ঢাকা: ঢাকার উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় ১৯ জনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
সোমবার (২১ জুলাই) ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের মহাপরিচালক ব্রি. জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল জানান, দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৯ জন মারা গেছেন।
এদিকে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতরের (আইএসপিআর) তথ্যমতে এখন পর্যন্ত ১৮ জনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
এরমধ্যে বার্ন ইনস্টিটিউটে ২, সিএমএইচ-ঢাকা ১১, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ২, উত্তরার লুবনা জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড কার্ডিয়াক সেন্টারে ২, উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে ১ জনসহ মোট ১৮ জনের মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছে আইএসপিআর।
এর আগে, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী সাইদুর রহমান ১৬ জনের মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছিলেন। তিনি আরও জানান, ৪৮ জনের মতো রোগী বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন আছেন। এছাড়া দুর্ঘটনায় আহত ও দগ্ধদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিতে সরকার কাজ করছে বলেও জানান তিনি।
হতাহতের ঘটনায় জরুরী প্রয়োজনে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারিতে ইমার্জেন্সি হটলাইন চালু। হটলাইন নম্বর- ০১৯৪৯০৪৩৬৯৭
উদ্ধার তৎপরতা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় যোগ দিয়েছে ৩ প্লাটুন বিজিবি।
বিমান বিধ্বস্তে হতাহতের ঘটনায় আগামীকাল মঙ্গলবার একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে।
দগ্ধদের দেখতে হাসপাতালে এসেছেন ৪ উপদেষ্টা- ফয়জুল করিম, রিজওয়ানা হাসান, মোস্তফা সারয়ার ফারুকী এবং আদিলুর রহমান।
বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় আহতদের মেট্রোরেলে বহন করার জন্য নারী বগির পাশের বগি রিজার্ভ রাখা হয়েছে: পুলিশ সদর দফতর
বিমানের পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম সাগর নিহত হয়েছেন।
বিকাল সাড়ে ৩টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সংবাদদাতা হায়দার আলী জানিয়েছেন, বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় দগ্ধ অন্তত ৬০ জনকে বার্ন ইনস্টিটিউটে নেয়া হয়েছে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় প্রধান উপদেষ্টার শোক বার্তা:
রাজধানীর দিয়াবাড়ি এলাকায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে আজ বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর এফ-৭ বিজেআই প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনায় আমি গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করছি।
এই দুর্ঘটনায় বিমানসেনা ও মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষক-কর্মচারীসহ অন্যান্যদের যে ক্ষতি হয়েছে তা অপূরণীয়। জাতির জন্য এটি একটি গভীর বেদনার ক্ষণ।
আমি আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি এবং সংশ্লিষ্ট হাসপাতালসহ সকল কর্তৃপক্ষকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে পরিস্থিতি মোকাবেলার নির্দেশ প্রদান করছি।
সরকার দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং সব ধরনের সহায়তা নিশ্চিত করবে।
বিমান বিধ্বস্ত: পাইলট নিহত:
বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় পাইলট নিহত হয়েছেন। বিকেল পৌনে ৪টার দিকে সম্মিলিতি সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) মারা যান তিনি।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ফেসবুক পোস্ট:
ঢাকা মেডিক্যাল বার্ন ইউনিট, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ, কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল, উত্তরা উইমেন্স মেডিক্যাল কলেজ, মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ, উত্তরার হাসপাতালগুলোতে রক্ত লাগবে। রক্তদানে আগ্রহীরা এই হাসপাতালগুলোতে আসুন, প্রচুর রক্ত প্রয়োজন।
বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় জামায়াতের সর্বস্তরের জনশক্তি, এলাকাবাসীকে উদ্ধার কাজে অংশ গ্রহণ, আহতদের চিকিৎসা সেবায় সর্বাত্মক সহায়তা করতে জামায়াত আমির শফিকুর রহমান আহ্বান জানিয়েছেন।
উদ্ধার অভিযানে যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সংবাদদাতা হায়দার আলী জানিয়েছেন, বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় দগ্ধ অন্তত ২৫ জনকে বার্ন ইন্সটিটিউটে নেয়া হয়েছে।
দুর্ঘটনাস্থলে উদ্ধার তৎপরতা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় যোগ দিয়েছে ২ প্লাটুন বিজিবি।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, পাইলট ছিলেন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম সাগর। বিমানে তিনি একাই ছিলেন।
মিজানুর রহমান নামে মাইলস্টোন কলেজের একজন কর্মকর্তা জানান, কলেজ এরিয়ার মাঝে বিমানটি পড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাতে আগুন ধরে যায়। এতে একজন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন তিনি। এছাড়া অনেক হতাহত হয়েছেন বলেও জানিয়েছেন।
আইএসপিআর জানিয়েছে, দুপুর ১টা ৬ মিনিটে উড্ডয়নের পর বিমানটি বিধ্বস্ত হয়।
ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, খবর পেয়ে ১টা ২২ মিনিটে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে কাজ শুরু করেন।
এরইমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ কিছু ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিও ফুটেজে আগুন এবং ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে। মানুষজনকে ছোটাছোটি করতেও দেখা গেছে। তবে ভিডিওগুলোর সত্যতা নিশ্চিত হতে পারেনি গণমাধ্যম।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, হঠাৎ করে বিকট শব্দে বিমানটি আছড়ে পড়ে। ঘটনার সময় শিক্ষার্থী এবং কর্মচারীরা সেখানে ছিলেন। তাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
স্কুল ছুটির ঠিক আগ মুহূর্তে এই দুর্ঘটনা ঘটে। শিক্ষার্থীদের অনেক অভিভাবক স্কুলের সামনে ছিলেন। তারাও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করেন সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা।