চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ১৫৬ চিকিৎসককে বদলি করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। আগামী বুধবারের মধ্যে তাদের নতুন কর্মস্থলে যোগদান করতে বলা হয়েছে।
সোমবার (৫ জুলাই) মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব জাকিয়া পারভিন স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনটিতে বলা হয়- ‘কোভিড-১৯ অতিমারি মোকাবিলা এবং জনসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিম্নে বর্ণিত স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের সংযুক্তিতে পদায়ন করা হলো।’
আদেশ অনুযায়ী, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে ৬০ জনকে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে, ৩০ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, ১৮ জনকে খাগড়াছড়িতে, ২৪ জনকে ফেনীতে, ১৬ জনকে বিআইডিআইডিতে, ৮ জনকে ফটিকছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বদলি করা হয়েছে।
এদিকে, এত চিকিৎসককে একসঙ্গে বদলি নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন চিকিৎসক সংগঠনের নেতারা। এছাড়া এই বদলির ফলে চমেকের চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার আশঙ্কা জানিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও।
চিকিৎসক নেতারা বলছেন, চমেক হাসপাতালে তো কেবল করোনা রোগীর চিকিৎসা হয় না। এখানে করোনা ওয়ার্ডের ২৫০ রোগী ছাড়াও প্রায় দুই হাজার রোগী আছে। একযোগে এত চিকিৎসককে বদলি করায় হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ড তো বটেই, স্বাভাবিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটবে।
তাছাড়া হাসপাতালের বিশেষায়িত ইউনিটের বেশ কয়েকজন চিকিৎসককে বদলি করা হয়েছে। যাদের বদলিতে হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থায় মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটবে। এই বিশেষায়িত চিকিৎসকদের যেখানে বদলি করা হয়েছে, সেখানে তাদের কোনো কাজ নেই।
আবার, বদলি হওয়া চিকিৎসকদের চট্টগ্রাম ছাড়াও খাগড়াছড়ি, ফেনী এবং আশপাশের জেলা ও উপজেলা হাসপাতালে বদলি করা হয়েছে। লকডাউন চলাকালে কীভাবে এত দ্রুত তারা কর্মস্থলে যোগদান করবেন সেটি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন চিকিৎসকরা।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) চট্টগ্রাম শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চট্টগ্রাম বিভাগের উন্নত চিকিৎসার একমাত্র হাসপাতাল। এখানে শুধু করোনা নয়, নিয়মিত অনেক জটিল রোগী ভর্তি হন এখানে। চিকিৎসা ব্যবস্থাও খুব উন্নত। এতো বিপুল সংখ্যাক সিনিয়র চিকিৎসককে একযোগে বদলীতে হাসপাতালের জটিল রোগীরা মারাত্মক ভোগান্তিতে পড়বে। সবচেয়ে বড়ো কথা হাসপাতালের করোনা পরীক্ষার ল্যাব প্রধানকেও বদলি করা হয়েছে। এতে করে করোনা ল্যাবটি অচল হয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
চিকিৎসক নেতা ডা. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী আরো বলেন, বগুড়ায় করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন ডা. জীবেশ কুমার প্রামাণিকের নামও বদলির তালিকায় রাখা হয়েছে। এতে করে বোঝা যায় এটি অপরিকল্পিত বদলি। এই অপরিকল্পিত বদলির মাধ্যমে চমেক হাসপাতালের স্বাভাবিক চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে এবং সাধারণ রোগীরা কষ্ট পাবে। আমি মনে করি, স্বাস্থ্যখাতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অর্জনকে ম্লান করার জন্য এ বদলি আদেশ হয়েছে।
কোভিড-১৯ মোকাবিলায় গঠিত স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) বিভাগীয় সমন্বয়ক ও সাংগঠনিক সম্পাদক আ ম ম মিনহাজুর রহমান বলেন, ‘চমেক হাসপাতালে কোভিড রোগীর পাশাপাশি নন-কোভিড রোগীও আছে। একসঙ্গে এত চিকিৎসককে বদলিতে চমেকের চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে।’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্বে থাকা চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন- জেনারেল হাসপাতালে বর্তমানে উপজেলা পর্যায়ের ৬০ জনের মতো চিকিৎসক কর্মরত আছেন। এখন উপজেলা পর্যায়ে করোনা সংক্রমন বেড়ে যাওয়ায় এসব চিকিৎসককে হয়তো নিজেদের পুরণো কর্মস্থলে ফিরিয়ে নেয়া হতে পারে। চমেক থেকে ৬০ জন চিকিৎসককে পদায়নে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে পদায়ন করা হয়েছে। উনারা সব সিনিয়র চিকিৎসক। এত সংখ্যক চিকিৎসককে এক সাথে বসতে দেয়ার মতো জায়গার সংস্থান হবে কী না, একটু দ্বিধা রয়েছে।