নিজস্ব প্রতিবেদক: করোনার ঊর্ধ্বগতি রোধে সরকার ঘোষিত সাত দিনের কঠোর লকডাউন চলছে। কঠোর লকডাউনের চতুর্থ দিনে নগরের বিভিন্ন স্থানে জেলা প্রশাসনের ১০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছেন।
সরকারি আদেশ অমান্য করে রাস্তায় বের হওয়ায় বিভিন্ন জনকে জরিমানা করাসহ সচেতনতামূলক মাস্ক বিতরণ এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশনা দিয়েছেন। নগরের পাশাপাশি আশেপাশের উপজেলায়ও কঠোর লকডাউন পালন করা হচ্ছে। এতে গণমাধ্যমে ওঠে আসা উপজেলার চিত্র দেখে মনে হচ্ছে নগরে লকডাউন পালনে কিছুটা শীথিলতা ভাব দেখা যাচ্ছে। আর গ্রামে কঠোরতা পরিলক্ষিত হচ্ছে।
বিভিন্ন উপজেলায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকারি নির্দেশনার কারণে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে শহর ও গ্রামাঞ্চলের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। শুধুমাত্র কাঁচাবাজার, ওষুধের দোকান ও নিত্যপণ্যের দোকান খোলা রাখার অনুমতি দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। এসব দোকানও সন্ধ্যার পর খোলা রাখা যায় না। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় ইনকাম নাই। জনশূন্য হয়ে পড়েছে রাস্তা-ঘাট। দিশেহারা নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষ ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।
এদিকে, জেলা-উপজেলায় মাইকিং করে দোকানপাট, যান চলাচল বন্ধ রাখাসহ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশনা অব্যাহত রেখেছে স্থানীয় প্রশাসন। আর এসব নির্দেশনা কার্যকর করতে প্রশাসনের পাশাপাশি কাজ করছে সেনাবাহিনী ও পুলিশ।
অটোচালক কামাল হোসেন বলেন, ‘লোকজন নেই, সে জন্য যাত্রী মিলছে না। বর্তমানে এমন অবস্থা সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ৪০ টাকা রোজগার করেছি। রোজগার করতে না পারলে, পরিবারের মুখেও খাবার জুটবে না। স্ত্রী সন্তানসহ ৭ সদস্যের সংসার আমার।’
গ্রাম্য বাজারের এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মোঃ আনোয়ার বলেন, ‘সরকারের এমন নির্দেশনাকে আমরা স্বাগত জানাই কিন্তু আমার মত ব্যবসায়ীরা এই লকডাউনে অসহায় হয়ে পড়েছি। ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে ব্যবসা শুরু করেছি। লোনের টাকা ব্যাংকে জমা দিতেই হবে। তাছাড়া ঠিকমতো দোকান খোলা না গেলে ঘর ভাড়া,বিদ্যুৎ বিল, দোকানের কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দেওয়া কোন ক্রমেই সম্ভব হবে না। তাই বিপাকে পড়েছি।’
তথ্যমতে, গত ৪ দিনের ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান, হাটে বাজারে কড়াকড়ি, চেকপোস্টে তল্লাশি ছিল শহরের চেয়ে গ্রামে বেশি। অথচ গ্রামের মানুষের অভাবে বেশি। কর্মহীন বিপাকে পড়া মানুষজন পুলিশের ভয়ে বাসা থেকেও বের হতে পারছেন না।
শহরের মানুষ নানা সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে। খোলাবাজারে টিসিবিসহ সিটি করপোরেশন কতৃক ন্যায্যমূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীও কিনতে পারছে। কিন্তু গ্রামের সহজ সরল মানুষ কঠোর লকডাউনে বড় অসহায় হয়ে পড়ছেন।
রোববার চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ১০ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বিধিনিষেধ অমান্য করায় নগরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ৪৪ মামলার প্রায় ১৭ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন। নগরের বায়েজিদ ও খুলশী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাঈমা ইসলাম। তিনি ৬টি মামলায় ৮০০ টাকা জরিমানা আদায় করেন। নূরজাহান আক্তার সাথী হালিশহর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ২টি মামলায় ১ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন।
ডবলমুরিং ও বন্দর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাসুমা জান্নাত। তিনি ৪টি মামলায় ৬০০ টাকা জরিমানা আদায় করেন। পাহাড়তলী ও আকবরশাহ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেন মোহাম্মদ আতিকুর রহমান। তিনি ১টি মামলায় ২০০ টাকা জরিমানা আদায় করেন।
কোতোয়ালী ও সদরঘাট এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেন আবদুল্লাহ আল মামুন। তিনি ৬টি মামলায় ১ হাজার ৯০০ টাকা জরিমানা আদায় করেন। হুছাইন মুহাম্মদ অভিযান পরিচালনা করে ৫টি মামলায় ১ হাজার ৮০০ টাকা জরিমানা আদায় করেন।
ইপিজেড ও পতেঙ্গা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেন আশরাফুল হাসান। তিনি ৮টি মামলায় ৬ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা আদায় করেন। পাঁচলাইশ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেন মো. জিল্লুর রহমান। তিনি ৫টি মামলায় ১ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা আদায় করেন।
হালিশহর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেন প্লাবন কুমার বিশ্বাস। তিনি ৩টি মামলা দায়ের করে ১ হাজার ২০০ টাকা জরিমানা আদায় করেন। চান্দগাঁও এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেন প্রতীক দত্ত। তিনি ৪টি মামলায় ১ হাজার ৪৫০ টাকা জরিমানা আদায় করেন।
একইদিন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মারুফা বেগম নেলী ও স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট জাহানারা ফেরদৌস বিধিনিষেধ ও স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করায় ৭ জনকে ১ হাজার ১০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছেন।
গত শনিবার তৃতীয় দিনে নগরের বিভিন্ন স্থানে জেলা প্রশাসনের ৯ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ৪৫টি মামলায় ২৪ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন।
অপরদিকে, পার্শ্ববর্তী উপজেলা সমূহে লকডাউনের চতুর্থ দিনেও কঠোর অবস্থানে ছিল প্রশাসন। তথ্য উপাত্ত থেকে জানা যায়, তৃতীয় দিনে হাটহাজারীতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রুহুল আমিন ও সহকারি কমিশনার (ভূমি) শরীফ উল্যাহ অভিযান চালিয়ে ৪২ মামলায় ১২ হাজার দুইশ টাকা জরিমানা করেছেন।
কর্ণফুলীতে সহকারি কমিশনার (ভূমি) সুকান্ত সাহা অভিযান চালিয়ে ২৫ মামলায় ২১ হাজার ৪০০ টাকা জরিমানা ও দুটি দোকান সিলগালা করেছেন। চতুর্থদিনে করেছেন ১২ মামলায় ৭ হাজার টাকা।
আনোয়ারা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শেখ জুবায়ের আহমেদ ও সহকারি কমিশনার (ভূমি) তানভীর হাসান চৌধুরী অভিযান চালিয়ে ২২ মামলায় ১৬ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করেছেন।
চন্দনাইশে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাদিয়া ইসলাম ও সহকারি কমিশনার (ভূমি) মাহফুজা জেরিন অভিযান চালিয়ে ৩৩ মামলায় ১২ হাজার একশ টাকা জরিমানা করেছেন।
লোহাগাড়ায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সমির চক্রবর্তী অভিযান চালিয়ে ৩১ মামলায় ৪ হাজার ৩৯০ টাকা জরিমানা করেছেন।
রাঙ্গুনিয়ায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাজীব চৌধুরী অভিযান চালিয়ে ৮ মামলায় ৪ হাজার ৪০০ টাকা জরিমানা করেছেন।
মীরসরাই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মিনহাজুর রহমান ও সহকারি কমিশনার (ভূমি) সুবল চাকমা অভিযান চালিয়ে ৭ প্রতিষ্ঠানকে ১১শ টাকা জরিমানা ও বাশখালীতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাইদুজ্জামান চৌধুরী ও সহকারি কমিশনার (ভূমি) মোঃ মাযহারুল ইসলাম।