চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম সিটির হাজারি গলিতে যৌথবাহিনীর অভিযানে এসিড নিক্ষেপ করা হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে এখন পর্যন্ত সন্দেহভাজন ৮০ জনকে আটক করা হয়েছে। ওই এলাকায় জোরদার করা হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। তবে, পুরো এলাকায় এখনো থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
বুধবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে সিটির দামপাড়ায় সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড ক্যাম্পে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানায় যৌথবাহিনী। যৌথবাহিনীর পক্ষে টাস্কফোর্স-৪’-এর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফেরদৌস আহমেদ সংবাদ মাধ্যমকর্মীদের সাথে কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত উপকমিশনার (জনসংযোগ) কাজী মো. তারেক আজিজ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়নের (র্যাব) প্রতিনিধি।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফেরদৌস আহমেদ বলেন, ‘বিভিন্ন সিসিটিভি ফুটেজ ও গোয়েন্দা তথ্য যাচাই-বাচাইয়ের মাধ্যমে প্রকৃত দুষ্কৃতকারীদের শনাক্তকরণের প্রক্রিয়া চলছে।’
‘আটক ব্যক্তিদের সংশ্লিষ্ট থানায় প্রয়োজনীয় জিজ্ঞাসাবাদসহ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আদালতে হস্তান্তরের ব্যাপারটিও প্রক্রিয়াধীন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যৌথবাহিনীর অভিযান অব্যাহত রয়েছে এবং হাজারি গলিসহ সিটির অন্যান্য এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে এই সেনাকর্তা বলেন, ‘আইন তার নিজস্ব ধারায় চলবে। মাঠপর্যায়ে আমরা গোয়েন্দা তথ্য যাচাই বাছাই করছি। সে অনুযায়ী আমরা আইনি প্রক্রিয়াগুলো সম্পন্ন করবো। সরকার পতনের পর যেসব শান্তিপূর্ণ সমাবেশ হচ্ছে, সেসব সমাবেশে যেন শান্তি বিঘ্নিত না হয়, আমরা সেজন্য সরকারের গাডলাইন অনুযায়ী কাজ করেছি।’
হাজারি গলির দোকান সিলগালার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যেহেতু ওই এলাকায় সেনা ও পুলিশ সদস্যের ওপর এসিড নিক্ষেপ করা হয়েছে- সেই প্রেক্ষিতে ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে দোকানগুলো সিলগালা করা হয়। আমরা সংশ্লিষ্টতা খুঁজে বেড়াচ্ছি। অতিসত্বর তদন্তকার্যক্রম শেষ করে দোকানগুলোর স্বাভাবিক কার্যক্রম নিশ্চিত করা হবে।’
আটক ব্যক্তিদের রাজনৈতিক পরিচয় রয়েছে কিনা- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘দুষ্কৃতকারীদের কোন পলিটিকেল পরিচয় আসলে থাকে না। তাদের জাতি, ধর্ম, বর্ণ নেই।’
ফেরদৌস আহমেদ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘গতকাল মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) বিকাল সাড়ে পাঁচটায় ওসমান আলী নামে একজন ব্যক্তির ইসকন বিরোধী একটি ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে টেরিবাজার এলাকার হাজারি লেইনে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। আনুমানিক ৫০০-৬০০ জন দুষ্কৃতকারী হাজারি লেনে ওসমান আলী ও তার ভাইকে হত্যা এবং দোকান জ্বালিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে জড়ো হয়। স্থানীয় কন্ট্রোল রুম থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সেনাবাহিনী, পুলিশ এবং বিজিবি সদস্যদের ছয়টি টহল দল সেখানে পৌঁছায়।’
তিনি বলেন, ‘বিশৃঙ্খলাকারীদের সংখ্যা বহু বেশি হওয়ায় জানমাল রক্ষা এবং মব জাস্টিস রোধে যৌথবাহিনী ওসমান আলী ও তার ভাইকে উদ্ধার করে। উত্তেজিত জনতাকে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সমাধানের বিষয়টি আশ্বস্ত করা সত্ত্বেও এক পর্যায়ে উগ্র বিশৃঙ্খলাকারীরা আরো আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। দুর্বৃত্তরা এ সময় যৌথবাহিনীর ওপর অতর্কিতভাবে জুয়েলারির কাজে ব্যবহৃত এসিড-হামলা চালায় এবং ভারী ইটপাটকেলসহ ভাঙা কাঁচের বোতল ছুঁড়তে শুরু করে।’
ফের হামলার কথা জানিয়ে ফেরদৌস আহমেদ বলেন, ‘ফলে সেনাবাহিনীর পাঁচজন সদস্য এবং সাত পুলিশ সদস্য আহত হয়। আহত সেনাসদস্যরা বর্তমানে চট্টগ্রাম সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এছাড়া, ঘটনাস্থলে দুর্বৃত্তরা ইট ছুঁড়ে সেনাবাহিনীর একটি গাড়ির সামনের কাঁচ ভেঙে ফেলে। উদ্ধার অভিযানের পর দুর্বৃত্ত শনাক্তকরণে যৌথবাহিনীর দশটি টহল দল আনুমানিক নয়টার দিকে ওই এলাকায় গেলে লুকিয়ে থাকা দুষ্কৃতকারীরা ফের যৌথবাহিনীর ওপর এসিড সদৃশ ছুঁড়তে শুরু করে। এ সময় যৌথবাহিনী ঘটনাস্থল থেকে ৮০ জন সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে আটক করতে সক্ষম হয়।’