পটিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি: চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া উপজেলায় বসতভিটার জায়গা নিয়ে বিরোধের জেরে হামলা ও সংর্ঘষের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় দুই ভাইকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
শুক্রবার (১৩ জুন) রাত সাড়ে দশটার দিকে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় পটিয়া থানা পুলিশ চট্টগ্রাম কক্সবাজার মহাসড়কের মইজ্জ্যারটেক এলাকা থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করে।
গ্রেফতার গ্রেফকৃতরা হলেন সিরাজুল ইসলাম (৪৫) ও মো. ফোরকান (২৭)। তারা উভয়ে উপজেলার কোলাগাঁও ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের হাবিবুল্লাহ মাঝির বাড়ির মো. ইলিয়াছের ছেলে।
এর আগে গত ৬ জুন বসতভিটার জায়গা বিরোধকে কেন্দ্র করে বাদী ও আসামীদের মাঝে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। এতে বেশ কয়েকজন গুরতর আহত হন। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী হাসনা বানু গত মঙ্গলবার (১০ জুন) পটিয়া থানায় হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় ৭জনকে এজহারভুক্ত আসামী ও আরো অজ্ঞাত ৫-৬ জনকে আসামি করা হয়। হত্যাচেষ্টার এ মামলায় প্রধান ও দ্বিতীয় আসামী দুই ভাই মামলা দায়ের করার তিন দিনের মাথায় গ্রেফতার করে পুলিশ।
মামলার এজহার সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘ দিন ধরে বাদী ও বিবাদীদের মধ্যে জায়গা-জমি নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। প্রায় সময় আসামিরা বাদীকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি-ধমকি ও শারীরিক-মানসিকভাবে অত্যাচার করাসহ তার নির্মাণাধীন ঘরের বাউন্ডারি দেওয়াল ভেঙ্গে ফেলায় গত ২ মার্চ বাদি আসামিদের বিরুদ্ধে পটিয়া থানায় এজাহার দায়ের করে। যা বর্তমানে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত পটিয়ায় বিচারাধীন রয়েছে। তখন হতে আসামিরা আরো ক্ষিপ্ত ও আক্রমণাত্মক হয়ে বাদীকে প্রাণে মেরে ফেলার হত্যাসহ মামলা উঠিয়ে নেওয়ার জন্য হুমকি দিয়ে আসছে।
হাসনা বানু জানান, বিরোধের জের ধরে মামলার প্রধান আসামি সিরাজুল ইসলামের নেতৃত্বে ২, ৩ ও ৪ নম্বর আসামী দুই দফায় ঈদ-কোরবানি উপলক্ষে দা ও চুরি শান দেওয়ার সময় আমাকে প্রকাশ্যে হুমকি দেয় যে, ‘এই দা, চুরি দিয়ে শুধু গরু নয়, সুযোগ পাইলে কয়েকজনকে জবাই করে এবং যেকোন উপায়ে কোন ধরনের বসত ঘর নির্মাণ কাজ করতে দিবে না।’ তারই ধারাবাহিকতায় গত ৮ জুন সকাল সাড়ে ১১টার দিকে কোরবানির পরের দিন কোন কারণ ছাড়া আমার ছোট ভাইরা ঈদ উপলক্ষে বাড়িতে বেড়াতে আসলে প্রধান আসামি অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। আমি তার কারণ জিজ্ঞাসা করলে সিরাজুল ইসলাম আমার গলা চেপে ধরে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয় ও ৫ নম্বর আসামি মামুনুর রশীদ আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গলার কণ্ঠনালী চেপে ধরে শ্বাসরোধ করার চেষ্টা করে। এই সময়ে আমি চিৎকার করলে আমার ভাইয়েরা দৌঁড়ে এসে আমাকে উদ্ধার করার সময় অপরাপর আসামিরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে সজ্জিত হয়ে আমার ছোট ভাইদের উপর হামলা চালায়। একপর্যায়ে ৩ নম্বর আসামি বোরহানের হাতে থাকা চাইনিজ কুড়াল দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে আমার ভাই এনায়েত উল্লাহকে এলোপাতাড়ি কোপ মারতে থাকে। এ সময় এনায়েত উল্লাহর ডান চোখের নিচে গুরুতর জখম প্রাপ্ত হয়। ২ নম্বর আসামি ফোরকানের হাতে থাকা লোহার রড দিয়ে আমার ভাইকে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথায় বারি মারলে বাম চোখের কপালের পাশে গুরুতর জখম প্রাপ্ত হয়। এ সময় স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে প্রথমে পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক এনায়েত উল্লাহকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করে এবং আহত জাফর উল্লাহকে চিকিৎসা দেন। অপর আহত আফাজ উল্লাহকে স্থানীয় কর্ণফুলী চক্ষু ও ডায়াবেটিকস হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
এর আগেও একই ঘটনায় গত ১১ জানুয়ারি সংর্ঘষের ঘটনা ঘটে। সেই ঘটনায় ২ মার্চ ভুক্তভোগী হাসনা বাবু বাদী হয়ে পটিয়া থানায় আরও একটি হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের করেন। সে মামলায় গ্রেফতার প্রধান আসামি করা হয় মো. ইলিয়াসকে। মামলায় ১২ জনকে এজহারভুক্ত আসামী ও আরো অজ্ঞাত ৭-৮ জনকে আসামি করা হয়। এ মামলায়ও আসামি হন গ্রেফতার সিরাজুল ইসলাম ও মো. ফোরকান।
পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জায়েদ মো. নাজমুন নুর বলেন, ‘কোলাগাঁও এলাকার বসতভিটার জায়গা বিরোধ নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে উভয়ের মাঝে বিরোধ চলে আসছে। আসামিরা বাদী ও তার পরিবারের সদস্যদের উপর পরপর কয়েক বার হামলা করে আহত করেন। এ ঘটনায় থানায় দুই পৃথক মামলা দায়ের করা হয়েছে। সে মামলায় দুই সহোদরকে রাতে গ্রেফতার করা হয়েছে। শনিবার তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ মামলায় অন্য আসামিদেরকেও আইনের আওতায় আনা হবে।