পায়েল বিশ্বাস: চট্টগ্রামের এক পাড়ায় ছোট্ট একটি নাটিকা “তিন মুসাফির”। স্কাউটের পোশাক গায়ে তখনকার তরুণ শাহীন চৌধুরী। সেখান থেকেই জন্ম নেয় অভিনয়ের প্রতি ভালোবাসা। মঞ্চে প্রথম যাত্রা হয় ‘সেবানিকেতন’ নামের একটি সংগঠনের মাধ্যমে। পরের পথটা সহজ ছিল না। একসময় একটি নাটকে তাঁকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা হয়- আর সেখানেই জন্ম নেয় শিল্পীসত্তার অদম্য জেদ।
১৯৮৮ সালে “কথক নাট্য সম্প্রদায়”-এ যুক্ত হন। তখন নাট্যদলে ঢোকা মানে ছিল বহু পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাওয়া। সেই শুরু থেকে আজও তিনি আছেন, এই দলের সঙ্গে, অভিনয়ের নিবেদিত এক পথিক হয়ে।
“শাস্তি”-র ছিদাম, “চার অধ্যায়”-এর অতীন- এই চরিত্রগুলো তাঁকে গড়েছে ভিতর থেকে। আজও সেগুলো তাঁকে ছুঁয়ে যায়। চরিত্রের মধ্যে নিজেকে বিলিয়ে দেওয়া, একেকটি মানুষ হয়ে ওঠার অভিজ্ঞতা, তাঁর অভিনয়জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ।
পরে টেলিভিশন পর্দাতেও কাজ করেছেন। প্রস্তুতির সময় না থাকলেও আন্তরিকতায় ফাঁক রাখেননি। তাঁর বিশ্বাস, ‘‘চরিত্রটা যত ছোটই হোক, উজাড় করে অভিনয় করতে হবে।”
মঞ্চ আর পর্দার ভিন্নতা নিয়ে তাঁর উপলব্ধি গভীর ‘‘মঞ্চে স্বাধীনতা আছে। চরিত্র নিয়ে ভাবা যায়। কিন্তু পর্দায় নতুনদের জন্য জায়গা করে নিতে সময় লাগে। স্ক্রিপ্ট হাতে আসে শুটিংয়ের দিনই, ফলে চরিত্রকে গভীরভাবে বোঝা কঠিন হয়।”
চট্টগ্রামে থেকে কাজ করা মানে প্রতিদিন সংগ্রাম। সীমাবদ্ধতা, সুযোগের অভাব, মানহীন পরিবেশ- সবকিছুর মাঝেও তিনি টিকে আছেন। কারণ তাঁর লক্ষ্য একটাই- ভালো একজন অভিনেতা হওয়া।
তাঁর কণ্ঠে উচ্চারিত একান্ত কথা:
‘‘আমি এমন একটি চরিত্রের জন্য অপেক্ষায় আছি, যা মানুষের মন ছুঁয়ে যাবে। শুধু অভিনয় নয়- আমি চাই চরিত্রটির মানুষটিই হয়ে উঠতে।”
নতুনদের জন্য তাঁর সতর্কতা:
“আজকাল সবাই তাড়াহুড়ো করে। কেউ সময় দিতে চায় না। অভিনয় তো এক বিশাল সাগর- চেহারা বা নাম নয়, মানুষের মনে বেঁচে থাকার জন্য অভিনয় করা উচিত।”
শাহীন চৌধুরী- নামটি হয়তো জাঁকজমকপূর্ণ কোন আলোয় ঝলমল করে না। তবে, এই নামের ভেতরে আছে একটি শুদ্ধ শিল্পচর্চার গল্প। একজন শিল্পীর মত নয়, একজন সাধকের মত তাঁর পথচলা। শান্ত, গভীর অথচ শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়ানো।
লেখক: কবি, শিল্প সমালোচক।