সিনিয়র প্রতিবেদক:
আগামী ২৩ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের তিন উপজেলার ২৭ ইউপিতে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। চতুর্থ ধাপের এ নির্বাচনে পটিয়া, কর্ণফুলী ও লোহাগাড়া উপজেলায় প্রায় দু’শতাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী। যাদের বেশির ভাগ নেতা ঢাকায় বসে জোর লবিং চালাচ্ছেন। এরমধ্যে চেয়ারম্যান প্রার্থীদের তথ্য সংগ্রহ করে বাছাই প্রক্রিয়া শেষে কেন্দ্রে তালিকা পাঠিয়েছেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান।
বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, প্রতিটি ইউনিয়ন থেকে ৪/৫ জন প্রার্থীর নাম কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে তৃণমূলের সুপারিশ ও মাঠ জরিপ বিবেচনা করে যোগ্য প্রার্থীকে মনোনয়ন দেবে দলীয় মনোনয়ন বোর্ড। মনোনয়ন বোর্ডের সভায় পুঙ্খানুপুুঙ্খভাবে যাচাই-বাছাই করেই দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়। কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আছে কি-না, দলে তার অবদান কতটা, এলাকায় সে কতটা জনপ্রিয় তা দেখেই মনোনয়ন দেওয়ার কথা রয়েছে।
নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে-পটিয়ায় ১৭টি, কর্ণফুলীতে ৪টি এবং লোহাগাড়ায় ৬ ইউপি হতে যাদের নাম কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে এদের মধ্যে কর্ণফুলীর তালিকায় বিদ্রোহী ও বির্তকিত প্রার্থী রয়েছেন। যারা ২০১৬ সালের ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হিসেবে দাঁড়িয়ে জামানত হারিয়েছেন। আবার অনেকে জিতেছেন। দক্ষিণ জেলায় আবার ৭ জন বহিষ্কার হয়েছিলেন। এসব বহিষ্কৃত আর বিদ্রোহীদের নামে এবারও মনোনয়ন বাগিয়ে নিতে অনেক প্রভাবশালীরা মাঠে নেমেছেন। নিজেদের বলয় ধরে রাখতে প্রভাব প্রতিপত্তির জোরে তারা বিতর্কিতদের মনোনয়ন পাইয়ে দিতে লবিং করছেন।
ফলে অনেক ক্ষেত্রে দলের যোগ্য প্রার্থী হচ্ছেন মনোনয়ন বঞ্চিত। এতে ত্যাগীদের মধ্যে বাড়ছে ক্ষোভ ও হতাশা। এমন পরিস্থিতিতে প্রার্থী পরিবর্তন না হলে অনেকেই ভোটের মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন। এতে চট্টগ্রামের ২৭ ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী বাড়ার শঙ্কাও দেখা দিয়েছে। কেননা, কিছু কিছু ইউনয়নে নেতারা বিতর্কিত ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের পরিচয় গোপন করে মনোনয়ন বোর্ডে লিস্ট পাঠিয়েছেন। অনেকেই এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে দলের সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন তৃণমূলের নেতারা।
নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, বিদ্রোহীদের মনোনয়ন না দেওয়ার সিদ্ধান্ত রয়েছে আওয়ামী লীগের। এ বিষয়ে তৃণমূলে নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারপরও নাম পাঠানোর ক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতি করেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ জেলা-উপজেলা পর্যায়ের প্রভাবশালী নেতারা। কিছু কিছু জায়গায় পাঠানো হয়েছে একজনের নামও। তৃণমূলের তালিকায় যোগ্যদের নাম পাঠানো হয়নি-এমন অভিযোগ করেছেন স্বয়ং অনেক সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী।
ফলে অনেক ক্ষেত্রেই মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যরা বিভ্রান্ত হতে পারেন। এভাবে নাম পাঠানোর পেছনে অন্য কোনো কারণ রয়েছে বলেও মনে করছেন অনেকে। যদিও অনেকেই আবার দলীয় প্রতীক তুলে নির্বাচন উন্মুক্ত রাখার দাবিও জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার এক চেয়ারম্যান প্রার্থী বলেন, ‘শুনেছি তৃণমূল থেকে পাঠানো তালিকায় আমার নাম নেই। যদিও নাম থাকলে বেশ উপকৃত হতাম। পুরো ইউনিয়নের আমার ৯০ শতাংশ সমর্থক। সাধারণ মানুষ আমার শক্তি। আমাকে বাদ দেওয়ার কারণ হিসাবে মনে হচ্ছে-নেতাদের ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছে। আমি ছাত্ররাজনীতি করে আওয়ামী লীগের নেতা হয়েছি। অনেকের মতো হাইব্রিড নই।’
ওদিকে, এক প্রতিনিধি সভায় চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব মোসলেম উদ্দিন এমপি বলেন কিছুতেই বিদ্রোহীদের মনোনয়ন দেওয়া হবে না। এমনকি দলের কোন পদ পদবিও তারা পাবেন না।’
তথ্যমতে, দক্ষিণ চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার ৬ ইউপি যেমন-বড়হাতিয়া, পদুয়া, চরম্বা, চুনতি, কলাউজান, পুটিবিলা। কর্ণফুলী উপজেলার ৪ ইউপি-জুলধা, শিকলবাহা, চরলক্ষ্যা, বড়উঠান। পটিয়া উপজেলার কোলাগাঁও, হাবিলাসদ্বীপ, কুসুমপুরা, জিরি, আশিয়া, কাশিয়াইশ, জঙ্গলখাইন, বড়লিয়া, ধলঘাট, কেলিশহর, হাইদগাও, দক্ষিণভূর্ষি, ভাটিখাইন, ছনখরা, কচুয়াই, খরনা, শোভনদণ্ডী ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিল করা যাবে ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত। মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ২৯ নভেম্বর, মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ সময় ৬ ডিসেম্বর ও ভোট গ্রহণ হবে ২৩ ডিসেম্বর।
















