চট্টগ্রাম: অপরাধীর পরিচয় শুধু অপরাধীই হিসেবে। তার পরিচয় কোন দল গোষ্ঠী হিসেবে নয় বলে মন্তব্য করেছেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এএফ হাসান আরিফ।
তিনি বলেছেন, ‘কোন একজন ব্যক্তি যদি কোন সন্ত্রাসী কার্যক্রম করে থাকে, তাহলে সে ব্যক্তিটিই দায়ী হবে। তার ব্যক্তি পরিচয়, সামাজিক পরিচয়, ধর্মীয় পরিচয়, রাজনৈতিক পরিচয় কোন কিছুই সামনে আসবে না। ওঠে আসবে শুধু এই ব্যক্তি সন্ত্রাসী। তাই, কাউকে কোন সংগঠনের বলাটা আমরা পরিহার করি। একক অপরাধের জন্য কোন সংগঠন, দল বা কোন গোষ্ঠীকে আঙ্গুল তোলা উচিত নয়।’
বুধবার (২৭ নভেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে চট্টগ্রামে উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত আলোচনা সভায় উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র শাহাদাত হোসেন।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় সভায় হাসান আরিফ আরো বলেন, ‘আইন অনুযায়ী সন্ত্রাসী কার্যক্রমের জন্য যে সাজা হওয়া দরকার, সেটা রাষ্ট্রদ্রোহিতায় হোক বা আলিফের হত্যাকাণ্ডের উস্কানি দাতা হোক, অপরাধের জন্য তাকে শাস্তি পেতে হবে। গেল দুই মাসের মধ্যে চট্টগ্রামে যে ঘটনাগুলো ঘটে গেছে, ধারাবাহিকভাবে কেউ যদি কোন সংগঠনের পরিচয়ে অপব্যবহার করে থাকে, সেটা তার ব্যক্তিগত অপরাধ। সেই ব্যক্তি দোষী হবেন, কোন সংগঠন নয়। ওই ব্যক্তির ধর্মীয় পরিচয়, রাজনৈতিক পরিচয়, সামাজিক পরিচয় আসবে না, তখন শুধু তার পরিচয় হবে শুধু অপরাধী।’
তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে অনেকেই অপরাধ কর্মকাণ্ডগুলো করে যাচ্ছে, সেই স্বৈরাচারী কর্মকাণ্ডের ধারাবাহিকতায়। যেহেতু তাদের এখনো পর্যন্ত আইনের আওতায় আনা হয়নি। এ জন্য তারা এসব করার সুযোগ পেয়েছে। এখনই সময় এসেছে, যারা নিষিদ্ধ সংগঠনের (ছাত্রলীগ) সদস্য ছিলেন, তাদের আইনের আওতায় আনা। তাদের এই মুহূর্তে বাইরে রাখলে, আমাদের আশঙ্কা, সমাজের আশঙ্কা যে তারা এ ধরনের কর্মকাণ্ড করে যাবে। এ জন্য আমরা সতর্ক থাকি। পারস্পরিক সৌহার্দ্য যেটা আজীবন ছিল, আগামীতেও থাকবে। সেটা বজায় রাখি ও সকলে মিলে আমরা একটি সন্ত্রাসমুক্ত সমাজ গড়ি।’
শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বলেছিল, আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থেকে চলে গেলে লাখ লাখ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হত্যা করা হবে। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত কোন ধরনের হামলা কিংবা কোন রাজনৈতিক দলের কারণে কোন আওয়ামী লীগের নেতা তো নয়, কোন সনাতনী সম্প্রদায়ের নয়, চট্টগ্রাম কোন নাগরিক হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়নি।’
আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার কথা তুলে ধরে মেয়র বলেন, ‘আলিফকে অত্যন্ত বর্বরতার সাথে মধ্যযুগীয় কায়দায় প্রফেশনালি মারা হয়েছে। তাই, এটা পেশাদার খুনি ছাড়া এ রকম কেউ করতে পারে না। আমি মনে করি, ধর্ম, বর্ণ ও রাজনৈতিক নাম নিয়ে সন্ত্রাসী যেই হোক না কেন, তার কোন দল, ধর্ম ও বর্ণ নেই। সে সন্ত্রাসী হিসেবেই পরিচিত হবে। আর তাকে সর্বোচ্চ শাস্তি পেতে হবে। সে যেই হবে যেখান থেকে হবে, উঠিয়ে এনে চট্টগ্রামবাসী তার বিচার করবে। কোন রেহাই সে পাবে না।’
ধর্মের নামে সন্ত্রাসী যুবলীগ, ছাত্রলীগের ক্যাডারা এখনো মিছিল করে বেড়াচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ধর্মের নাম নিয়ে যেসব সন্ত্রাসী যুবলীগ, ছাত্রলীগের ক্যাডারা এখনো মিছিল করে বেড়াচ্ছে, তাদের গ্রেফতার করা হবে। তারা প্রায় এক হাজার ছাত্র-জনতা-শ্রমিককে খুন করেছে। অবৈধ অস্ত্র যতক্ষণ পর্যন্ত উদ্ধার করা হবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত সন্ত্রাসীরা মাথা ছাড়া দিবে এবং এসব কাজ করবে।’
সভায় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার হাসিব আজিজ, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম, চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমীর শাহজাহান চৌধুরী, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, সারজিস আলম, রাসেল আহমদ, খান তালাত মাহমুদ রাফি, চট্টগ্রাম মহানগর পিপি অ্যাডভোকেট মফিজুল হক ভুঁইয়া, হিন্দু বৌদ্ধ ক্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের ভাইস চেয়ারম্যান আরকে দাস রুপু, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রাজীব ধর তমাল, সদস্য বিপ্লব পার্থ, চট্টগ্রাম মহানগর সদস্য সচিব বাপ্পি দে, দক্ষিণ জেলার সদস্য সচিব উজ্জ্বল বরন বিশ্বাস, সদস্য সৌরভ প্রিয় পাল ও বিপ্লব চৌধুরী বিল্লু।