ঢাকা: ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মুখে ২০২৪ সালের বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর ২৩ সেপ্টেম্বর গ্রেফতার হন তৎকালীন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপ) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এক মামলায় গত ২৪ মার্চ ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে জবানবন্দি দেন তিনি। ৫ পৃষ্ঠার জবানবন্দিতে ২০১৮ সালের ভোটে অনিয়ম, গুম, খুন ও জুলাই আন্দোলন নিয়ে নিজের বক্তব্য তুলে ধরেছেন তিনি।
জবানবন্দিতে চৌধুরী মামুন বলেছেন, ‘১৯ জুলাই থেকে প্রায় প্রতি রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বাসায় বৈঠক হত তাদের। বৈঠকে দুইজন সচিব, এসবি প্রধান মনিরুল ইসলাম, ডিবির হারুন অর রশীদ, র্যাবের মহাপরিচালক, আনসারের ডিজি, এনটিএমসির জিয়াউল আহসানসহ অনেকে উপস্থিত থাকতেন। মূলত এ বৈঠক থেকে সব রকম নির্দেশনা ও পরামর্শ করা হত।’
আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে চৌধুরী মামুন আরও বলেন, ‘কোর কমিটির এক বৈঠকে সমন্বয়কদের আটক করার সিদ্ধান্ত হয়। সেই সিদ্ধান্ত মোতাবেক ৬ সমন্বয়ককে আটক করে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়। আন্দোলন প্রত্যাহারে তাদের মানসিক নির্যাতন ও চাপ দেয়া হয়। কর্মসূচি প্রত্যাহারে গণমাধ্যমে বিবৃতি দিতে বলা হয়। ঢাকার মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার প্রধান হারুনকে জনাব বলে ডাকতেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। কেন না রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কার্যকর মনে করা হত তাকে।’
আন্দোলন দমনে হেলিকপ্টার থেকে গুলির ব্যাপারে জবানবন্দিতে মামুন বলেন, ‘আন্দোলনকারীদের নজরদারি, গুলি করে ভীতিকর পরিবেশ তৈরির গোপন পরিকল্পনা হয়। র্যাবের তৎকালীন মহাপরিচালক হারুন অর রশিদের পরিকল্পনায় মূলত রাজনৈকি সিদ্ধান্তে হেলিকপ্টার মোতায়েন করা হয়।’
চৌধুরী মামুন আরও বলেন, ‘আন্দোলন দমনে মারণাস্ত্র ব্যাবহার ওআন্দোলন প্রবণ এলাকায় ব্লক রেইডের সিদ্ধান্ত হয় রাজনৈতিকভাবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিজে তাকে লেথাল উইপেন ব্যাবহারে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার কথা জানিয়েছিলেন। ডিএমপির প্রাক্তন কমিশনার হাবিবুর রহমান হাবিব এবং ডিবির প্রাক্তন হারুন অর রশীদ লেথাল উইপন ব্যবহারে অতিউৎসাহী ছিলেন।’
এছাড়া প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, প্রাক্তন সসড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ অনেকে মারণাস্ত্র ব্যবহারে পরামর্শ ও উসকানি দিয়েছিলেন বলেও জানান চৌধুরী মামুন।
সরকার পতনের দিন কী করেছিলেন মামুন সেটিও জবানবন্দিতে জানিয়েছেন। বলেন, ‘৫ আগস্ট বিকালের দিকে একটি হেলিকপ্টার আসে পুলিশ হেড কোয়ার্টারে। ওই হেলিকপ্টারে তেজগাঁও বিমানবন্দরে যান তিনি। এরপর সেখান থেকে সেনানিবাসে আশ্রয় নেন।’
জবানবন্দির শেষাংশে গুলি করে খুন, আহতের ঘটনায় সেসময় পুলিশ প্রধান হিসেবে অনুতপ্ত ও ক্ষমা চান আল মামুন। যদিও পাঁচ পৃষ্ঠার জবানবন্দিতে শুধু মিটিংয়ে অংশ নেওয়া ছাড়া নিজের সম্পৃক্ততার ব্যাপারে কিছুই বলেননি তিনি।
সম্প্রতি আসামি থেকে রাজসাক্ষী হয়েছেন চৌধুরী মামুন। সম্পূর্ণ সত্য প্রকাশের শর্তে রাজসাক্ষীর আবেদন মঞ্জুর করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এখন অপেক্ষা রাজসাক্ষী হিসেবে তার জবানবন্দির।