পবিত্র রমজান মাস আসছে। এই মাসকে সামনে রেখে মুসলমানরা প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে সাধারণ মানুষ জীবনযাত্রার ব্যয় সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। এর মাঝে মার্চে শুরু হতে যাওয়া রমজানে, পণ্যের দাম কেমন হতে পারে এ নিয়ে শঙ্কিত মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষ।
তাই বিষয়টি মাথায় রেখে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। ফলে ভোগ্যপণ্যের দাম এখনও পর্যন্ত স্থিতিশীল রয়েছে। বিশেষ করে রমজান মাসে অত্যাবশ্যকীয় খেজুর ছোলার বাজার কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। তবে এখনও সয়াবিন তেলের সংকট কাটেনি। মুদি দোকানে গিয়ে সয়াবিন তেল পাওয়া যায়না। ফলে অনেকে সরিষার তেল রান্নায় ব্যবহার করছেন।
তবে অস্থিরতা রয়ে গেছে সয়াবিন তেলের বাজারে। ভোজ্যতেলের সরবরাহ সংকট এখনো কাটেনি। বিভিন্ন দোকান ঘুরে সয়াবিন তেলের দেখা মেলেনি। সরবরাহ সংকটের সুযোগ নিয়ে কিছু কিছু বিক্রেতা ১৭৫ টাকা লিটারের তেল ২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছেন বলে ক্রেতাদের অভিযোগ। অনেকে তেলের বোতল কেটে ড্রামে ঢেলে চড়া দামে খুচরায় বিক্রি করছেন।
সয়াবিন তেল না কিনে সরিষার তেল কিনেছেন রায়হান নামের একজন ক্রেতা। তিনি বলেন, রমজানের আগে সয়াবিন তেলের চাহিদা যখন বেড়ে যায় সরবরাহকারীরা তখন ইচ্ছাকৃতভাবে সরবরাহ কমিয়ে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে। এটি মানুষের পকেট কাটার ধান্দা। এবার অন্যসব পণ্যের মুনাফা তেলে উঠাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। সয়াবিন না পেয়ে সরিষার তেল কিনেছি।
বাজারে কেন সয়াবিনের সংকট এমন প্রশ্নের জবাবে ডিরাররা বলছেন, মিলমালিকরা দাম বাড়াতে চান বলে কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছেন। তবে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে সয়াবিন তেলের সংকটের পেছনে কলকাঠি নাড়ছে এস আলম ও বসুন্ধরা গ্রুপসহ বড় বড় কয়েকটি শিল্প গ্রুপ। অন্যদিকে সবজি, আলু, পেঁয়াজ, ডিম, মাছ ও মুরগির বাজার অনেটাই স্থিতিশীল রয়েছে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সকালে বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের একাধিক বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
বহদ্দারহাট কাঁচা বাজারে গিয়ে দেখা যায়, ছোলা বিক্রি হচ্ছে ১০৫-১১০ টাকা কেজি দরে। গত বছর রমজানেও এ দামে ছোলা কেনা গেছে। একইভাবে খেসারির ডাল ১১০-১২০ টাকা ও মসুর ডাল ১২০-১৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
এ বাজারের মুদি দোকানি আমিন বলেন, ডালজাতীয় কোনো পণ্যের দাম বাড়েনি, বরং কমেছে কিছুটা। আগের বছর রমজানেও এমন দাম ছিল। মাঝে মসুরের দাম কিছুটা বেড়েছিল, এখন সেটা কমেছে। মাস দুই আগে চিনির দাম উঠেছিল ১২৫-১৩০ টাকায়। এখন তা কিছুটা কমে ১১৫-১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে জানান এ বিক্রেতা।
এদিকে রমজান ঘিরে বাজারে মুড়ি ও খেজুরের চাহিদাও বাড়ে। বাজারে এখন প্রতি কেজি মুড়ি ৮০-৯০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। গত বছরও এমন দাম ছিল বলে জানান বিক্রেতারা। তবে খেজুরের দাম কিছুটা কমছে। গত বছর রমজানের আগে পণ্যটির দাম অস্বাভাবিক বেড়েছিল। এবার সে তুলনায় খেজুরের বাজার স্থিতিশীল। প্রতি কেজি সাধারণ মানের খেজুর ২৫০-৩০০ টাকা এবং ভালো মানের খেজুর ৪০০-৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে সবজির দাম আগের মতই রয়েছে। স্বস্তি রয়েছে ডিমেও। বাজারে সবজির সরবরাহ বেশি থাকায় দাম আরও কমেছেম। বর্তমানে শালগম ৩০-৪০ টাকা, ধরনভেদে শিম ৩০-৫০ টাকা ও টমেটো ২০-৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এছাড়া বেগুন ৪০-৫০ টাকা, পেঁপে ৩০-৪০ টাকা ও লাউ ২০-৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আলুর কেজি এখন ২০-২৫ টাকা।
বাজারে ফার্মের মুরগির ডিমের দামও সহনশীল রয়েছে। প্রতি ডজন কেনা যাচ্ছে ১৩৫-১৪০ টাকায়। ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১৯০ থেকে ২০০ টাকায়। সোনালি মুরগির কেজি ৩০০-৩২০ টাকা। মাছ ও মাংসের দাম আগের মতই রয়েছে।
সি-বার্তা/এটি