বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘জুলাই-আগস্টে হয়ে যাওয়া আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড তিনি নন। নিজেকে কখনও এ আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড হিসেবে দেখেন না। তার কথায়, এই আন্দোলন জনগণের আন্দোলন। এই আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড কোনো দল কোনো ব্যক্তি নয়। এই আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী জনগণ।’
সোমবার (০৬ অক্টোবর) বিবিসি বাংলায় প্রচারিত এক ভার্চুয়াল সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি নিজেকে জুলাই আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড হিসেবে নিজেকে দেখেন কিনা— এমন প্রশ্নের জবাবে তারেক রহমান বলেন, ‘না। আমি কখনোই আমাকে এই জুলাই আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড হিসেবে দেখি না।’
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রসঙ্গে আসি। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আপনার ভূমিকা নিয়ে অনেক আলোচনা আছে। এটি মোটামুটি সব পক্ষই স্বীকার করেও যে সেই সময়ে আপনার একটা সক্রিয় ভূমিকা ছিল। আবার আপনার দলের কোনো কোনো নেতা বা সমর্থক তারা এই অভ্যুত্থানে আপনাকে ‘একমাত্র মাস্টারমাইন্ড’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। আপনি কি নিজেকে এই আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড হিসেবে দেখেন?
তারেক রহমান বলেন, ‘না। আমি অবশ্যই এই জুলাই আন্দোলনে আমাকে আমি কখনোই মাস্টারমাইন্ড হিসেবে দেখি না। এই যে ৫ আগস্ট যেই আন্দোলন, জুলাই আন্দোলন বলে যেটি বিখ্যাত বা যেটি সকলের কাছে গৃহীত এই আন্দোলনটি সফল হয়েছে জুলাই মাসে। কিন্তু এই আন্দোলনটি প্রেক্ষাপট শুরু হয়েছে কিন্তু বহু বছর আগে থেকে। এ আন্দোলনে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীরা, সেটি বিএনপি হোক বা অন্য রাজনৈতিক দলগুলো হোক যারা গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল বিভিন্নভাবে অবদান রেখেছে। বিভিন্নভাবে তাদের নেতাকর্মীরা নির্যাতিত হয়েছেন।’
আমি মনে করি, জুলাই-অগাস্ট মাসে এসে জনগণ সব গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের সাথে অংশগ্রহণ করেছেন। শুধু কী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরাই সেদিন ছিল মাঠে? অবশ্যই নয়। আমরা দেখেছি, সেদিন মাদ্রাসার ছাত্ররা তারা ছিলেন এই আন্দোলনের মাঠে। আমরা দেখেছি গৃহিনীরা পর্যন্ত রাস্তায় নেমে এসেছেন সন্তানের পেছনে। আমরা দেখেছি কৃষক, শ্রমিক, সিএনজি চালক, ছোট দোকান কর্মচারী বা দোকান মালিক থেকে আরম্ভ করে গার্মেন্টস কর্মী- তারা নেমে এসেছিলেন। আমরা দেখেছিলাম সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কর্মচারীরা নেমে এসেছিলেন এই আন্দোলনে বলেও জানান তিনি।
এমন বহু সাংবাদিক যারা স্বৈরাচারের অত্যাচারে নির্যাতিত হয়ে দেশ থেকে বাইরে চলে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন, তারা সম্পৃক্ত হয়েছিলেন এই আন্দোলনে। কাজেই কারও ভূমিকাকে আমরা ছোট করে দেখতে চাই, না খাটো করে দেখতে চাই না। আমি বিশ্বাস করি, দৃঢ়ভাবে সমাজের দল মত নির্বিশেষে শ্রেণিবিন্যাস নির্বিশেষে প্রত্যেকটি মানুষের অবদান আছে বলেও জানান তারেক।
এই আন্দোলন ছিল বাংলাদেশের জনগণের আন্দোলন, যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন এই আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড। কোনো দল কোনো ব্যক্তি নয়, এই আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী জনগণ।
যখন আন্দোলনটা চলছিল, তখন আন্দোলনে যে ছাত্রনেতৃত্ব ছিল তাদের সাথে আপনার কতটা যোগাযোগ ছিল? আপনার দলের সাথে তো নিশ্চয়ই যোগাযোগ ছিল, অন্যদের সাথে আপনাদের আপনার কতটা যোগাযোগ ছিল? এমন প্রশ্নের জবাবে তারেক রহমান বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবে আমি যেহেতু বাইরে থেকে কাজ করছি, আমাকে যোগাযোগটা অনলাইনের মাধ্যমে রাখতে হয়েছে এবং সেই দিনগুলোতে আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে যে, টেলিফোন সিস্টেম বা অনলাইন সিস্টেমের কি অবস্থা করেছিল স্বৈরাচার।’
আপনি যোগাযোগের যেটি কথা বলেছেন, এই যোগাযোগটি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ বিভিন্নভাবে আমাদেরকে করতে হয়েছে। বিভিন্ন মাধ্যমে করতে হয়েছে। যোগাযোগটা যে খুব স্মুথ সব সময় থেকেছে তা নয়। প্রত্যেকে সহযোগিতা করেছি আমরা বলেও জানান তিনি।
ছাত্র-জনতার যে অভ্যুত্থান সেটির পরে এটার কৃতিত্ব কার সেটা নিয়ে বিভিন্ন পক্ষ দাবি করেছে, তাতে কি আপনার মনে হয় যে এর ফলে বিভিন্ন পক্ষের যে সংকীর্ণ স্বার্থ পূরণের চেষ্টা সেটাই একটু বেশি প্রকট হয়েছে এবং এখানে বিএনপির আসলে কোন দায় আছে কিনা?
উত্তরে তারেক রহমান বলেন, ‘দেখুন ব্যাপারটা আমরা যদি একটু অন্যভাবে দেখি। বাংলাদেশের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত এটি একটি অবিস্মরণীয় ঘটনা। এই আন্দোলন, মানুষের এই আত্মত্যাগ সাধারণত কোনও রাজনৈতিক আন্দোলনে বা স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে শিশু হত্যা হয় না, শিশু শহীদ হয় না, শিশু মৃত্যুবরণ করে না। কিন্তু আমরা দেখেছি- এ আন্দোলনে স্বৈরাচারের এই আন্দোলনে যতটুকু আমার মনে আছে প্রায় ৬৩ জন শিশু শহীদ হয়েছে, মারা গিয়েছে। আমি আগেই বলেছি, আপনার আগের প্রশ্নের উত্তরে বলেছি যে, এই আন্দোলনের ক্রেডিট দল-মত নির্বিশেষে বাংলাদেশের জনগণের, কোনও একটি রাজনৈতিক দলের নয়।’
অনেকে হয়তো অনেক কিছু বলে থাকতে পারেন, ডিমান্ড করতে পারেন, সেটি তাদের অবস্থান বলেও মনে করেন তারেক রহমান।
আমি বা আমার দলের অবস্থান হচ্ছে-আন্দোলন হয়ে গিয়েছে, আন্দোলনের জনগণ সফলতা লাভ করেছেন। আন্দোলনে স্বাভাবিকভাবেই দুটো পক্ষ আছে। একটি পক্ষ হচ্ছে মানুষ শহীদ হয়েছে। ২০০০ এর মত মানুষকে হত্যা করা হয়েছে আন্দোলনে। আবার আরেকটি পক্ষ হচ্ছে প্রায় ৩০ হাজারের মতো মানুষ বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন অন্ধ হয়ে গিয়েছেন। আমার মনে হয়, আমাদের উচিত হবে, এখন আমাদের সকলের উচিত হবে রাষ্ট্রসহ সরকারসহ রাজনৈতিক দলগুলোর যার যতটুকু সম্ভব, সেই পরিবারগুলোর পাশে গিয়ে দাঁড়ানো। যতটুকু সহযোগিতা তাদেরকে করা যায়, যতটুকু সম্ভব তাদের পাশে দাঁড়ানো। তাদের এই আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান জানানো বলেও জানান তারেক রহমান।