চট্টগ্রাম: কেবল হাজার-হাজার কোটি টাকা খরচের প্রকল্প করে চট্টগ্রাম সিটির জলাবদ্ধতা নিরসন সম্ভব নয়। বরং প্রকল্পের পাশাপাশি জনসচেতনতা, পরিবেশ রক্ষা,পরিকল্পিত নগরায়ন ও সেবা সংস্থাগুলোর মাঝে সমন্বয়ও জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক)মেয়র শাহাদাত হোসেন।
মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) সিটির টাইগারপাসস্থ চসিকের কার্যালয়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক) চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. নুরুল করিমের সঙ্গে জলাবদ্ধতা নিরসণে করণীয় নিয়ে আলোচনায় এ মন্তব্য করেন মেয়র। সভায় উপস্থিত ছিলেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, সচিব মো. আশরাফুল আমিন, প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার লতিফুল হক কাজমি, প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবুল কাশেম, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ফরহাদুল আলম এবং চউকের জলাবদ্ধতা নিসরন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. ফেরদৌস আহমেদ, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এএএম হাবিবুর রহমান।
সভায় শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘সিটির জলাবদ্ধতা নিরসনে চসিক, চউক, ওয়াসা, পানি উন্নয়ন বোর্ড, চট্টগ্রওাম বন্দরসহ সব সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। কেবল হাজার-হাজার কোটি টাকা খরচের প্রকল্প করে চট্টগ্রাম সিটির জলাবদ্ধতা নিরসণ সম্ভব নয়। বরং, প্রকল্পের পাশাপাশি জনসচেতনতা, পরিবেশ রক্ষা ও পরিকল্পিত নগরায়নও জরুরি।’
খাল-নদী রক্ষায় আইনের প্রয়োগ প্রয়োজন উল্লেখ করে মেয়র বলেন, ‘আমি বাকলিয়ায় কৃষিখালে গিয়ে দেখলাম, খালটা যেন ডাম্পিং স্টেশন হয়ে গেছে। অথচ বাকলিয়া এলাকার জলাবদ্ধতার পানি নিরসনে খালটি বহু গুরুত্বপূর্ণ। চাক্তাই খালেরও বহু স্থানে ৭-৮ তলা বিল্ডিং হয়ে গেছে। অন্যান্য খালেও দখল ও বর্জ্য নিয়ে একই সমস্যা; যা শহরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করছে, কর্ণফুলীকেও খুন করছে। এ জন্য আমার মনে হয়, প্রয়োজনে কঠোর আইনি পদক্ষেপ নেয়া দরকার। আমি হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়াব না। তবে, যারা নিয়ম মানছে না, আইনের মধ্যে চলছে না অথবা সুন্দর শহর গড়ার আমাদের যে প্রত্যয় সেটার বিরুদ্ধে কাজ করছে, যারা নালা-খাল ময়লা-দখল করে তাদের জরিমানা করব।’
জলাবদ্ধতা নিরসনে ওয়াসাকেও ভূমিকা রাখতে হবে উল্লেখ করে শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আমার বিকল্প কিছু পরিকল্পনা আছে জলাবদ্ধতার জন্য। এই যে বর্ষাকালে অতিরিক্ত যে পানিটা আসে, সেটা যদি আমরা সংরক্ষণ করতে পারি, তাহলে অতিরিক্ত পানি যেগুলো নালাতে চলে যাচ্ছে, সেগুলো সংরক্ষণ হলে জলাবদ্ধতা কমবে এবং মাটির নীচের পানির স্তরও রক্ষা পাবে। চউকেরও উচিত বাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত জায়গা ছেড়ে বাড়ি করা হচ্ছে কী না তা নিশ্চিত করা। কারণ, পানি মাটির নীচে না যেতে পারায় কিন্তু ভূমি ধীরে ধীরে নীচে নেমে যাচ্ছে এবং ভূমিকম্প ও ভূমিধ্বসের ঝুঁকি বাড়ছে।’
সভায় মো. নুরুল করিম বলেন, ‘চউকের জলাবদ্ধতা নিরসণ প্রকল্প দ্রত এগিয়ে যাচ্ছে। চট্টগ্রাম সিটির জলাবদ্ধতা নিরসণসহ জনস্বার্থে সব বিষয়ে চসিকের সাথে চউক একযোগে কাজ করবে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা জলাবদ্ধতা নিরসনের ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ। ময়লার এসটিএস নির্মাণ করার জন্য কোথাও ভূমির প্রয়োজন হলে, চউককে জানালে বিবেচনা করা হবে। বর্তমানে চউক ৫৭টি খালের মধ্যে ৩৬টি খালের কাজ করছে। বাকী ২১টি খাল আদৌ বেঁচে আছে কীনা, থাকলে সেগুলো কীভাবে উদ্ধার করা যায়, তা জানতে বাকী খালগুলো নিয়েও সমীক্ষা প্রয়োজন।’
মো. ফেরদৌস আহমেদ প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে মেয়রকে অবহিত করেন। প্রকল্পটির কারণে গেল বছরের তুলনায় এ বছর চট্টগ্রাম সিটিতে জলাবদ্ধতা তুলনামূলক কম স্থানে হয়েছে এবং জমাটবদ্ধ পানি দ্রুত অপসারিত হয়েছে বলে জানান তিনি।
মো. ফেরদৌস আহমেদ বলেন, ‘প্রকল্পের ভৌতিক কাজের অগ্রগতি ৭৩ শতাংশ। খাল দখল করে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে খাল উদ্ধার করার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই প্রকল্প দ্রত এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা খাল খনন করলেও পানিতো শহর থেকে নালার মাধ্যমে খালে আসতে হবে। যততত্র পলিথিন, ময়লা ইত্যাদি ফেলে নালা ভরাট করে ফেললে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হয়ে শহরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতে পারে। কর্ণফুলীর তলদেশও এ কারণে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এ জন্য জনগণকে সচেতন করার জন্য ব্যাপক কার্যক্রম হাতে নেয়া উচিৎ।’
‘জলাবদ্ধতা নিরসণে পাহাড় রক্ষাও জরুরি। একটি অসাধু চক্র বর্ষার পূর্বে পাহাড়ে এমনভাবে মাটি কাটে; যাতে বৃষ্টি হলে পানির সঙ্গে পাহাড় ধ্বসে যায়। এই মাটি পরে নালায় গিয়ে নালা জ্যাম করে ফেলে। এ জন্য পাহাড় রক্ষা করতে হবে। পাশাপাশি ওয়ার্ড পর্যায়েও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।’
সভায় লতিফুল হক কাজমি বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যতে করণীয় তুলে ধরেন।
ফরহাদুল আলম চউকের খাল খনন প্রকল্প শেষ হলে প্রকল্পটির ব্যবস্থাপনা ও দক্ষ জনবল সৃষ্টির বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ প্রয়োজন বলে জানান।