চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডাক্তার অং সুই প্রু মারমা বলেছেন, ‘শরীরকে ঠিক রাখতে হলে পরিমাণ মত পুষ্টিকর খাদ্য খেতে হবে। পুষ্টিবান জাতি গঠনে পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবারের কোন বিকল্প নেই। পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণে নিজেদের পাশাপাশি অন্যদেরকেও উৎসাহিত করতে হবে। প্রতিনিয়ত পুষ্টিকর খাবার গ্রহণে গর্ভবতী মা ও শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষিত থাকে। পুষ্টি সমৃদ্ধ ও আয়োডিনযুক্ত খাবার নিশ্চিত করতে পারলে প্রত্যেকে সুস্থ থাকবে। এ জন্য সর্বত্র জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। মা ও শিশুর সুরক্ষায় নির্ধারিত টিকার পাশাপাশি ১০-১৪ বছর বয়সী কিশোরীদেরকে অনলাইনে রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে জরায়ু ক্যান্সার প্রতিরোধী এইচপিভি ভ্যাকসিন দিতে হবে। স্বাস্থ্য বিভাগের পাশাপাশি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ক্ষুদে ডাক্তারের মাধ্যমে জনসাধারণের মাঝে পুষ্টি বার্ত পৌঁছায় দিতে হবে। নগরীর ২৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চলমান কিশোরী-কিশোরী ক্লাবের পুষ্টি কার্যক্রম আরো বেগবান করতে হবে।’
মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) সকাল সাড়ে দশটায় চট্টগ্রাম সিটির কৃষ্ণকুমারী সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত কিশোর পুষ্টি ক্লাবের সদস্যদের ওরিয়েন্টেশন এবং এইচপিভি ভ্যাকসিন ক্যাম্পেইনের সচেতনতামূলক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের আয়োজনে ও ইউনিসেফের সহযোগিতায় সচেতনতামূলক এ ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠিত হয়।
সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডাক্তার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধের লক্ষ্যে পুরো দেশের মত গেল বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) থেকে চট্টগ্রামে শুরু হয়েছে মাসব্যাপী জাতীয় হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) টিকাদান ক্যাম্পেইন-২০২৪। আগামী ২১ নভেম্বর এ ক্যাম্পেইন সম্পন্ন হবে। শুক্রবার ও সরকারী ছুটির দিন ব্যতীত প্রতিদিন সকাল আটটা থেকে বিকেল সাড়ে তিনটা পর্যন্ত পঞ্চম-নবম শ্রেণির ১০-১৪ বছর বয়সী শিক্ষার্থী/কিশোরী ও স্কুল বহির্ভূত কমিউনিটির ১০-১৪ বছর বয়সী কিশোরীকে এইচপিভি ভ্যাকসিন দেয়া হবে। কিশোরীদেরকে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে এ ব্যয়বহুল এইচপিভি টিকা দেয়া হচ্ছে। এ ভ্যাকসিনে কোন ধরণের ঝুঁকি বা বন্ধ্যাত্ব হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এইচপিভি ভ্যাকসিনের অপপ্রচার বা গুজব রোধে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধে এইচপিভি টিকা বিশ্বব্যাপী পরীক্ষিত, নিরাপদ ও কার্যকর। এক ডোজ এইচপিভি টিকা নিলে জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধ করা যাবে। এটি কৈশোরকালীন স্বাস্থ্য সেবার এক নতুন দিগন্ত।’
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের জেলা স্বাস্থ্য তত্বাবধায়ক সুজন বড়ুয়ার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত ওরিয়েন্টেশনে স্বাগত বক্তব্য দেন কৃষ্ণকুমারী সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তামিজ উদ্দিন। ওরিয়েন্টেশনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইউনিসেফের অ্যাডেলেসেন্ট নিউট্রিশন ফ্যাসিলিটেটর শ্রাবনী সুলতানা সেতু। উপস্থিত ছিলেন জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের এমওসিএস ডাক্তার মো. নওশাদ খান, বিদ্যালয়ের সহকারী প্রদান শিক্ষক নিকাশ ধর, সিনিয়র শিক্ষক জাহানুর খান, কিশোরী ক্লাব সমন্বয়ক সিনিয়র শিক্ষক শাহেদা বেগম, কিশোরী ক্লাব সমন্বয়ক সিনিয়র শিক্ষক সুচনা রানী ধর।
ইউনিসেফের অ্যাডেলেসেন্ট নিউট্রিশন ফ্যাসিলিটেটর শ্রাবনী সুলতানা সেতু জানান, ইউনিসেফের কৈশোরকালীন পুষ্টি কার্যক্রমে অর্ন্তভূক্ত কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে কিশোর-কিশোরী ক্লাব তৈরী, পুষ্টি শিক্ষা কার্যক্রম, বিএমআই নির্ণয়, সাপ্তাহিক আয়রন ও ফলিক এসিড প্রদান, কৃমিনাশক ওষুধ প্রদান, সকল কার্যক্রমের তথ্য, কৈশোরকালীন পুষ্টি কার্যক্রম সেন্ট্রাল রিপোর্টিং সিস্টেম’-এ আপলোড করা, যারা অপুষ্টিতে ভূগছে তাদেরকে স্কুলের মাধ্যমে নিকটস্থ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রেফার করা, কিশোর-কিশোরী ক্লাবের মাধ্যমে নিউট্রিশন ইন্টারভেনশনপ্রদানের মাধ্যমে সব ছাত্র-ছাত্রীর স্বাস্থ্যের উন্নতি ও সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা।