চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) অর্থে নির্মিত প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানা সংস্থাটির কাছেই ফিরিয়ে দেয়ার দাবিতেবিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বিকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের আব্দুল খালেক মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে এ দাবি জানানো হয়।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে, ক্ষমতার জোরে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের পরিবার রাষ্ট্রীয় সম্পদ ‘প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়’ হস্তগত করেছে।’
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়েন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মুসফিক আল মাসুম।
লিখিত বক্তব্যে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘২০০২ সালের চসিকের জমিতে রাষ্ট্রের ৪২ কোটি ৯৩ লাখ টাকা বিনিয়োগে প্রতিষ্ঠিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ‘প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি’ পারিবারিক সম্পদে রুপান্তরিত করেন সিটির প্রাক্তন মেয়র প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। তিনি ছাত্র ও গণহত্যার মাস্টারমাইন্ড মহিবুল হাসান চৌধুরীর পিতা।’
সংবাদ সম্মেলনে দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদ গঠন করার দাবি জানায় শিক্ষার্থীরা।
সংবাদ সম্মেলনে বিগত সময় প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ, আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতিসহ সব অনিয়ম ও দুর্নীতির নিরপেক্ষ ও সুস্থ তদন্তপূর্বক আইনি ব্যবস্থা নেয়া, জমি সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি পূর্বক স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণে অতি দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া, শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে ইউজিসি আইন ২০১০ অনুসরণ করে নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিপক্ষে যারা প্রত্যক্ষভাবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর নির্বিচারে নিন্দনীয় হামলা চালিয়েছে, তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পুনর্বাসনে যে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, তা অনতিবিলম্বে বন্ধ করা, সংস্কারপন্থী ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবস্থানকারী শিক্ষার্থীদের প্রবেশ নিষিদ্ধকারী ও খুনের হুমকিদাতাদের চিন্তিতপূর্বক ব্যবস্থা নেয়া, শিক্ষার্থীদের প্রবেশ নিষিদ্ধকারী ও খুনের হুমকিদাতাদের চিন্তিতপূর্বক ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানানো হয়।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘ছাত্র ও গণহত্যায় নেতৃত্বদানকারী সংগঠন আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, ব্যাংক লুটেরা এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম মাসুদের পরিবারের তিন সদস্য, নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চুসহ পুরো ট্রাস্টি বোর্ড আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসররা দখলে রেখেছেন। আওয়ামী লীগের নেতারা বিশ্ববিদ্যালয় লুটেপুটে খাবেন, সেটি হতে দেয়া যায় না।’
বিশ্ববিদ্যালয়েল উপাচার্য (ভিসি) অনুপম সেন সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে শিক্ষর্থীরা বলেন, ‘আমরা দেশজুড়ে চলমান ভিসি বিরোধী অনাকাঙ্ক্ষিত কোন পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি চাই নি। সে জন্য পরবর্তী সম্মানের সাথে ভিসিকে আমরা ডাকযোগে চিঠি দিয়ে আমরা স্যারকে সব পরিস্থিতি বিবেচনায় পদত্যাগের আহ্বান জানাই। তিনি পদত্যাগ করবেন কি করবেন না, তা সম্পূর্ণ তার ব্যক্তিগত বিষয়। কিন্তু, এ আহ্বানকে পুঁজি করে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে;যা আহ্বানকারী ছাত্রদের পক্ষ থেকে কখনোই কাম্য ছিলো না।
আমরা কখনোই ব্যক্তি অনুপম সেনের বিরুদ্ধে নয়। আমরা অবস্থান করছি অন্যায়ের বিরুদ্ধে। যে বা যারা ছাত্র-জনতার উপর বর্বরতা চালিয়েছিল, আমাদের অবস্থান তাদেরই বিপক্ষে। পরবর্তী এ ব্যাপারটিকে পুঁজি করে পরাজিত ফ্যাসিবাদের চিহ্নিত নেতা-কর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান নিয়ে চিঠি পাঠানো শিক্ষার্থীদের হুমকি দেয়।’
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, ‘প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানা চসিকের কাছে ফিরিয়ে দেয়া, উপাচার্যসহ ট্রাস্টি বোর্ড বাতিলের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগ-যুবলীগের সন্ত্রাসী লেলিয়ে দেয়া হয়েছে। রাষ্ট্র থেকে লুট করা টাকা দিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দমন করার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন উপাচার্যের দৌহিত্র, অনিয়মের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ পাওয়া ছাত্র বিষয়ক পরিচালক পঙ্কজ বিশ্বাস।
সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী বাইত উল্লাহ বায়াত, আসাদ, মাওয়াজ, হাসান ইকবাল, বেলাল, ব্যবসায় প্রশাসনের শিক্ষার্থী ফারহাদুল ইসলাম, নুরুল আমিন উপস্থিত ছিলেন।