ঢাকা: প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিচারের মুখোমুখি করতে ভারত থেকে দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিচ্ছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিটি) প্রধান কৌঁসুলি মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম এ কথা বলেছেন। আলজাজিরা সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
আলজাজিরা জানায়, ক্ষমতাচ্যুত রাষ্ট্রপ্রধান শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে দেশে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে পদক্ষেপ নিচ্ছে আইসিটি।
তাজুল ইসলাম জানান, আগস্টে গণ-অভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পূর্বে তৎকালীন সরকার পরিচালিত ভয়াবহ সহিংসতার জন্য বিচারের মুখোমুখি করতে শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরানোর আইনি প্রক্রিয়া এরই মধ্যে শুরু হয়েছে।’
উল্লেখ্য, সরকার পরিচালিত সহিংসতার প্রেক্ষাপটে টানা কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের মুখে শেখ হাসিনা গেল ৫ আগস্ট ভারতে পালিয়ে যান।
আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘ভারতে শেখ হাসিনার অবস্থানের কারণে ঢাকা‑দিল্লি সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ পরিস্থিতি নিরসনে তাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।’
মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম আলজাজিরাকে বলেন, ‘টানা ১৫ বছর বাংলাদেশে কর্তৃত্ববাদী শাসন চালিয়েছেন শেখ হাসিনা। বিক্ষোভের সময় হওয়া সহিংসতা ও ধ্বংসযজ্ঞের জন্য তার বিচার চায় জনগণ। যেহেতু মূল অপরাধী পালিয়েছে, আমরা তাকে ফিরিয়ে আনতে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করছি।’
তাজুল জানান, ভারতের সাতে বাংলাদেশের অপরাধী প্রত্যর্পণ সম্পর্কিত একটি চুক্তি ২০১৩ সালে সই হয়েছে। সে সময় শেখ হাসিনার সরকারই ক্ষমতায় ছিল।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে হওয়া ধ্বংসযজ্ঞের মূল অভিযুক্ত যেহেতু তিনি, সেহেতু আমরা তাকে বিচারের মুখোমুখি করতে আইনি পথে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করব।’
এর পূর্বে, ২০১০ সালে শেখ হাসিনার সরকার আইসিটি প্রতিষ্ঠা করে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় যুদ্ধাপরাধের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের বিচার করতেই আইসিটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল।
আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বিরোধীদের গুম, বিচারবহির্ভূত খুন, আটকসহ অনেক মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ থাকা শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয় জুলাইব্যাপী চলা শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বাধীন আন্দোলনের মধ্য দিয়ে।’
জাতিসংঘের প্রাথমিক হিসাব মতে, এ সময়ে ছয় শতাধিক মানুষ মারা যায়।
গেল ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে পটপরিবর্তনের পর শেখ হাসিনাকে আর জনসমক্ষে দেখা যায়নি। ঢাকা তার কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল করেছে। এ অবস্থায় হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে জনপরিসরে আলোচনা চলছে।
তবে, ভারতের সাথে থাকা বাংলাদেশের অপরাধী প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুযায়ী, যে কোন পক্ষ চাইলে অপরাধী প্রত্যর্পণের ব্যাপারটি এড়িয়ে যেতে পারে, যদি তার কাছে মনে হয়, আনীত অভিযোগ ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’।
যদিও বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রশাসন এটা স্পষ্ট করেছে যে, পলাতক নেতাকে বিচারের আওতায় আনতে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য চাপ প্রয়োগ করা হবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসও গেল সপ্তাহে দেশে ফেরানোর পূর্ব পর্যন্ত ভারতে পলাতক থাকা অবস্থায় শেখ হাসিনাকে ‘চুপ’ থাকার কথা বলেছেন। ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম পিটিআইকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ইউনূস বলেন, ‘বাংলাদেশে ফেরত আনার পূর্ব পর্যন্ত ভারত যদি তাকে রাখতে চায়, তবে শর্ত থাকবে যে, তিনি যেন চুপ থাকেন।’
ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের ভীষণ চাপে রয়েছে। বাংলাদেশের জনপরিসরে ভারতবিরোধী অবস্থান দিন দিন তীব্র হচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও ভারতের এক সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, ‘বাংলাদেশে হাসিনার বিচার হতে হবে।’
এমন বিভিন্নমুখী চাপের মুখে ও বিদ্যমান বাস্তবতায় ভারত বেশ সংকটপূর্ণ পরিস্থিতিতে পড়েছে। কারণ, ঢাকা‑দিল্লি সম্পর্ক দিন দিন তিক্ত হচ্ছে।