চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের উদ্যোগে শুরু হয়েছে কৃষিপণ্য বিক্রয় কর্মসুচি। এছাড়া, সিটির ১১ যুবক নিজ উদ্যোগে ডজন ১৪০ টাকায় ন্যায্য দামে ডিম বিক্রি করছে। প্রতিদিন গড়ে দশ হাজার ডিম বিক্রি করছেন তারা। এসব কর্মসুচি সিটির সাধারণ মানুষের মাঝে সাড়া ফেলেছে।
মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের উদ্যোগে ন্যায্যদামে কৃষিপণ্য বিক্রয় কর্মসূচি উদ্বোধন করা হয়। সিটির চকবাজার ছাড়াও দেওয়ানহাট, ষোলশহর, ফিরিঙ্গিবাজার ও ফিরোজশাহ এলাকায় দিনভর এ বিক্রয় কার্যক্রম চালানো হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, সিটির চকবাজার কাঁচাবাজারের কয়েক গজ দূরে ধনিয়ারপুলের কাছাকাছি একটি ট্রাক এসে থামার পাঁচ মিনিটেই ট্রাক ঘিরে শতাধিক নারী-পুরুষের বিশাল জটলা। নারী-পুরুষের আলাদা সারি করে দাঁড়িয়ে এক ডজন ডিম ১৩০ টাকা, আলু এক কেজি ৩০ টাকা, পেঁপে ২০ টাকা, করলা ৪০ টাকা, পেঁয়াজ ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
প্যাকেজে বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ টাকায় দুই কেজি পেঁয়াজ, এক ডজন ডিম, চার কেজি আলু, এক কেজি পেঁপে এবং এক কেজি করলা।
সিটির গোয়াছি বাগান এলাকা থেকে আসা টং দোকানি নুর হোসেন বলেন, ‘সংসারে টানাপোড়ন চলছে। মাছ-মাংস নিলে সবজি নিতে পারি না, সবজি নিলে মাছ মাংস নিতে পারি না। কমদামে সবজি ডিম বিক্রির সংবাদ শুনে দোকানে ছোট ভাইকে রেখে এসেছি। বাজারে এগুলো কিনতে গেলে আরো ২০০-৩০০ টাকা বেশি লাগত।’
গৃহিনী আমেনা বেগম বলেন, ‘বাজার করতে এসেছিলাম। কাঁচাবাজারে যাওয়ার আগেই ট্রাক দেখে দাঁড়িয়ে গেলাম। প্রথমে ভেবেছিলাম টিসিবি পণ্য বিক্রি হবে। ঘরে ছোট ছেলেকে বললাম কার্ড নিয়ে আসতে। পরে দেখি, সবজি, ডিম, পেঁয়াজ এসব। আমার ছেলে এলে তাকেও দাঁড়াতে বলব।’
কম মূল্যে কৃষিপণ্য বিক্রির খবর পেয়ে ছুটে এসেছেন সিএনজি অটোরিকশাচালক মোহাম্মদ রতন, দিনমজুর মো. আবুল কাসেম।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম সিটিতে মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) থেকে শুরু হয়েছে খোলা বাজারে কৃষি পণ্য বিক্রি (ওমএমএস)। প্রতি স্থানে ২০০ জন করে মোট এক হাজার জনকে কৃষিপণ্য দেয়া হবে। প্রাথমিকভাবে আগামী মাসের ১০-১৫ তারিখ পর্যন্ত এ কার্যক্রম চলবে।
এ দিকে, চট্টগ্রামে খোলাবাজারে কৃষিপণ্য বিক্রি কর্মসূচির উদ্বোধন করেন কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মাসুদ করিম ও চট্টগ্রাম বিভাগের কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম। উপস্থিত ছিলেন অধিদপ্তরের বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তারা।
উদ্বোধনের পর মো. তোফায়েল ইসলাম বলেন, ‘বাজারে যেসব পণ্যের মূল্য বেশি, সেগুলো কম মূল্যে ভোক্তাদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে কিনে ভর্তূকি দামে এসব পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে।’
মো. মাসুদ করিম বলেন, ‘বিগত সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যা হয়েছে। এতে যেসকল শীতকালীন সবজি বাজার স্থিতিশীল রাখে, সেসব সবজি বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। ফলে, নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের বিরূপ প্রভাব পড়ছে। বিশেষ করে ডিম ও সবজির মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে নিম্ম আয়ের মানুষের জন্য এ কর্মসূচি।’
এ দিকে ‘ভেঙে যাক নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের সব শকুন সিন্ডিকেট, স্বস্তিতে বেঁচে থাকুক বাংলার নিরীহ জনগণ’ এ প্রতিপাদ্যে চট্টগ্রামে ভ্যানে করে ডিম বিক্রি করছেন ১১ যুবক। ভ্যানে করে প্রতি ডজন ডিম ১৪০ টাকায় বিক্রি করছেন তারা। ডিম কিনতে সাধারণ মানুষের ব্যাপক সাড়াও মিলেছে তাদের ভ্যানে। দিনে প্রায় দশ হাজার ডিম বিক্রি করছে তারা।
এ পর্যন্ত চার দিন তারা সিটির বহদ্দারহাট, চকবাজার ও কোতয়ালি মোড়ে বাজার দরের চেয়ে কম দামে ভ্যানে করে ডিম বিক্রি করেছিলেন তারা। তাদের এ কার্যক্রমে সহযোগিতা করছে চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতর। ডিম বিক্রি শুরুর পর থেকে ক্রেতাদের ব্যাপক ভিড় লক্ষ করা গেছে। লাইনে দাঁড়িয়ে সুশৃঙ্খলভাবে ডিম কিনতে দেখা গেছে।
ব্যতিক্রমী এ কাজের উদ্যোক্তারা বলেন, ‘১৪০ টাকায় প্রতি ডজন ডিম বিক্রি করা হচ্ছে। আমাদের এ কার্যক্রমের সাথে যুক্ত হয়েছে জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতর। এ ছাড়াও, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকেও আমাদের এ কার্যক্রমে সহযোগিতা করার আশ্বাস দেয়া হয়েছে।’
এ উদ্যোগের সমন্বয়ক আরিফ বলেন, ‘ডিম নিয়ে চলমান সিন্ডিকেটের থাবা ভাঙতে আমরা বাজারের চেয়ে কম দামে ডিম বিক্রি করছি। আমরা ১১ জন বন্ধু মিলে ভ্যানে করে বাজারের চেয়ে কম দামে ১৪০ টাকা ডজন ডিম বিক্রি করছি। আমরা সরাসরি খামারিদের কাছ থেকে এ ডিম কিনে গ্রাহকের হাতে তুলে দিচ্ছি।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রামে খুচরায় প্রতি ডজন ডিম ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সরকার নির্ধারিত মূল্যে এখনো চট্টগ্রামের কোথাও ডিম বিক্রি হচ্ছে না।