চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক) বাস্তবায়নাধীন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন মাস্টারপ্ল্যান প্রকল্পের খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। এ নিয়ে শিগগিরই সেক্টরভিত্তিক স্টেকহোল্ডারদের সাথে সভা ও গণশুনানির আয়োজন করা হবে। যাতে সকলের মতামতের ভিত্তিতে একটি গ্রহণযোগ্য ও টেকসই মাস্টারপ্ল্যান (মহাপরিকল্পনা) প্রণয়ন করা যায়।
মঙ্গলবার (১৭ জুন) চিটাগাং ক্লাবে মাস্টারপ্ল্যান প্রকল্পের চতুর্থ টেকনিক্যাল ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
চউকের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. নুরুল করিমের সভাপতিত্বে সভা সঞ্চালনা করেন প্রকল্প পরিচালক ও চউকের উপ-প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মো. আবু ঈসা আনছারী। তিনি প্রকল্পের অগ্রগতির ওপর প্রারম্ভিক উপস্থাপনা দেন।
আবু ঈসা আনছারী বলেন, ‘প্রকল্পটি ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হয় এবং এর মেয়াদকাল ২০২৬ সালের জুন মাসে শেষ হবে। এরইমধ্যে প্রকল্পের ড্রাফট ফাইনাল রিপোর্ট প্রস্তুতপূর্বক দাখিল করা হয়েছে এবং এই রিপোর্টের ওপর এই টেকনিক্যাল ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।’
তিনি জানান, ড্রাফট ফাইনাল রিপোর্টের আলোকে পরবর্তী সেক্টরভিত্তিক স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে সভা ও গণশুনানির আয়োজন করা হবে, যাতে সকলের মতামতের ভিত্তিতে একটি গ্রহণযোগ্য ও টেকসই মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করা যায়।
সভায় চউকের বোর্ড সদস্য প্রকৌশলী মনজারে খোরশেদ আলম, স্থপতি জেরিনা হোসেন, মো. নজরুল ইসলাম, জাহিদুল করিম কচি ও মো. সাখাওয়াত হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও সভায় ভার্চুয়াল মাধ্যমে যুক্ত ছিলেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব আবুল বাকের মো. তৌহিদ, বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তরের পরিচালক নুরুন নাহার ফারুকী। উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, পানি উন্নয়ন বোর্ড, গণপূর্ত বিভাগ, ফায়ার সার্ভিস, মেট্রোপলিটন পুলিশ, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড এবং পেশাজীবী সংগঠন বিআইপি, আইইবি, আইএবির প্রতিনিধি।
এছাড়াও পটিয়া ও বোয়ালখালী উপজেলার প্রতিনিধিরা সভায় অংশগ্রহণ করেন। সভায় মাস্টারপ্ল্যান প্রকল্পের টিম লিডার মো. আহসানুল কবির প্রধান উপস্থাপনা দেন। তিনি স্ট্রাকচার প্ল্যানের মূল কাঠামো ও মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় সাংগঠনিক ব্যবস্থা তুলে ধরেন।
ট্রান্সপোর্টেশন মাস্টারপ্ল্যান নিয়ে উপস্থাপনা করেন পরিবহন বিশেষজ্ঞ মো. নরুল হাসান। মাস্টারপ্ল্যান প্রস্তুতিতে সম্পন্নকৃত বিভিন্ন সার্ভে ও তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতি নিয়ে উপস্থাপনা দেন পরিকল্পনাবিদ তামজিদুল ইসলাম। ড্রেনেজ মাস্টারপ্ল্যান বিষয়ক উপস্থাপনা দেন ড্রেনেজ বিশেষজ্ঞ মো. সাখওয়াত হোসেন। পরিবেশ বিষয়ক মাস্টারপ্ল্যান সংক্রান্ত উপস্থাপনা করেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞ আনজুম আরা রহমান। আগ্রাবাদ ডেবা এলাকা নিয়ে প্রণীত অ্যাকশন এরিয়া প্ল্যান বিষয়ক উপস্থাপনা করেন স্থপতি ও আরবান ডিজাইনার ফাহাদ।
মাস্টারপ্ল্যান প্রকল্পের ড্রাফট ফাইনাল রিপোর্ট নিয়ে পরবর্তী বক্তব্য দেন চউকের বোর্ড সদস্য স্থপতি জেরিনা হোসেন, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (অতিরিক্ত কমিশনার) মো. হুমায়ুন কবির, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী মাহমুদুল হাসান খান, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সচিব মোহাম্মদ আশরাফুল আমিন এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স চট্টগ্রামের উপ-সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ আবদুল্লাহ। তারা মাস্টারপ্ল্যানের বিভিন্ন দিক নিয়ে মতামত ব্যক্ত করেন এবং পরিকল্পনার বাস্তবায়নযোগ্যতা, নিরাপত্তা, অবকাঠামো ও নাগরিক সেবার উন্নয়ন বিষয়ে মতপ্রকাশ করেন।
মো. নুরুল করিম বলেন, ‘এই মাস্টারপ্ল্যান একটি সমন্বিত, অংশগ্রহণমূলক ও বাস্তবভিত্তিক উদ্যোগ, যা সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনের মতামত ও পরামর্শের ভিত্তিতে চূড়ান্ত করা হবে। মাস্টারপ্ল্যানটি যেন বাস্তবায়নযোগ্য, টেকসই, পরিবেশবান্ধব এবং ভবিষ্যতের চট্টগ্রাম নগরীর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়, সে লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’
তিনি জানান, মাস্টারপ্ল্যান চূড়ান্তকরণের আগে সেক্টরভিত্তিক স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে পৃথকভাবে পরামর্শ সভার আয়োজন করা হবে, যাতে প্রকল্পটি সকলের মতের প্রতিফলন ঘটিয়ে একটি কার্যকর নগর পরিকল্পনা হিসেবে বাস্তবায়ন করা যায়। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের আওতায় বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চউক।
















