথা হয় স্কুলশিক্ষক আবুল কালামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘তিনি বেতনের টাকা তোলার জন্য ব্যাংকে এসেছিলেন। তবে বন্ধ থাকায় তিনি সেবা নিতে পারছেন না। তাঁর জরুরি টাকার দরকার। কী করবেন বুঝতে পারছেন না।’
পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নূরুজ্জামান বলেন, ‘পুলিশ আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছে। ব্যাংক খুলে দিয়ে জনগণের ভোগান্তি লাঘব করার জন্য আন্দোলনকারীদের বলা হয়েছে।’