চট্টগ্রাম: বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাবেক এমপি আনম শামসুল ইসলাম বলেছেন, ‘আগামী নির্বাচন আমাদের দেশকে নতুন করে ঢেলে সাজানোর একটি ঐতিহাসিক সুযোগ। দীর্ঘ ১৬ বছর পর মানুষ তাদের ভোটাধিকার ফিরে পেতে যাচ্ছে। আমরা আশা করছি, একটি অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে। আর সেই নির্বাচনের মাধ্যমে আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণের গতিপথ নির্ধারণ হবে। তাই শ্রমিকজনতা ও সর্বস্তরের নাগরিকদের সচেতনতার সাথে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে হবে। স্বাধীনতার দীর্ঘ ৫৫ বছর পরও বৈষম্যহীন ও শ্রমিকবান্ধব সমাজ ও রাষ্ট্র বিনির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। আর বিগত ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী আমলে তো শ্রমিকরা ছিল আরও বেশি নির্যাতিত ও নিষ্পেষিত। সেই বৈষম্যের অবসান ঘটাতে চব্বিশের গণ-আন্দোলনে ছাত্রদের পাশাপাশি শ্রমিকরা জীবন দিয়েছে। রক্ত দিয়েছে। চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে শ্রমিকদের জীবন ও রক্তের হিস্যা ইতিহাসে অম্লান হয়ে থাকবে। আর চব্বিশের শহিদ ও আহতদের ত্যাগ-কুরবানি তখনই স্বার্থক হবে, যদি আমরা সবাই মিলে একটি বৈষম্যহীন, শ্রমিকবান্ধব ও ইনসাফের বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারি। আর সেই শ্রমিকবান্ধব বাংলাদেশ পরিগঠনে আগামীর নির্বাচনে দাঁড়িপাল্লার পক্ষে ম্যান্ডেট দিতে হবে। শ্রমিকবান্ধব দেশ গঠনে ইনসাফের প্রতীক দাঁড়িপাল্লার পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি করতে হবে। শ্রমিকজনতা দাঁড়িপাল্লা প্রতীকের পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টিতে অবিস্মরণীয় ভূমিকা রাখবে।’
আজ শুক্রবার (১১ জুলাই) সকালে চট্টগ্রাম ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের হলে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন চট্টগ্রাম মহানগরীর ইউনিট দায়িত্বশীল সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম মহানগরী সভাপতি এসএম লুৎফর রহমানের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আবু তালেব চৌধুরীর সঞ্চালনায় সম্মেলনে সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন ফেডারেশনের চট্টগ্রাম মহানগরীর সাবেক সভাপতি আহছানুল্লাহ ভূইয়া, মহানগরীর প্রধান উপদেষ্টা নজরুল ইসলাম, উপদেষ্টা জাফর সাদেক ও ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ ইসহাক।
সম্মেলনে বক্তাগণ বলেন, ‘শ্রমিকজনতা দেশের সকল ক্রান্তিলগ্নে ঐতিহাসিক ভূমিকা রেখেছে। তাই শ্রমিকদের প্রতি রাষ্ট্র, সমাজ ও রাজনৈতিক দলসমূহের অনেক দায়িত্ব রয়েছে। কিন্তু সেই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালিত হচ্ছে না বলেই শ্রমিকরা বঞ্চিত। শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য পাওনা এবং ন্যায়সংগত অধিকার থেকে প্রতিনিয়ত বঞ্চিত হচ্ছে। সেই বঞ্চনার অবসান ঘটাতে আমাদের সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে। শ্রমিকজনতাকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। ন্যায় ও ইনসাফের পক্ষে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে হবে। আমরা সকলে যার যার জায়গা থেকে দেশ গড়ার কাজে যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারলেই আমাদের দেশটা একটি সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হবে। শ্রমিকবঞ্চনার অবসান ঘটবে। শ্রমিকজনতাসহ সকল নাগরিকের অধিকার সুরক্ষিত হবে। তেমন একটি দেশ গঠনে আমাদের সকলকে নিরলসভাবে কাজ করে যেতে হবে।’
এসএম লুৎফর রহমান বলেন, ‘আওয়ামী সরকারের আমলে শ্রম সেক্টরে অস্থিরতা ছিল, শ্রমিক লীগের তৎপরতা ছিল টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, বদলি বাণিজ্য। শিল্প কল-কারখানায় ছিল মাথাভারি প্রশাসন এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে সরকারি দলের নৈতিকতা বিবর্জিত কর্মকর্তারা অবস্থান করে লুটপাট করেছিল, চট্টগ্রাম বন্দর, তেল সেক্টর ও রেল সেক্টরকে দুর্নীতিতে নিমজ্জিত করেছিল। সিবিএগুলো দখল করে লুটপাট ও শ্রমিক নির্যাতন করেছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিআরটিএ ও বিআরটিসিকে শ্রমিক হয়রানির আখড়ায় পরিণত করেছিল।’
হোটেল শ্রমিকসহ এ প্রতিষ্ঠানে শ্রমিকদের কর্মঘন্টা নির্ধারণ, সাপ্তাহিক ও জাতীয় ছুটি কার্যকর করার দাবি জানান লুৎফর রহমান।
সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন ফেডারেশনের চট্টগ্রাম মহানগরী সহ-সভাপতি নজির হোসেন, মকবুল আহম্মেদ ভূঁইয়া, সহ-সাধারণ সম্পাদক শিহাবউল্লাহ ও আসাদ উল্লাহ আদিল, কোষাধ্যক্ষ মুহাম্মদ নুরুন্নবী, ট্রেড ইউনিয়ন সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম।
ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিলেন মহানগরীর সাংগঠনিক সম্পাদক হামিদুল ইসলাম, অফিস সম্পাদক সম শামীম, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম মজুমদার প্রকাশনা সম্পাদক সাইফুল ইসলাম, আইন আদালত সম্পাদক সাব্বির আহমদ উসমানী।