চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতে ইসলামীর নির্বাচিত আমীর হিসেবে ২০২৫-২০২৬ কার্যকালের জন্য শপথ নিয়েছেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও প্রাক্তন সাংসদ শাহজাহান চৌধুরী।
সোমবার (২৮ অক্টোবর) সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের মজলিশে শূরার বিশেষ অধিবেশন ও শপথ অনুষ্ঠানে তিনি শপথ নেন। চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের দেওয়ানজি পুকুর লেনস্থ কার্যালয়ে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল ও নির্বাহী পরিষদ সদস্য মাওলানা মুহাম্মদ শাহজাহান। তিনি শাহজাহান চৌধুরীকে শপথ বাক্য পড়ান।
অধিবেশনে মুহাম্মদ শাহজাহান বলেন, ‘আল্লাহর প্রিয় বান্দারা দায়িত্ব আসার পর আল্লাহকে ভয় করে এবং তা পালনের জন্য পেরেশান থাকে। সংগঠনের সদস্যদের দায়িত্ব হল তার জন্য দোয়া ও প্রদত্ত দায়িত্ব পালনে সহযোগিতা করা।’
তিনি আরো বলেন, ‘সংগঠনের সব রুকন ও দায়িত্বশীলদের সংগঠন সম্প্রসারণে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে হবে।’
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগরী নায়েবে আমীর আজম ওবায়েদুল্লাহ ও মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম, নগর জামায়াতের প্রাক্তন নায়েবে আমীর আফসার উদ্দিন চৌধুরী, নগর সেক্রেটারি মুহাম্মদ নুরুল আমিন, নগর এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মাওলানা খাইরুল বাশার, মুহাম্মদ উল্লাহ, ফয়সাল মুহাম্মদ ইউনুছ ও মোরশেদুল ইসলাম চৌধুরী, নগর সাংগঠনিক সম্পাদক শামসুজ্জামান হেলালী, নগর মজলিসে শুরার সদস্য মাওলানা সাইয়্যেদ আবু নোমান, নগর কর্মপরিষদ সদস্য একেএম ফজলুল হক, মুহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন চট্টগ্রাম মহানগরী সভাপতি এসএম লুৎফর রহমান, নগর কর্মপরিষদ সদস্য আবু হেনা মোস্তফা কামাল, আবু বকর, মাওলানা জাকের হোসাইন, আমির হোসাইন, ফখরে জাহান সিরাজী সবুজ, মাহমুদুল আলম।
শাহজাহান চৌধুরীর জন্ম ১৯৫৬ সালের ৬ এপ্রিল সাতকানিয়ার ছমদর পাড়ায় ঐতিহ্যবাহী সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে। মরহুম ওবায়দুর রহমান চৌধুরী ও মরহুমা ছমুদা বেগম দম্পতির জেষ্ঠ্য সন্তান তিনি। ছয় ভাই-বোনের মধ্যে শাহাজাহান চৌধুরী সবার বড়। তার সহধর্মিনী জোহরা বেগম গৃহিনী। তিনি তিন মেয়ের জনক ও সকলেই বিবাহিতা। শাহজাহান চৌধুরী বার বার কারা নির্যাতিত নেতা। তিনি প্রায় নয় বছর জেল খেটেছেন। সর্বশেষ তিনি ৩৩ মাস জেল খেটে বের হয়েছেন ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে। কারাগারে থাকাকালীন তিনি তার মমতাময়ী মাকে হারিয়েছেন। স্বৈরাচারী এরশাদ বিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনেও শাহজাহান চৌধুরী বার বার মিথ্যা মামলা, পুলিশি নির্যাতন ও নির্দয় আচরণের শিকার হন। ২০০০ সালে ঈদুল আযহার দিন আওয়ামী সরকার তাকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করে। চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে এক মাস আটক রেখে তাকে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তর করে অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়। হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি লাভের পর সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে তাকে কারাগারের গেইট থেকে পুনঃ গ্রেফতার করা হয়। ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারির নির্বাচনে সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসন থেকে তিনি সাংসদ পদে জামায়াতের নমিনি ছিলেন। লগি-বৈঠার তাণ্ডবে নির্বাচন ভণ্ডুল করে দেয়া হয় এবং প্রতিষ্ঠিত হয় সেনা সমর্থিত মঈনুদ্দিন-ফখরুদ্দিন সরকার। সে সময় ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলায় তিনি দীর্ঘ ১৪ মাস কারাগারে আটক ছিলেন। ১/১১ অসাংবিধানিক সরকারের সঙ্গে আঁতাত করে ডিজিটাল কারচুপির অস্বাভাবিক পরিসংখানের নির্বাচনে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ সরকার ২০১১ সালে হাইকোর্ট চত্বর থেকে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে তাকে গ্রেফতার করে মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় দীর্ঘ দিন কারাগারে আটক রাখে। দীর্ঘ আইনি লড়াই শেষে তিনি ২০১২ সালে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান। সর্বশেষ ২০২১ সালের ১৪ মে দিবাগত রাতে তিনি নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার হয়ে আইনি প্রক্রিয়ায় জামিন পেয়েও জালিম সরকারের রোষানলে পড়েছেন। জেলগেট থেকে পুনঃ পুনঃ গ্রেফতার হন তিনি। অন্যায়ভাবে পর পর পাঁচ বার জেল গেট থেকে গ্রেফতার ও আইনি প্রক্রিয়ায় অবশেষে ৩৩ মাস পর মুক্তি পেয়েছিলেন ২০২৪ সালের ১৭ জানুয়ারি।