চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. জিয়াউদ্দিন বলছেন, `শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগ পরবর্তী প্রজন্মের জন্য অনুসরণীয় ও অনুকরণীয় হয়ে থাকবে।’
রোববার (১৪ ডিসেম্বর) সকালে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউস সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসন চট্টগ্রামের আয়োজনে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ২০২৫ উপলক্ষে আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সভায় বিভাগীয় কমিশনার আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ও মানুষের মুক্তির জন্য আন্দোলন শুরু হয়েছিল। যে সকল মুক্তিযোদ্ধা ও বুদ্ধিজীবীরা দেশের জন্য তাদের নিজের স্বার্থকে বিসর্জন দিয়ে আমাদের মুক্তির জন্য চেষ্টা করেছেন তাদের কৃতিত্বকে সম্মানজনকভাবে স্মরণ করতে হবে।’
‘পৃথিবীব্যাপী ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি দুর্ভাগ্যের শিকার হয়েছেন বুদ্ধিজীবীগণ। সমাজ ও রাষ্ট্রের নৈতিক দিকনির্দেশনা প্রদান, সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় সোচ্চার ভূমিকার কারণে তারা বারবার নিপীড়ন, নির্যাতন ও অবহেলার শিকার হয়েছেন। বুদ্ধিজীবীদের নিজস্ব কোনো দল নেই। বুদ্ধিজীবীরা জাতির বিবেক হিসেবে অন্যায়, অসত্য ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে কথা বলেন বলেই বিভিন্ন সময় তাদের কণ্ঠ রোধ করার অপচেষ্টা চালানো হয়েছে। অথচ রাষ্ট্র ও সমাজকে বৈষম্যহীন গড়ে তুলতে এবং গণতন্ত্রের বিকাশ এবং মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা অপরিসীম।’
তিনি আরও বলেন, ‘পাকিস্তান শাসনামলে দুই দল বুদ্ধিজীবী ছিল। একদল বুদ্ধিজীবী পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করে তাদের নীতি ও আদর্শকে সমর্থন করেছিলেন। স্বাধীনতা অর্জনের পর এসব বুদ্ধিজীবী এ দেশে আসেনি। অপরদিকে, সংখ্যায় অধিক আরেক দল বুদ্ধিজীবী শত নির্যাতন, নিপীড়ন ও ভয়ভীতি উপেক্ষা করে দেশের মানুষের অধিকার, ভাষা, সংস্কৃতি ও স্বাধীনতার স্বপ্ন থেকে কখনো সরে আসেননি।’
‘পাকিস্তানি শাসনামলের দমন-পীড়নের মধ্যেও তারা একটি স্বাধীন, গণতান্ত্রিক ও শোষণমুক্ত রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন লালন করেছেন এবং সেই লক্ষ্যে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে গেছেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় দেশ স্বাধীন হওয়ার দুই দিন আগে তাঁদেরকে আমরা হারিয়ে ফেলেছি। এই দেশপ্রেমিক বুদ্ধিজীবীরাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে জাতিকে পথ দেখিয়েছেন এবং স্বাধীন বাংলাদেশ গড়ার বুদ্ধিবৃত্তিক ভিত্তি নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তাদের ত্যাগ, সাহস ও আদর্শ আজও জাতির অগ্রযাত্রার প্রেরণাস্বরূপ।’
সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, ‘বাঙালি জাতির ইতিহাসে একটি বেদনাদায়ক অধ্যায় ও স্মরণীয় দিন শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস। বাংলাদেশের মেধাবী, উন্নয়ন অগ্রযাত্রা ধ্বংস করার জন্য পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী সে দিন আমাদের বুদ্ধিজীবিদের হত্যা করেছিল। প্রতিটি নাগরিকের অধিকার আদায় ও উন্নয়নের জন্য যুদ্ধ আমাদের প্রয়োজন।’
‘বিশ্বে আরও যুদ্ধ হয়েছিল, আমরা শুনেছি। কিন্তুু বাংলাদেশে যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের এভাবে হত্যা করা সম্পূর্ণ সুপরিকল্পিত। আমরা দেশপ্রেমে উজ্জ্বীবিত হতে চাই। দেশ ও সমাজের জন্য কাজ করতে পারলে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বুদ্ধিজীবীদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে।’
সভায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটনের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. হুমায়ুন কবীর, চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি মো. আহসান হাবীব পলাশ, চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাজির আহমেদ খাঁন, চট্টগ্রাম মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সাহাবউদ্দিন আহমেদ, উত্তর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. জিলানী ও জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. কামাল উদ্দিন বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন।
















